Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বল্লাল ঢিবির উত্‌খনন বন্ধ কেন মাঝপথে

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাচীন মূর্তি আর পুঁথি রক্ষাই চিন্তা মঠমন্দিরের প্রসঙ্গে কিছু কথা। উপেক্ষা অবহেলায় নবদ্বীপের মতো প্রাচীন জনপদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নষ্টের ইতিহাস বহুকালের। পাল রাজাদের রাজত্বকালের কোনও সময়ে তাঁদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় এই রম্য দ্বীপভূমির শান্ত-নিবিড় পরিবেশে বৌদ্ধবিহার নির্মিত হয়েছিল।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়ছে মনসা মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়ছে মনসা মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

উপেক্ষায় নষ্ট ঐতিহ্য

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাচীন মূর্তি আর পুঁথি রক্ষাই চিন্তা মঠমন্দিরের প্রসঙ্গে কিছু কথা। উপেক্ষা অবহেলায় নবদ্বীপের মতো প্রাচীন জনপদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নষ্টের ইতিহাস বহুকালের। পাল রাজাদের রাজত্বকালের কোনও সময়ে তাঁদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় এই রম্য দ্বীপভূমির শান্ত-নিবিড় পরিবেশে বৌদ্ধবিহার নির্মিত হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল সুবর্ণবিহার। বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন জীবিকার মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। ক্রমে নবদ্বীপ বৌদ্ধ তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়। গড়ে ওঠে জনবসতি। নবদ্বীপ পরিমণ্ডলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল একদা যে বৌদ্ধ প্রভাবিত ছিল তাঁর স্মৃতি আজও নবদ্বীপের কিছু প্রাচীন মূর্তি এবং স্থাননামের মধ্যে প্রকাশ পায়। যেমন- যুগনাথ, পাড়ডাঙ্গার শিব, মালোদের শিব, জয়দুর্গা প্রভৃতি। নবদ্বীপে শাস্ত্রচর্চার ঐতিহ্য বৌদ্ধদের কাছ থেকেই পাওয়া। আজ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় নবদ্বীপের প্রাচীনতম প্রত্নস্থল ওই সুবর্ণবিহার। ১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্র রায় রচিত ক্ষিতীশ বংশাবলী চরিত এবং কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী রচিত নবদ্বীপ মহিমাতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। উত্‌খনন করলে ইতিহাসের নবদিগন্ত উন্মোচিত হতে পারত। কিছু কাল আগে সুবর্ণবিহারের সুউচ্চ ঢিবি কেটে চারপাশের জমির সঙ্গে সমান্তরাল করে কোনও এক বৈষ্ণব সম্প্রদায় মন্দির তৈরি করেছে। একটা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের স্মারক এই ভাবে নষ্ট করা হল।

আরও আছে। বর্তমান নবদ্বীপ শহরের উত্তর পশ্চিমে বামুনপুকুর বাজার সংলগ্ন বল্লাল ঢিবি। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের পূর্বাঞ্চল চক্রের তত্ত্বাবধানে আধুনিক প্রত্নবিজ্ঞান সম্মতভাবে উত্‌খনন করা হয়। ঢিবির আকৃতি একটা বড় কড়াই উপুড় করে দিলে যেমন দেখায় অনেকটা সেই রকম। উত্‌খননের আগে আয়তন ছিল ১২৮x১০০ মিটার, উচ্চতা ৮.২ মিটার। এই প্রত্নস্থলের গঠন স্থাপত্যশৈলী সর্বতোভদ্র বৌদ্ধস্তূপের মতো। পুরাতত্ত্ববিদদের মতে এই প্রত্নস্থাপত্য বাংলার সর্বকালের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহত্‌ মন্দির ছিল। অজ্ঞাত কারণে উত্‌খনন অসম্পূর্ণ রেখেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলার ইতিহাসের স্বার্থে ওই উত্‌খনন খুব জরুরি ছিল।

শান্তিরঞ্জন দেব, সাধারন সম্পাদক, নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ।

লঙ্কায় গিয়ে রাবন টোটো

বারো মাসে তেরো পার্বণের নবদ্বীপের অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম গুরুত্ব পূর্ণ হল যানবাহনের সমস্যা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে রিকশার সমস্যা। রিকশা চালকদের দুর্ব্যবহার, অত্যধিক ভাড়া চাওয়াজুলুমের শেষ নেই। এমনকী এদের অত্যাচারে নবদ্বীপে দু’টি টাউন সার্ভিস বাস বন্ধ হয়ে যায়। সিটের ওপর পা তুলে নবাবি কায়দায় যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে অসভ্য ভাবে কথা কাটাকাটি চলে প্রায়শই। রাত একটু বেশি হলে কিংবা বৃষ্টিবাদল হলে কথাই নেই। তিন চার গুণ বেশি ভাড়া চাওয়া একটা দস্তুর হয়ে উঠেছিল। এত কিছুর পরে নবদ্বীপ পুরসভা যখন রিকশার ভাড়া নির্দিষ্ট হারে বেঁধে দিল, সেটাও তারা মানল না। এই অবস্থা থেকে সকলেই মুক্তি চাইছিল। মানুষ বিকল্প যান হিসেবে অটো চালানোর দাবি করছিল। নবদ্বীপ নাগরিক কমিটি এই অটো চালু করার জন্য জেলা শাসক, আরটিও এবং স্থানীয় পুরসভার কাছে ডেপুটেশন দিয়েছিল। ঠিক এই সময়ে নবদ্বীপে চালু হল ব্যাটারি চালিত রিকশা টোটো। শহরবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কিন্তু অচিরেই শহরবাসীর সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হল। কথায় আছে লঙ্কায় যে যায় সেই হয় রাবন। চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই আশীর্বাদের টোটো হয়ে দাঁড়াল অভিশাপ। শহরের ঘিঞ্জি রাস্তায় যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকা টোটো এখন নবদ্বীপের যানজটের প্রধান কারণ। প্রথমে অল্প সংখ্যক টোটো শহরের মানুষের প্রকৃত উপকারে লাগছিল। কিন্তু সকলেই টোটো নিয়ে পথে নেমে পড়ায় শহরের পথে এখন নিরাপদে হাঁটা দায়। এরপর পুরসভা নতুন করে টোটো গাড়ির লাইসেন্স দিলে, অবস্থা দাঁড়াবে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া। এ থেকে মুক্তি পেতে শহরের প্রধান রাস্তাগুলিকে ‘ওয়ান ওয়ে’ করতে হবে। টোটোর জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড করতে হবে। লাইসেন্স দেওয়ার সময় গাড়ির নম্বর ধরে বিভিন্ন টোটোকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নির্দিষ্ট রুটে চলাচলের নির্দেশ দিতে হবে। তবেই প্রকৃত গণ-পরিবহনের মাধ্যম হতে পারবে টোটো।

দিলীপ চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক, নবদ্বীপ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি।

সব দোষ টোটোর নয়

নবদ্বীপের পথে নেমেছে ব্যাটারি চলিত রিকশা। যানবাহন বাড়লেও বাড়েনি পথের পরিসর। তাই গতিও বাড়েনি শহরের। অগত্যা যানজটকে সাথী করেই শম্বুক গতিতে চলছে রাধারাজার থেকে যোগনাথ তলা। এমনিতেই সাইকেল, রিকশা আর রোমিওদের বাইকের দাপটে শহরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয় সন্ধ্যাবেলায়। ‘ঢপওয়ালির মোড়’ পার হতেই খরচ হয়ে যায় হাতের সময়ের বেশিটা। তবে যানজটের সব দায় টোটোর ঘাড়ে চাপানো ঠিক হবে না। অনেকগুলো কারণের মধ্যে টোটো একটা মাত্র।

বিপ্লব পাল, মণিপুর, নবদ্বীপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar shahor ballal digging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE