Advertisement
০৬ মে ২০২৪

শেষ মুহূর্তের গোলে জয় মিলন সঙ্ঘের

ভ্রাতৃ সঙ্ঘের বক্সের বাঁ দিকে পাসটা পেয়েই চকিতে শট নিলেন নন্দগোপাল রায়, মিলন সঙ্ঘের স্ট্রাইকার। ভ্রাতৃ সঙ্ঘের গোলকিপার রাজু সিংহ আন্দাজ করতে পারেননি কখন শটটা তাঁর নাগাল পেরিয়ে দ্বিতীয় বারের দিকে ছুটে গিয়ে জালে জড়িয়ে গেল।

তখন নবদ্বীপ মিউনিসিপ্যাল সকার কাপের খেলা চলছে ভ্রাতৃ সঙ্ঘের সঙ্গে।

তখন নবদ্বীপ মিউনিসিপ্যাল সকার কাপের খেলা চলছে ভ্রাতৃ সঙ্ঘের সঙ্গে।

শমীক সরকার ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

ভ্রাতৃ সঙ্ঘের বক্সের বাঁ দিকে পাসটা পেয়েই চকিতে শট নিলেন নন্দগোপাল রায়, মিলন সঙ্ঘের স্ট্রাইকার। ভ্রাতৃ সঙ্ঘের গোলকিপার রাজু সিংহ আন্দাজ করতে পারেননি কখন শটটা তাঁর নাগাল পেরিয়ে দ্বিতীয় বারের দিকে ছুটে গিয়ে জালে জড়িয়ে গেল। গোওওওল হাজার দশেকেরও বেশি দর্শকের শব্দব্রহ্মে তখনই যেন ঠিক হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য। নবদ্বীপ মিউনিসিপ্যাল সকার কাপের প্রথম বছরের খেতাব জিতল মিলন সঙ্ঘ। রবিবার ভ্রাতৃ সঙ্ঘকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল তারা। এক সপ্তাহ আগে ৮০তম বৈদ্যনাথ স্মৃতি শিল্ড জয়ের পরে মুকুটে এটি দ্বিতীয় পালক।

এ যেন অনেকটা শনি সন্ধ্যার আইএসএল ফাইনালের মতো। একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে প্রথম আইএসএল খেতাব তুলে দেওয়া মহম্মদ রফিকের মতোই রবিবার মিলন সঙ্ঘের ত্রাতা হয়ে উঠলেন নন্দগোপাল। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়ে ছিল দু’দলই। শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত মিলন সঙ্ঘ। কিন্তু গোলকিপারের তত্‌পরতায় তা হয়নি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে একেবারে ফাঁকায় গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ভ্রাতৃ সঙ্ঘ। ম্যাচের পর সিনিয়র ডিভিশনে বছর তিন-চার আগে সোনালি শিবিরের হয়ে মাঠে নামা নন্দগোপাল বলছিলেন, “ফাইনালের আগে আমাদের টিমের অন্যতম কর্মকর্তা ও কোচ অসীম ঘোষ বলেছিলেন, আমরা চার ম্যাচে একটাও গোল খাইনি। সাত গোল দিয়েছি। সেটা ফাইনালেও ধরে রাখতে হবে। অসীমদার কথা রাখতে পেরেছি বলে আরও আনন্দ হচ্ছে।” ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিয়ে নন্দ বলেন, “সুযোগ পেলে আমিও আটলেটিকোর রফিক হতে পারি।”


ফাইনালের একমাত্র গোল।

ষোলো দলের এই টুর্নামেন্ট গত এক মাসে যেন ফুটবল উত্‌সবের রঙিন জামা পরিয়ে দিয়েছিল নবদ্বীপ শহরকে। ড্যানিয়েল বিদেমি, অ্যানিলো, লেথানিলের মতো বিদেশিরা টুর্নামেন্টের গোড়ার দিকে মাঠে নেমেছেন। প্রতি ম্যাচেই পাঁচ-সাত হাজার দর্শক। গোটা টুর্নামেন্ট যাঁর মস্তিস্কপ্রসূত, সেই নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “টিভিতে আইএসএল দেখতে দেখতে হঠাত্‌ই এখানে একই ধাঁচে টুর্নামেন্ট করার কথা মাথায় এসেছিল। সেটা দুর্দান্ত ভাবে সফল। ফাইনালে হাজার দশেক দর্শকের উপস্থিতিই সাফল্যটা কোরাসে জানিয়ে দিয়েছে। গত প্রায় চার দশকে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় স্তরের প্রাক্তন রেফারি দীপক চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন তিরিশ বছরে মাঠে এত দর্শক দেখেননি তিনি।”

রবিবার ফাইনালে অতিথি রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা-সহ জেলার তাবড় কর্তা, জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়, দ্রোণাচার্য পুরস্কার জয়ী কুন্তল রায়ের মুখেও উচ্ছসিত প্রশংসা এমএসসি-র। সংগ্রাম বলছিলেন, “বাংলার ফুটবল এখনও বেঁচে আছে। আইএসএল, এমএসসির মতো এরকম আরও টুর্নামেন্ট হওয়া উচিত।” জাতীয় দলের দুই প্রাক্তন ফুটবলার মুরশেদ আলি আর রিয়াজুল ইসলাম আপ্লুত গলায় বলেন, “এই ভাবেই উঠে আসে প্রতিভা। আইএসএলের সাপ্লাই লাইন হয়ে উঠতে পারে এমএসসি-র মতো টুর্নামেন্ট।

নিছক টুর্নামেন্ট ভাবলেও ভুল হবে। এমএসসি আসলে এলাকার ক্রীড়া উত্‌সাহী পুলিশ কর্তা, রাজনৈতিক নেতা, পুরসভার কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সম্মিলিত প্রচেষ্টাফুটবলের জোয়ারে ভাসার, প্রতিভা তুলে আনার। এ দিন খেলা শুরুর আগে বছর কুড়ির বাকশক্তিহীন জাগলার অমিত বিশ্বাস ঠায় বল নাচিয়ে মুগ্ধ করে দেন দর্শকদের। ব্রাজিল ভক্ত অমিত শুধু মহাতারকা নেইমারের চুলের ছাঁটই নকল করতে চান না। তাঁর দু’চোখে স্বপ্ন ভাসে নেইমার হয়ে ওঠার।

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE