সংগঠনকে ‘সক্রিয়’ করতে দলের ‘নিষ্ক্রিয়’ কর্মীদের সতর্ক করে জেলা জুড়ে সিপিএম একটা তালিকা তৈরি করেছিল আগেই। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের জেলা সম্মেলনে জেলা কমিটি থেকে এ বার বাদ দেওয়া হল একাধিক সদস্যকে। একই ভাবে জেলা সম্পাদক-সহ সরিয়ে দেওয়া হল সম্পাদকমণ্ডলীর চার সদস্যকেও। শনিবার ও রবিবার কৃষ্ণনগরের এ ভি স্কুলে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনের ২০তম জেলা সম্মেলন। সেখানে গত বারের জেলা কমিটির ৬৫ জন সদস্যের মধ্যে ১৯ জনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১০ জনকে নিষ্ক্রিয়তার কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ জনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বয়সের কারণে।
সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন যাঁরা এসেছেন তাঁদের প্রায় সকলেরই বয়স ত্রিশের নীচে। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “একের পর এক নির্বাচনে পরাজয়ের পরে আমাদের সংগঠনের একটা বড় অংশের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের লাগাতার সন্ত্রাস ও হুমকি এর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে আমরা সেই সব নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের চিহ্নিত করে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, সংগঠনে গতি আনতে তরুণ প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে।
লোকসভা ভোটের পরে কৃষ্ণনগরেই সংগঠনের রাজনৈতিক কনভেনশনে সিপিএম নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন ডিওয়াইএফ আইয়ের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা দাবি করেছিলেন, সিপিএমের ভিতরেই নিষ্ক্রিয় নেতৃত্বকে সরিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে যাঁরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের তুলে আনতে হবে। নিজেদের সংগঠনের ক্ষেত্রেও তাঁরা একই দাবি তুলেছিলেন।
সেই মতো এ বার জেলা সম্মেলনে দীঘর্র্ দিন ধরে সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্ব। অনেকে আবার বয়সের কারণে নিজে থেকেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিদায়ী সম্পাদক সুমিত বিশ্বাস জেলা কমিটির দু’বারের সভাপতি ও দু’বারের সম্পাদক। এ বারেও তাঁর সম্পাদক পদে থেকে যাওয়ার জন্য নিচুতলা থেকে অনেকেই দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু ৪০ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি নিজেই আর ওই পদে থাকতে রাজি হননি বলে সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁর পরিবর্তে সম্পাদক হয়েছেন গত বারের সভাপতি দেবাশিস আচার্য ও সভাপতি হয়েছেন মৃণাল বিশ্বাস।
এ বারের জেলা সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃত্বের সমালোচনাও করেছেন অনেক বক্তা। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে কেন সে ভাবে দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলন সংগঠিত করা গেল না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে অনেকেই ডিওয়াইএফআইয়ের সংগঠনের কমিটি গঠন থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে সিপিএমের হস্তক্ষেপ কমানোরও দাবি ওঠে এই সম্মেলনে। যদিও সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “এর আগে সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব ঠিক করে দিতেন কে সম্পাদক হবেন আর কে সভাপতি। এ বার কিন্তু সেটা হয়নি। বরং উল্টোটাই হয়েছে।” ওই সদস্য বলেন, “এই প্রথম আমরা কোর কমিটির সাত জন মিলে আলোচনার মাধ্যমে সম্পাদক, সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ঠিক করি। সেই তালিকা আমরা সিপিএমের জেলা সম্পাদককে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছি মাত্র।”
সংগঠনের বিদায়ী জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুমিত বিশ্বাস বলেন, “সম্মেলনে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে তার সবকটিই সংগঠনকে গতিশীল করার উদ্দেশেই। আশা করছি, আমাদের সংগঠন আগামী দিনে আরও বেশি সক্রিয় ও আন্দোলনমুখী হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy