Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিলায় ক্ষতিগ্রস্ত বড়ঞা, কান্দি

এক রাতের শিলাবৃষ্টিতে কয়েকশো হেক্টর জমির আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে কান্দি মহকুমায়। ব্যপক ক্ষতির সম্মুখীন চাষিরা। গ্রামের পর গ্রাম পচা আলুর দুর্গন্ধ। গত বুধবার মাঝরাতে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়েই ব্যপক শিলাবৃষ্টি হয়। তার জেরে খেতের থাকা আলু সেখানেই পচে যাচ্ছে। জেলার শষ্যগোলা হিসাবে পরিচিত কান্দি মহকুমায় এবার আলু চাষ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আলু ওঠার সময় প্রায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি, সেইসঙ্গে শিল পড়ায় সব পণ্ড হয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকার চাষিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩১
Share: Save:

এক রাতের শিলাবৃষ্টিতে কয়েকশো হেক্টর জমির আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে কান্দি মহকুমায়। ব্যপক ক্ষতির সম্মুখীন চাষিরা। গ্রামের পর গ্রাম পচা আলুর দুর্গন্ধ।

গত বুধবার মাঝরাতে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়েই ব্যপক শিলাবৃষ্টি হয়। তার জেরে খেতের থাকা আলু সেখানেই পচে যাচ্ছে। জেলার শষ্যগোলা হিসাবে পরিচিত কান্দি মহকুমায় এবার আলু চাষ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আলু ওঠার সময় প্রায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি, সেইসঙ্গে শিল পড়ায় সব পণ্ড হয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকার চাষিরা।

কান্দি মহকুমার বড়ঞা ব্লকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর ও কান্দি ব্লকে প্রায় পাঁচশো হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ফলে এই বৃষ্টিতে ওই ব্লকের কয়েকশো চাষি ক্ষতির মুখে।

কান্দি ব্লকের মধ্যে যশহরি-আনোখা ১ ও ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতে আলুর চাষ বেশি। ওই এলাকায় মোল্লা, নিচুমোল্লা, কল্লা, কয়েম্বা, কয়া, ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার আলু খেতে জল জমে গিয়ে খেতের মধ্যে সমস্ত আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নিচু মোল্লা গ্রামের প্রায় একশোটি পরিবারের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে এবার আলু চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ৬০-৬৫ বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়েছে।

কেউ ব্যাঙ্ক ঋন, কেউ আবার মহাজনের থেকে ঋন করে আলু চাষ করেছিলেন। চাষিদের কথায় বিঘাপ্রতি আলু চাষ করতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এক বিঘা জমির আলুও ঘরে তুলতে পারা গেল না। ফলে ঋন শোধ হবে কেমন করে, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে তাঁদের।

স্থানীয় সুনীল মণ্ডল এবার চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকা ঋণ ও বাকিটা ঘর থেকে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এক কাঠা জমির আলুও ঘরে তুলতে পারিনি। সব খেতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জানিনা সারা বছর কী ভাবে চলবে।” একই অবস্থা শিবশঙ্কর দাস, রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, কৃপাময় মণ্ডলের। শিবশঙ্কর দাস বলেন, “আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখা যায়। কিন্তু এবার যা হল তাতে মহাজনের ঋণ যে কী ভাবে মেটাব তা ভাবতেই শিউরে উঠছি। সরকারি সাহায্য ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।”

একই চিত্র বড়ঞা ব্লকেও। স্থানীয় চাষি নিমাই ঘোষ এবার আট বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, “১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে ব্যাঙ্ক ঋণ ৮০ হাজার টাকা। বৃষ্টির পরে মাত্র দশ কাঠা জমির আলু ঘরে এনেছিলাম, সে গুলিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাকি আলু মাঠেই নষ্ট হচ্ছে।”

রবিবার কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুকান্ত ত্রিবেদি নিচুমোল্লা-সহ আরও পাঁচটি গ্রামের খেত পরিদর্শন করেন। সুকান্তবাবু বলেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের সামান্য হলেও ক্ষতি পূরণ দেওয়া যায় কি না সেটা দেখা হচ্ছে।” কান্দি ব্লকের সহ কৃষি আধিকারিক উত্‌পল দাস বলেন, “প্রায় ৬০ হেক্টর জমির আলু নষ্ট হয়েছে বলে অনুমান। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

জেলার কৃষি আধিকারিক দীনেশ পাল বলেন, “ব্লক কৃষি আধিকারিকদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। যাঁরা ব্যাঙ্ক ঋণ করেছিলেন তাঁরা ক্ষতিপূরণ পেলেও মহাজনের থেকে ঋণ করে চাষ করার ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না। তবুও বিষয়টি আমরা রাজ্য কৃষি দফতরে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hail storm potatoe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE