Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙচুর করে মাধ্যমিকে গিয়ে ফেলই

একশো নম্বরের পরীক্ষায় কেউ পেয়েছিল ছয়, কেউ বা নয়। টেস্ট পরীক্ষার এমন ফলে লজ্জিত না হয়ে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেছিল ছাত্রীরা। নিরুপায় স্কুল কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন সকলকে। ফল বেরোতে দেখা গেল, টেস্টে অকৃতকার্য ছাত্রীরা ফেল করেছে মাধ্যমিকেও। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান বালিকা বিদ্যালয়ে পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশে।

বিমান হাজরা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

একশো নম্বরের পরীক্ষায় কেউ পেয়েছিল ছয়, কেউ বা নয়। টেস্ট পরীক্ষার এমন ফলে লজ্জিত না হয়ে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেছিল ছাত্রীরা। নিরুপায় স্কুল কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন সকলকে। ফল বেরোতে দেখা গেল, টেস্টে অকৃতকার্য ছাত্রীরা ফেল করেছে মাধ্যমিকেও। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান বালিকা বিদ্যালয়ে পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশে।

সামশেরগঞ্জ ব্লকে শিক্ষার হার মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম। ধুলিয়ানের এই স্কুলটি যে এলাকায়, সেখানেও অধিকাংশ পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। বিড়ি বাঁধাই মূল পেশা। বাড়ির বড়দের সঙ্গে ছোটরাও বিড়ি বাঁধে। তা সত্ত্বেও গত দশ বছরে এই স্কুলে পাশের হার ৭২-৮৬ শতাংশের মধ্যে। সেখানে এ বার ৪১৫ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে মাত্র ১৮৫। অর্থাৎ, ৫৬ শতাংশই ফেল।

এত খারাপ ফলের জন্য প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী সরকার পড়ুয়াদের অন্যায় দাবিকেই দায়ী করেন। তিনি জানান, এ বার টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছিল ৩৮৮ জন ছাত্রী। তাদের মধ্যে ‘শোচনীয় ভাবে’ ফেল করে ১২৬ জন। এর মধ্যে এমনও ছিল, যারা সাতটির মধ্যে একটি বিষয়েও পাশ করেনি। অনেকে শূন্য পেয়েছে একাধিক বিষয়ে। বাসন্তীদেবী বলেন, “শিক্ষিকাদের সঙ্গে একমত হয়ে ওই ছাত্রীদের মাধ্যমিকে বসার অনুমতি দিইনি প্রথমে। কিন্তু পরদিনই অভিভাবকদের নিয়ে স্কুলে চড়াও হয় ওই ছাত্রীরা। গেটে তালা মেরে সন্ধে পর্যন্ত আমাদের আটকে বিক্ষোভ দেখায় তারা। রাতে পুলিশ এসে উদ্ধার করে।”

চাপে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হন সকলকে মাধ্যমিকে বসার সুযোগ করে দিতে। স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কাকলি সিংহ জানান, সেই সময় টেস্টে ফেল করা ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডাকা হয়েছিল স্কুলে। দু’চার জন ছাড়া কেউ আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা মেয়েকে মাধ্যমিকে বসতে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন। কেউ কেউ বলেন, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য এ বারই মাধ্যমিক পাশ করানো দরকার।

এর দু’দিন পরেই স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় নবম শ্রেণিতে ফেল করে প্রায় ১০৬ জন। এরা কেউই সাতটা বিষয়ের একটিতেও ২৫ পায়নি। তবুও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দেখাদেখি তারাও পরদিন লোকজন নিয়ে এসে স্কুলে চড়াও হয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে বেঞ্চ, চেয়ার-সহ যাবতীয় আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বাধ্য হয়ে তাদেরও পাশ করিয়ে দিতে হয়।

প্রধান শিক্ষিকার আক্ষেপ, “এ ভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার মান বলে আর কিছু থাকবে? না পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার ইচ্ছা আছে, না অভিভাবকদের মধ্যে ছেলেমেয়েদের ঠিক পথে পরিচালিত করার ইচ্ছা আছে। টেস্টে যারা ফেল করেছিল, তারা প্রায় সবাই মাধ্যমিকেও ফেল করেছে।” এ দিকে, পরপর নবম ও দশম শ্রেণিতে এত জন ফেল করায় পঠন-পাঠনে ত্রুটির অভিযোগও উঠছে। স্কুলের পরিচালন সমিতির এক সদস্য বদরুল ইসলাম বলেন, “পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেও কোনও ছাত্রী কেন সব বিষয়ে ফেল করবে?” তিনি শিক্ষিকাদের একাংশের আন্তরিকতার অভাবকেই খারাপ ফলের জন্য দায়ী করেন।

প্রধান শিক্ষিকা অবশ্য পঠনপাঠনে খামতির জন্য দায়ী করছেন শিক্ষকের অভাবকে। পড়ুয়ার অনুপাতে স্কুলে অন্তত ৮০ জন শিক্ষিকা থাকার কথা। আছেন ৩৬ জন। তাঁর যুক্তি, “প্রায় সাড়ে চার হাজার ছাত্রী স্কুলে। শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণিতেই ন’শো ছাত্রী। ঘর নেই বলে বেশি সেকশনও করা যাচ্ছে না। এক-একটা ক্লাসে শুধুমাত্র নাম ডাকতেই তো আধ ঘণ্টা চলে যায়।” বেশির ভাগ ছাত্রী নিয়মিত স্কুলে আসে না বলে অন্যরা বসার জায়গা পায়, জানান তিনি।

পরিকাঠামোয় এই সব ত্রুটি নিয়ে মুর্শিদাবাদের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিমল পাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

biman hazra dhulian balika bidyalaya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE