বহরমপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
রাত পোহালেই ভোটের ফল। চায়ের দোকান থেকে বাসে-ট্রেনে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে কেউ না কেউ কাউকে না কাউকে প্রশ্ন করছেন, “কে জিতবেন বলে মনে হচ্ছে?” কোথাও কেউ বন্ধুদের মধ্যে বাজি ধরছেন। রাজনৈতিক দগুলি মগ্ন হয়ে রয়েছে এ বারের চতুর্মুখী ভোটের জটিল অঙ্কে। প্রশাসন তার মধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সুষ্ঠু ভাবে ভোটগণনার কাজের।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে গণনা। দুপুরের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ভোটের ফল। বিকেল গড়াতেই মিলবে ভোটের সম্পূর্ণ চিত্র। মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটে লোকসভা আসনের মধ্যে বহরমপুরের গণনা হবে বহরমপুর গার্লস কলেজে, মুর্শিদাবাদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে লালবাগ সুভাষচন্দ্র সেন্টিনারি কলেজ এবং জঙ্গিপুরের গণনা কেন্দ্র হয়েছে রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুল। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য মুর্শিদাবাদ জেলায় বুধবার বাড়তি তিন প্ল্যাটুন কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। ওই তিন প্ল্যাটুন আধা সামরিক বাহিনীকে তিনটে গণনা কেন্দ্রে ভাগ করে দেওয়া হবে।”
এদিকে যে দিন যেখানে ভোটগ্রহণ হয়েছে, সেখানে সেই রাত থেকেই কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে স্ট্রং রুম। বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। সর্বক্ষণের জন্য রাখা কর্মীর চোখ সরছে না ওই ক্যামেরা থেকে। ইভিএমের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান। পাশাপাশি সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ বাহিনীও থাকবে। জেলাশাসক বলেন, “গণনার দিন ত্রিস্তর নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হবে। প্রতিটি গণনাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য গণনা কেন্দ্রের দুই দিকে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া।”
লালবাগ মহকুমাশাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় যেমন জানান, ভোটগণনার দিন লালবাগ সুভাষচন্দ্র সেন্টিনারি কলেজ গণনা কেন্দ্রর লালবাগের দিক থেকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের দ্বিতীয় গেটের কাছে একটি ব্যারিকেড করা হবে এবং বহরমপুরের দিক থেকে রেলগেটের কাছে আর একটি ব্যারিকেড থাকবে। তিনি বলেন, “নিরাপত্তার জন্য নতুন করে বুধবার অতিরিক্ত প্রায় ৩০ জন কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। এছাড়াও থাকছে প্রায় ৫০ জন কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ২০০ জন মত সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ।”
প্রতিটি গণনাকেন্দ্রে থাকবে ১৪টি করে টেবিল। এ ছাড়াও থাকবে ‘কম্পাইলেজেশন’ টেবিল। প্রথমে গোনা হবে পোস্টাল ব্যালট। ওই গণনা শেষে হবে ইভিএম গণনা। গণনাকেন্দ্রে থাকবে বড় বোর্ড। প্রতি রাউন্ডের ফলাফল ওই বোর্ডে লিখে দেওয়া হবে। এ বারই প্রথম প্রতিটি টেবিলের গণনার কপি এজেন্টদের মধ্যে বিলি করার পদক্ষেপ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর থেকে এজেন্টরা জানতে পারবেন, তাঁর দলের প্রার্থী কোন টেবিলের গণনায় কত ভোট পেয়েছেন। গণনাকেন্দ্রের মধ্যেই থাকবে মিডিয়া সেন্টার। তার দায়িত্বে থাকবেন জেলা তথ্য আধিকারিক।
এদিকে গণনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চলছে অন্য এক ব্যস্ততা। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “বহরমপুর লোকসভার সাতটি বিধানসভা থেকে ১৩৩ জন গণনাকর্মী বেছে নিয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গণনা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তার মধ্যে ইভিএমের জন্য ১২২ জন, সাতটি এআরও টেবিলের জন্য সাত জন এবং পোস্টাল ব্যালট গণনার জন্য চার জন কর্মী লাগবে। ওই ১৩৩ জন কর্মীকে বেছে নিয়ে বহরমপুরে নিয়ে এসে রাখা হয়েছে। গোপন জায়গায় রেখে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সামান্যতম ভুলচুকও যেন না হয়। গণনা কেন্দ্রের মধ্যে সতর্ক থাকার নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।”
বামফ্রন্টের প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গণনাকেন্দ্রে আমাদের দলের যে এজেন্টরা থাকবেন তাঁরা সকলেই অভিজ্ঞ। কয়েকজন নতুনও রয়েছেন।” তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, “দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে গণনা কেন্দ্রে কোন এজেন্টরা থাকবেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গণনা কেন্দ্রে পাঠানো হবে।”
কৃষ্ণনগরেও ভোটগণনার মুখে ক্রমশ উত্তেজনার পারদ চড়ছে। মুখে আত্মবিশ্বাসী তিনটি দলই। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “আমরা যে জিতছি সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই”। কেন? গৌরীবাবু বলেন, “এই লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধান সভার মধ্যে আমাদের দখলে ৫টি। তেহট্টের পঞ্চায়েত সমিতিও আমরা দখল করে নিয়েছি। কংগ্রেস দলটাই উঠে গেছে। পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোটে বিজেপি-র উপস্থিতি নেই বললেই চলে। আর ২০০৯ সাল থেকে হারের ধারাবাহিকতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি সিপিএম।”
সিপিএম-র অবশ্য অস্ত্র পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৫টি সিপিএমের দখলে। ১৯টি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে ১৩টিতে জিতেছে সিপিএম। দলের জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “সারদা সহ নানা কারণে মানুষ তৃণমূলের থেকে মুখ সরিয়ে নিতে শুরু করে দিয়েছে।” এন্য দিকে জলুবাবুর ব্যক্তিগত ‘ভাবমূর্তি’ আর দেশ জুড়ে বিজেপির মোদী হাওয়াকে ভর করে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, “গতবার বিজেপি-র সব থেকে কঠিন সময়েও জলুবাবু প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ছিলেন। এবার তো দেশ জুড়ে প্রবল মোদী হাওয়া।” তবে জেতার দৌড়ে না থাকলেও ভোটের ফলাফলে তাঁরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে দাবি করেছেন জেলা কংগ্রেসের কার্যকরি সভাপতি সর্বদর্শন বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “জেতা বা হারাটা বড় কথা নয়। এ বারের লড়াইটা আসলে আমাদের কর্মীদের প্রতি তৃণমূলের বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy