Advertisement
E-Paper

রাতের রাস্তায় ভয়ে ভয়ে হাঁটে কৃষ্ণনগর

জেলা সদর কৃষ্ণনগরে রাতের রাস্তা কতটা নিরাপদ? সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার । জেলা সদর কৃষ্ণনগরে রাতের রাস্তা কতটা নিরাপদ? সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার ।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৩
কৃষ্ণনাথ রায় লেনের অন্ধকার রাস্তা।

কৃষ্ণনাথ রায় লেনের অন্ধকার রাস্তা।

ক্ষৌণীশ পার্ক থেকে পালপাড়া মোড়: কৃষ্ণনগরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, বিপজ্জনকও বটে। এখানেই মাস তিনেক আগে দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর গোলাগুলির মাঝে পড়ে প্রাণ হারান এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। রাত আটটা নাগাদ মেসোমশাইয়ের সঙ্গে রিকশায় চেপে দাদুর বাৎসরিক শ্রাদ্ধে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্র, তখনই পিঠে গুলি লাগে। পুলিশ ওই ঘটনায় জনাকয়েক সমাজবিরোধীকে গ্রেফতার করলেও, অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের বেশির ভাগই এখনও পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই ‘ফেরার’ দুষ্কৃতীরা এখনও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই রাস্তার রেলগেট-সংলগ্ন এলাকা সমাজবিরোধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। ভরসন্ধ্যায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। রেলগেট পেরিয়ে ঘোড়াপট্টির মোড়-সংলগ্ন এলাকায় দিনে দুপুরে মোটরবাইক থামিয়ে বছরখানেক আগে সমাজবিরোধী বলে পরিচিত পরিতোষ দাস ওরফে হাত-কাটা পরিকে প্রকাশ্যে গুলি করা হয়েছিল। অথচ কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে এই এলাকা দিয়েই শহরে ঢুকতে হয়। রাত একটু বাড়লেই সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সুনসান রাস্তা পার হতে হয় জীবন হাতে নিয়ে। রাতে ওই এলাকায় দেখা মেলে না পুলিশেরও। নিরাপদ নয় জেনেও গভীর রাত পর্যন্ত এই এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হন শহরের মানুষ।

মোংলাপুকুর এলাকা: বাগানে পাড়া, বাঘাডাঙা, চাঁদসড়ক ও মোংলাপুকুর এলাকার মানুষের কাছে বোমার আওয়াজ জলভাত। পাড়ায় পাড়ায় নানা গোষ্ঠী রয়েছে, তাদের মধ্যে মিশে রয়েছে পরিচিত সমাজবিরোধীরাও। পুলিশ একান্তে স্বীকার করে, বাইরের দুষ্কৃতীরাও মোংলাপুকুরে ‘শেল্টার’ নেয়। একে অপরকে চমকে দিতে প্রায়ই চলে বোমাবাজি। স্থানীয় মানুষকে মারধর, দোকান ভাঙচুর, চাঁদার জুলুম এই এলাকার রোজনামচা। মাঠের কোণে টিমটিম করে গোটা কয়েক হলুদ বালবের ল্যাম্প। ফলে অন্ধকারের সুযোগে মোংলাপুকুরের মাঠ সমাজবিরোধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে। বসে নেশার ঠেক। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মৃত্যুর পর ধরপাকড় চলায় ইদানীং জায়গাটি শান্ত থাকলেও, রাতে মোংলাপুকুর এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন শহরের মানুষ।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বর: কৃষ্ণনগর স্টেশন সংলগ্ন শহরের একেবারে প্রান্তিক এলাকায় এই হাসপাতাল। রাত বাড়লে বিভিন্ন এলাকার সমাজবিরোধীরা এই এলাকায় জড়ো হয়। বিশেষ করে এই হাসপাতালের কাছেই নতুনগ্রাম, অঞ্জনাপাড়া, ঘোড়াপট্টি এলাকার দুষ্কৃতীরা এই চত্বরে যাতায়াত করে। শক্তিনগর বাজার এলাকা ছাড়াও হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলো থেকে নিয়মিত তোলা আদায় করা নিয়ে একাধিকবার নানা গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে। প্রতিবাদে এলাকার ব্যবসায়ীরা বাজার বন্ধ করে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি। রাত বাড়লে হাসপাতাল চত্বর সুনসান হয়ে পড়ে। হাসপাতালের সামনে যথেষ্ট আলো থাকলেও, বাকি এলাকায় তেমন ভাবে আলোর ব্যবস্থা নেই। সন্ধের পর থেকে সেই সব এলাকায় বসে নেশার ঠেক। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীর বাড়ির লোকজনকে মারধর করে টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

ক্ষৌণীশ পার্ক থেকে চারগেট: বছর কয়েক আগেও এই রাস্তা ছিনতাইবাজদের মুক্তাঞ্চল ছিল। এখনও ছিনতাই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সন্ধের পর থেকে শহরের মানুষ এই রাস্তা এড়িয়ে চলেন। রাস্তার ধারে বিএসএফ ক্যাম্প ও বিপিসিআইটি কলেজ থাকলেও তেমন জনবসতি নেই। ফলে রাতের রাস্তা কার্যত ফাঁকা থাকে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা।

আনন্দময়ীতলা থেকে হরিজনপল্লি: মাত্র মাস দুয়েক আগের ঘটনা। সাতসকালে স্কুলে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছিলেন লেডি কারমাইকেল গার্লস হাই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের এক শিক্ষক। তারপর থেকে ওই রাস্তা আরও এড়িয়ে চলেন শহরের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকালেই যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে রাতের অন্ধকারে এই রাস্তা কতটা নিরাপদ তা সহজেই অনুমেয়। সন্ধের পরে আনন্দময়ীতলা এলাকায় মাতালদের তাণ্ডব বাড়ে। রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই।

হোলি ফ্যামিলি গার্লস হাই স্কুল মোড় থেকে ডিআই অফিস: কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের পিছন দিয়ে চলে যাওয়া এই রাস্তা শহরের সব চাইতে নির্জন রাস্তাগুলির মধ্যে একটি। বিশেষ করে কলেজের পিছনের ফাঁকা মাঠ আর জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্ধকার নামলেই এই রাস্তাটি এড়িয়ে চলেন সকলে। এই রাস্তাতেও যথেষ্টআলো নেই। নির্জন মাঠ আর জঙ্গলের সুযোগ নিয়ে রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকা চলে যায় সমাজবিরোধীদের দখলে।

জেলা প্রশাসনিক ভবন থেকে পিডব্লিউডি মোড়: সার্কিট হাউসের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার পাশেই জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা জজের বাংলো। তবুও এই রাস্তাকে বিশেষ নিরাপদ বলে মনে করেন না শহরের মানুষ। রাস্তাতেও মাঝেমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

জেলা প্রশাসনিক ভবন থেকে নবদ্বীপ মোড়: জেলা শাসক, পুলিশ সুপারের বাংলোর পিছন দিয়ে চলে যাওয়া এই রাস্তাটিও নির্জন। এখানে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য নেই। তবে বাইক নিয়ে তাণ্ডব চলে প্রতিদিন। বেপরোয়া গতিতে চলা ওই বাইকবাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ পথচারীরা।

কদমতলা ঘাট: জলঙ্গি নদীর ধারে এই নিরঞ্জন ঘাটের পাশে পুরসভা একটি পার্ক তৈরি করেছে। কিন্তু রাত বাড়লেই এই পার্ক ও তার আশপাশের এলাকা বিভিন্ন বয়সের মানুষের নেশার ঠেক হয়ে যায়। ফলে রাত বাড়লে এই এলাকাকেও আর নিরাপদ বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মহিলারাও এই পার্ক এড়িয়ে চলেন।

বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলখানার সামনে দিয়ে ঘূর্ণী যাওয়ার রাস্তা: শহরের একটি বিপজ্জনক রাস্তা। গোটা রাস্তায় কোনও জনবসতি নেই। আছে জঙ্গল, ফাঁকা মাঠ আর বিশাল পুকুর। সন্ধ্যের পরে এই রাস্তা দিয়ে খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন কোনও যাতায়াত করেন না।

বাসস্ট্যান্ড থেকে গোদাডাঙা: রাস্তায় একাধিক মদের ঠেক। মাঝেমধ্যেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

কেন দীর্ঘ দিন শহরের এক একটা এলাকা এমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থেকে যাচ্ছে? কী করছে পুলিশ-প্রশাসন?

(আগামী কাল দ্বিতীয় পর্ব)

ছবিগুলি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।

কেমন লাগছে আমার শহর?

নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।

subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-নদিয়া মুর্শিদাবাদ’।

অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, নদিয়া মুর্শিদাবাদ বিভাগ, জেলা দফতর

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

amar shohor krishnanagar susmit halder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy