Advertisement
E-Paper

মুদি দোকানে চোলাই পাউচ

কাকভোরে শুরু। চলে কাকভোর পর্যন্ত। নদিয়া জেলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাংলা ও চোলাই মদের ঠেক রমরমিয়ে চলছে দিনভর। কোথাও হোটেলের আড়ালে চলে মদের ঠেক, কোথাও প্রকাশ্যেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ২৩:৫৬

কাকভোরে শুরু। চলে কাকভোর পর্যন্ত। নদিয়া জেলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাংলা ও চোলাই মদের ঠেক রমরমিয়ে চলছে দিনভর। কোথাও হোটেলের আড়ালে চলে মদের ঠেক, কোথাও প্রকাশ্যেই।

বাহাদুর ব্রিজ থেকে পলাশি বাজার অবধি প্রায় ৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত শ’খানেক বেআইনি মদের ঠেক রয়েছে রাস্তার পাশে। বাহাদুর স্টেশন চত্বরেই অন্তত গোটা কুড়ি হোটেল রয়েছে। সেই হোটেলগুলিতে দিনের বেলা হাঁড়ি চড়ে না। কিন্তু একটু উকিঝুঁকি মারলেই মেলে দেশি-বিদেশি মদের বোতল। এই হোটেলগুলির আশপাশে রয়েছে ঘন জনবসতি। বাহাদুরপুর, মায়াকোল প্রভৃতি গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় ওই হোটেলগুলোর সামনে থেকে বাসে ওঠে। মাতালদের উৎপাতে তারা অতিষ্ঠ, বিশেষত মেয়েরা। মদ্যপদের দৌরাত্ম্যরোধে এলাকার লোকজন বারেবারেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন সেভাবে সক্রিয় হয়নি। বাহাদুরপুরের বাসিন্দা তথা কৃষ্ণনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সিপিএমের জগন্নাথ ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘বছরখানেক আগে লিখিত আকারে বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপারকে জানিয়েছিলাম। পরবর্তী কালে অন্তত বিশ বার ধুবুলিয়া থানাকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।.কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’

ধুবুলিয়া বাজারের আশপাশেও সমস্ত হোটেলগুলিতে সকাল থেকে অন্তত রাত এগারোটা অবধি পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি মদ। বাজার থেকে ভিতরের দিকে বিভিন্ন কলোনিতেও রমরমিয়ে চলে মদের কারবার। এই সমস্ত ঠেকে মাঝমধ্যেই গোলমাল হয়। লোকসভা ভোটের দিন দু’য়েক আগে ২০ নম্বর কলোনির বছর সাতাশের এক যুবকের দেহ মিলেছিল মদের ঠেকের পাশে। বছরখানেক আগে ধুবুলিয়ার একটি হোটেলের পিছন থেকে স্থানীয় এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও মদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এলাকার লোকজন। কিন্তু হোটেলের ঝাঁপ বন্ধ হয়নি।

ধুবুলিয়া থানা এলাকারই সাধনপাড়া পঞ্চায়েতের পিছনে বেশ কয়েকঘর জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত বাড়িতে দিনে-দুপুরে চোলাই বানানো হয়। চোলাই তৈরি এই পাড়ায় কুটিরশিল্পের রূপ নিয়েছে। একদিকে দুপুরের রান্না হচ্ছে, অন্য চুলোয় খেজুরের পচা গুড় জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে চোলাই। এক লিটার বিক্রি হয় পঞ্চাশ টাকায়।

ধর্মদা বাজারেও চলে চোলাই মদের রমরমা ব্যবসা। ধর্মদা বাসস্ট্যান্ড, মাছের বাজারে রয়েছে দেশি ও চোলাই মদের ঠেক। বাজারে আবার একটা দোকানে ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র বিক্রির পাশাপাশি বেচা হয় দেশি মদ। কালীতলার মাঠের কাছে একজন নিজের বাড়িতে বিক্রি করেন দেশি ও বিদেশি মদ। ধর্মদা থেকে একটু দূরে কড়কড়িয়াতে আবার একটি মুদিখানার দোকানে মেলে মদের বোতল।

নাকাশিপাড়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাটোয়া মোড় থেকে দেবগ্রামের নতুন বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব সাকুল্যে ৫০০ মিটার। ওইটুকু জায়গায় মধ্যে রয়েছে অন্তত দশটি মদের ঠেক। বাসস্ট্যান্ড থেকে দেবগ্রাম তদন্ত শাখার দূরত্বও মেরেকেটে ১০০ মিটার। কার্যত পুলিশের সামনেই ওই এলাকায় চলে মদের কারবার। বাসস্ট্যান্ডের ঠিক কোল থেকে দু’দিকে টিন দিয়ে ঘেরা ও উপরে ত্রিপল টাঙানো এক চিলতে গুমটিতে সকাল থেকে মধ্য রাত চলে বাংলা মদের কারবার। রাত মোটামুটি ন’টা বাজলেই ওই মদ্যপদের উৎপাতে দেবগ্রাম চৌরাস্তার মোড়ে চলাফেরা করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। দেবগ্রামেরই এক প্রৌঢ়ার খেদ, ‘‘আমার ছেলের চৌরাস্তার কাছে চায়ের দোকান রয়েছে। কিন্তু রোজ দফায় দফায় মদ খেয়ে সব টাকা শেষ করে রাতে বাড়ি ফেরে।”

কার্যত গোটা নদিয়া জেলা জুড়ে মদের ঠেকের এই রমরমা রুখতে কী পদক্ষেপ করছে আবগারি দফতর? জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেনডেন্ট দীপককুমার নাহা বলেন, ‘‘আমাদের সীমিত লোকবল। তাই নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যতটা সম্ভব বেআইনি মদের ভাটি ভাঙতে চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশেরও সাহায্য নেওয়া হবে। পুলিশ সুপারের সঙ্গে যৌথ অভিযানের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।’’

এলাকাবাসীর অবশ্য অভিযোগ, এই ধরনের আশ্বাসবানী শুনে শুনে তাঁরা ক্লান্ত। আবগারি দফতর আর থানার সঙ্গে যোগসাজশেই চলে চোলাইয়ের কারবার। রাজ্যে পালা পরিবর্তনের পরেও যে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

hooch pouch dhubulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy