Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রানাঘাটে ফুটছে পদ্ম, চিন্তায় তৃণমূল

প্রচারে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। ভোটের দিন অনেক বুথে এজেন্ট ছিল না। একই ছবি ভোট গণনার দিন। অথচ ফল প্রকাশের পর দেখা গেল নদিয়ার রানাঘাট পুরসভায় একটি ওয়ার্ডে ‘লিড’ রেখেছে বিজেপি। অন্য আরও ১২টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে। সব মিলিয়ে যথেষ্ট ভাল ফল করেছে তারা। যা দেখে চিন্তায় পড়েছে তৃণমূল-সহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষত আগামী বছর রানাঘাটে পুরভোট। তার আগে বিজেপি-র এই সাফল্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছে তারা।

সৌমিত্র শিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০০:৪৪
Share: Save:

প্রচারে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। ভোটের দিন অনেক বুথে এজেন্ট ছিল না। একই ছবি ভোট গণনার দিন। অথচ ফল প্রকাশের পর দেখা গেল নদিয়ার রানাঘাট পুরসভায় একটি ওয়ার্ডে ‘লিড’ রেখেছে বিজেপি। অন্য আরও ১২টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে। সব মিলিয়ে যথেষ্ট ভাল ফল করেছে তারা। যা দেখে চিন্তায় পড়েছে তৃণমূল-সহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষত আগামী বছর রানাঘাটে পুরভোট। তার আগে বিজেপি-র এই সাফল্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছে তারা।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে রানাঘাট পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৬৪টি ভোট পেয়ে বিজেপি প্রথম স্থানে রয়েছে। সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৮২৭টি ভোট। কংগ্রেস ৮০৩টি ভোট পেয়ে তৃতীয় এবং সিপিএম ৭৫২টি ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচনে কিন্তু এই ওয়ার্ড ছিল কংগ্রেসের। রানাঘাট শহরের কংগ্রেস সভাপতি কজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এখানে ৩৪৮ ভোটে জিতেছিলেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১,৩৪৬। তৃণমূলের সমীর বসু পেয়েছিলেন ৯৯২টি ভোট। সিপিএমের সনৎ সেনগুপ্ত ৮৪৫টি ভোট পেয়ে ছিলেন তৃতীয় স্থানে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র কোনও প্রার্থী ছিল না। পুরসভা নির্বাচনে মাত্র চারটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছিল তারা, কোনওটিতেই সেই অর্থে ভাল ফল হয়নি। কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনে ১, ৩, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৭ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। যে চারটি ওয়ার্ডে গতবার পুরভোটে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি, সেখানেও লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে এগিয়ে তারা।

কপালের ভাঁজ মুছে তৃণমূল নেতারা অবশ্য মুখে বলছেন, কংগ্রেসের ভোট কেটে রমরমা বিজেপি-র। আর ‘মোদী হাওয়া’। পুরভোটে যে দু’টোর প্রভাব পড়বে না। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার কজ্জ্বলবাবু বলেন, “আমার ওয়ার্ডের একটা অংশের মানুষ এবার বিজেপি-কে ভোট দিয়েছে। তারা একথা স্বীকার করেছে যে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ফল ভাল হবে না বুঝতে পেরে তারা বিজেপি-কে ভোট দিয়েছে। আগামী পুরসভা নির্বাচনে তারা আমাদেরই ভোট দেবে বলে আমার বিশ্বাস।” অন্য দিকে রানাঘাট পুরসভার পুরপ্রধান ও তৃণমূল বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে ভোট পেয়েছে, তা খুব শীঘ্রই কমতে থাকবে। পুরসভা নির্বাচনে এই ফল ধরে রাখতে পারবে না বিজেপি। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন এক তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর অবশ্য মেনে নেন, “বিজেপি-র ফলাফল চিন্তার বিষয়। আমাদের ওয়ার্ডে সেই অর্থে বিজেপি-র কোনও লোক নেই। নির্বাচনে সেখানে তেমন প্রচার ছিল না। অথচ এত ভোট পেল বিজেপি। মোদী হাওয়ায় বড়জোড় শ’দুয়েক ভোট পড়তে পারত। সেখানে ন’শোর বেশি ভোট পেয়েছে ওরা। এগুলো এল কোথা থেকে?”

গত পুরসভা নির্বাচনে রানাঘাটে মূলত কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হয়েছিল। সেখানে এ বার লড়াই কি ত্রিমুখী হবে? প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য দুলাল পাত্র সম্ভাবনা উড়িয়ে বলেন, “গত পুরসভা নির্বাচনে আমরা যে বাম ভোট পেয়েছিলাম, লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোটের প্রায় সবটাই বিজেপি-র দিকে চলে গিয়েছে। আশা করছি পুরসভা নির্বাচনে সেটা আবার আমাদের দিকেই ফিরে আসবে।” রানাঘাটের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক আলোক কুমার দাসও মনে করেন লোকসভা নির্বাচনের ফলের পিছনে রয়েছে মোদী হাওয়া। যদিও সব তত্ত্ব খারিজ করে দিয়ে বিজেপি দাবি করেছে আগামী দিনে রানাঘাটে তাদের ফল আরও ভাল হবে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, “কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসছে। তার প্রভাব পড়বে এ রাজ্যেও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soumitra sikdar ranaghat bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE