প্রথম শ্রেণির পড়ুয়ারা স্কুলে আসে সপ্তাহে মাত্র চার দিন। আর দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয় সপ্তাহে পাঁচ দিন। শিক্ষকের অভাবে শুধু রবিবার নয়, ছুটি পাওয়া যায় আরও দু’-এক দিন করে।
প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল নয়, নদিয়ার জেলাসদরে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের প্রাতঃবিভাগে এই ভাবেই চলে পড়াশোনা। প্রায় তিন বছর ধরে এমনটা চললেও বিষয়টি জানা নেই নদিয়ার জেলাশাসকের সরকারি এই স্কুলে পদাধিকার বলে যিনি পরিচালন সমিতির সভাপতি।
অথচ, ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি জেলার গর্ব তো বটেই, রাজ্যেও ভাল ফলাফলের জন্য সুপরিচিত। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করার গৌরব রয়েছে এই স্কুলের ছাত্রদের। এই বছর মাধ্যমিকেও এই স্কুল থেকে সর্বোচ্চ ৬৭০ নম্বর পেয়েছে দু’জন ছাত্র। ২৭ জনের প্রাপ্ত নম্বর ৯০ শতাংশের উপর। কোনও ছাত্র অনুত্তীর্ণ নয়।
এহেন স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাতঃবিভাগে শিক্ষকের অভাবে ক্লাস হচ্ছে না নিয়মিত। দিবাবিভাগে প্রায় আটশো ছাত্র পিছু শিক্ষক রয়েছেন ৩০ জন। দু’টি পদ শূন্য রয়েছে। অন্য দিকে প্রাতঃবিভাগে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশো। সেখানে শিক্ষক রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক-সহ মাত্র নয় জন। ২০১১ সালে অবসর নিয়েছিলেন আঁকার শিক্ষক স্বপন বিশ্বাস। তাঁর জায়গায় নতুন করে শিক্ষক নিয়োগও করা হয়নি।
প্রাতঃবিভাগের ছয়টি শ্রেণিতে ‘ইউনিট’ বা ‘সেকশন’ রয়েছে মোট দশটি। তাই কোনও বিরতি ছাড়াই এক জন শিক্ষক সব ক্লাস নিলেও ফাঁকা থেকে যায় একটি করে শ্রেণি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, “ইচ্ছা থাকলেও কোনও উপায় নেই। ক্লাসের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় আমরা বাধ্য হয়েছি প্রতিদিন একটি করে শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রাখতে।”
এই অবস্থায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রের মা রূপা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ভাল স্কুল। অনেক আশা নিয়ে আমার ছেলেকে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হলে প্রাথমিক স্তরে ভিত তৈরি করতে হয়। সেখানেই তো গলদ। ক্লাস না হওয়ায় আমাদের ছেলেরা তো পিছিয়ে যাচ্ছে।”
এই নিয়ে অভিভাবকরা দীর্ঘ দিন ধরেই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ কিছু হয়নি। স্কুলের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই কার্যকর থাকবে। শিক্ষক নিয়োগ হয়ে গেলেই আবার স্বাভাবিক সূচিতে পঠন-পাঠন শুরু হবে। নামী সরকারি স্কুলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক দেওয়া যাচ্ছে না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকেরা। এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনিক উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির রাজ্য কমিটির সভাপতি দীপক দাস বলেন, “রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি স্কুলেই শিক্ষকদের শূন্য পদের সমস্যা আছে। আশা করি দ্রুত এই সমস্যর সমাধান হবে।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নাকি তাঁর জানাই ছিল না। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, “আমি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চাইব। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।”