Advertisement
E-Paper

পঙ্গু ছেলে কোলে চর ভেঙে মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্রে মা

হাঁটু জল পদ্মা পেরোলে ধূ ধূ বালির চর। ঠিকরে পড়া রোদে তেতে যাওয়া সেই বালি ভেঙে হাঁটতে থাকেন তাজমিরা বিবি। দু’হাতে জাপটে ধরে থাকেন ছেলেকে। গ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে গেলে তিনি লছিমনের দেখা পাবেন। সেখান থেকে প্রায় আরও পাঁচ কিলোমিটার উজিয়ে তারপর নসিপুর মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্র। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এভাবেই পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত করছেন মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা ২ ব্লকের নির্মল চরের তাজমিরা।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৫:৩৮
তাজমিরা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

তাজমিরা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

হাঁটু জল পদ্মা পেরোলে ধূ ধূ বালির চর। ঠিকরে পড়া রোদে তেতে যাওয়া সেই বালি ভেঙে হাঁটতে থাকেন তাজমিরা বিবি। দু’হাতে জাপটে ধরে থাকেন ছেলেকে। গ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে গেলে তিনি লছিমনের দেখা পাবেন। সেখান থেকে প্রায় আরও পাঁচ কিলোমিটার উজিয়ে তারপর নসিপুর মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্র। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এভাবেই পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত করছেন মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা ২ ব্লকের নির্মল চরের তাজমিরা।

আখরিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর মাধ্যমিক দিচ্ছে আনিকুল শেখ। স্কুলও বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। তাজমিরার চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আনিকুল মেজ। স্বামী গাবলু ইসলাম পেশায় দিনমজুর। তাজমিরা বলেন, “আট বছর বয়স থেকে আনিকুল হাঁটতে পারে না। এলাকার এক হোমিওপ্যাথ চিকিৎসককে দেখিয়েও কোনও ফল হয়নি। বড় ডাক্তারের কাছে যে নিয়ে যাব সে ক্ষমতাও নেই।” আনিকুলের ভাই, দশম শ্রেণির পড়ুয়া সাদিকুলও হাঁটতে পারে না।

আখরিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, “লেখাপড়া না জানা এক মহিলা তাঁর প্রতিবন্ধী দুই ছেলের লেখাপড়ার জন্য যা করছেন তা কুর্নিশ করার মতো।” নসিপুর পরীক্ষা কেন্দ্রের ইনচার্জ সঞ্জয় কুমার মিশ্র বলেন, “পর্ষদের অনুমতিতে ওই প্রতিবন্ধী ছাত্র অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট সময় পায়।”

সীমান্ত ঘেঁষা নির্মল চর থেকে এ বছর মাধ্যমিক দিচ্ছে মোট ১৮ জন। তাদের মধ্যে ১০ জন ছাত্রী। স্থানীয় আখরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের খোশনেহারা বিবি বলেন, “গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা রাস্তাঘাট। এখন পদ্মায় হাঁটু জল থাকলেও বর্ষায় চারিদিক ডুবে যায়। তবে এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও গ্রামে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।”

বেলা পড়ে আসে। পরীক্ষা শেষে ছেলেকে নিয়ে ঘরে ফেরেন মা। দীর্ঘ পথ হাঁটার পর পা দুটো যেন আর চলতে চায় না। থেকে থেকে যন্ত্রণায় টনটন করে হাতদুটো। দাঁতে দাঁত চেপে পথ হাঁটেন তাজমিরা। কোলের মধ্যে থেকেও কষ্ট পায় আনিকুল, “মা, একটু না হয় জিরিয়ে নাও। এখনও যে অনেক পথ বাকি।” তাজমিরা হাসতে হাসতে বলেন, “কোথায় অনেক পথ! ওই দ্যাখ, বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আর এইটুকু পথও না হাঁটলে তুই বড় হবি কী করে?”

চরের বালির তেজ তখন অনেক কমে যায়। দখিনা বাতাসে শুকিয়ে যায় তাজমিরার কপালের ঘামও।

madhyamik exam paralysis boy sujauddin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy