Advertisement
E-Paper

শান্তির বার্তা দিতে বহরমপুরে শস্ত্রহীন দুর্গার হাতে পায়রা

সাত সকালে সংবাদপত্রের পাতা ওল্টাতেই চোখে ভেসে ওঠে ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বস্ত গাজা ও ইরাকের মাটিতে পড়ে থাকা নিষ্পাপ শিশুর নিথর দেহ। আগ্নেয়াস্ত্রের আগুনে দাউ দাউ করে পুড়ে খাক হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইরাক বা গাজা যাওয়ার দরকার নেই। সন্ধ্যায় টিভির নব ঘোরাতেই পর্দায় ভেসে ওঠে প্রতিবেশী জেলা বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের কণ্ঠ নিঃসৃত ‘কব্জি কেটে’ নেওয়ার হুমকি।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
নতুন বাজার মিলন সঙ্ঘের প্রতিমা। ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।

নতুন বাজার মিলন সঙ্ঘের প্রতিমা। ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।

সাত সকালে সংবাদপত্রের পাতা ওল্টাতেই চোখে ভেসে ওঠে ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বস্ত গাজা ও ইরাকের মাটিতে পড়ে থাকা নিষ্পাপ শিশুর নিথর দেহ। আগ্নেয়াস্ত্রের আগুনে দাউ দাউ করে পুড়ে খাক হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইরাক বা গাজা যাওয়ার দরকার নেই। সন্ধ্যায় টিভির নব ঘোরাতেই পর্দায় ভেসে ওঠে প্রতিবেশী জেলা বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের কণ্ঠ নিঃসৃত ‘কব্জি কেটে’ নেওয়ার হুমকি। ‘বঁটি দিয়ে’ বিরোধীদের ‘নলি কেটে’ নেওয়া কিংবা ‘আমাদের ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করে দেব’ বলে কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পালের আস্ফালনও স্মৃতি থেকে এখনও মুছে যায়নি।

লাগাতার এই ত্রাসের বিভীষিকা থেকে এ বার মুক্তি পেতে চায় বহরমপুর শহরের মিলন সঙ্ঘ পরিচালিত ‘নতুনবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’র কর্তারা। তাই এ বার তাঁরা মহিষাসুরমদির্নীর আরাধনা করবেন না। এ বার তাঁরা আরাধনা করবেন মমতাময়ী জগজ্জননীর। সেই কারণে অসুর নিধনের জন্য সপরিবার দেবীদুর্গার কারও হাতে কোনও অস্ত্র নেই। অস্ত্রের বদলে সবার হাতে রয়েছে শান্তির দূত শ্বেত কপোত!

শান্তি ও সন্ধির বার্তা পৌঁছে দিতে মহিষাসুরের হাতেও রয়েছে খাঁড়ার বদলে উড়ুক্কু সাদা পায়রা।

গদা, শঙ্খ, সুদর্শন চক্র, ত্রিশূল, তীর-ধনুক ও বিষধর সাপের বদলে দশভুজার উপকরণ আকাশে ওড়ার জন্য উন্মুখ ৫ জোড়া সাদা পায়রা। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী মায় অসুরের হাতেও পারাবত। শাস্ত্রের পাশ কাটিয়ে দেবীদুর্গার এ হেন শস্ত্রবিহীন দশা কেন?

‘নতুনবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক সমীরকুমার রায় বলেন, “চারপাশে এত হানাহানি, এত অসহিষ্ণুতা! রাজনৈতিক, সামাজিক, কী পারিবারিক সর্বত্র এখন একই ছবি। সকালে সংবাদপত্রে, দিনভর টিভি চ্যানেলে চোখ রাখা যায় না। শিশুরা প্রশ্ন করে, ‘‘এত রক্ত কেন!” আমাদের মুখে কোনও জবাব জোটে না। অথচ এ হেন দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে কোনও একক মানুষের পক্ষে কিছুই করার নেই!”

পুজো কমিটির আর এক যুগ্ম সম্পাদক অজয় মিত্র বলেন, “আমরা হানাহানি থামাতে পারব না। তবে প্রতিকী প্রতিবাদ জানাতে তো বাধা নেই। তাই ঠিক করলাম, এ বার অস্ত্র ছাড়াই মায়ের পুজো হবে। অস্ত্রের বদলে প্রতিমার হাতে থাকবে শান্তির দূত সাদা পায়রা।”

মণ্ডপের দেওয়াল ও ছাদ জুড়েও ‘উড়বে’ শতাধিক ফুটফুটে সাদা পায়রা। পঞ্চমীর ভোরে পুজো মণ্ডপ থেকে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের শোভাযাত্রা বের হবে। সুসজ্জিত ওই প্রভাতফেরিতেও সাদা পায়রা দিয়ে সাজানো ট্যাবলো থাকবে।

সমীরবাবু বলেন, “মণ্ডপ থেকে শুরু করে পুরনো হাসপাতাল মোড় হয়ে কাদাই দিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ ও খাগড়া চৌরাস্তা হয়ে গোয়ালপাড়া ঘুরে ট্যাবলো ও আড়াইশো জনের প্রভাতফেরি ৪ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে ফের মণ্ডপে পৌঁছবে।”

হানাহানির মোক্ষম কারণটি পুজো কর্তারা যথাযথই উপলব্ধি করেছেন। তাই পুজো উদ্বোধনের জন্য কোনও নেতা-মন্ত্রীকে তাঁরা আমন্ত্রণ জানাননি। অজয়বাবু বলেন, “জগজ্জননী আনন্দময়ীর পুজোর উদ্বোধন করবেন পাড়ার বয়ঃজ্যেষ্ঠ মহিলা। মায়েরাই তো ধ্বংসের বদলে সৃষ্টি করেন।”

চাঁদা আদায়েও তাঁরা অশান্তির কথাটি মাথায় রেখেছেন। সমীরবাবু বলেন, “কারও কাছ থেকে জবরদস্তি চাঁদা আদায় আমরা নিষিদ্ধ করেছি। তাই আমরা নতুন বাজারের সব্জি ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে দৈনিক এক-দেড় টাকা সাহায্য নিয়ে তহবিল গড়েছি।”

সপ্তমী ও অষ্টমীর দুপুরে খুদে থেকে বৃদ্ধবৃদ্ধা মিলে পুজো কমিটির প্রায় ৪৫০ জন সদস্যকে মণ্ডপ প্রাঙ্গণে পাত পেড়ে খাওয়ানো হবে। মধ্যাহ্ন ভোজনের সেই মেনুতেও যাতে হিংসার দাগ না লাগে সেই ব্যাপারেও সতর্ক পুজোকর্তারা। তাঁরা জানান, সপ্তমী ও অষ্টমী মিলে দু’দিনের মধ্যাহ্ন ভোজনেই আমিষের ঠাঁই নেই। চার লক্ষ টাকা বাজেটের পুজো উতরে দিতে ৩৬৫ দিন যাঁরা দৈনিক ‘কন্ট্রিবিউট’ করেন সেই সব ক্ষুদ্র সব্জি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিলি করা হবে শান্তির পুজোর অষ্টমীর প্রসাদ। নিরামিষ।

pujo berhampore durga pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy