Advertisement
E-Paper

স্টেডিয়ামে বিয়ে, বিতর্কে পুরসভা

স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছিল খেলাধুলার মানোন্নয়নের জন্য। দেখাশোনার ভার দেওয়া হয়েছিল শহরের দু’টি স্কুলের হাতে। বিশাল মাঠ আর কয়েকটা ঘর। তার মধ্যে রয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য ড্রেসিং রুম বা টেবিল টেনিস খেলার ঘর। কিন্তু ফাল্গুনের শেষ লগ্নে সেখানেই বসল বিয়ের আসর। ড্রেসিং রুমে ছাদনাতলা আর টেবিল টেনিস রুমে কয়েকশো নিমন্ত্রিতের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১১
 বিয়ে উপলক্ষে সাজানো হয়েছে স্টেডিয়াম।—নিজস্ব চিত্র।

বিয়ে উপলক্ষে সাজানো হয়েছে স্টেডিয়াম।—নিজস্ব চিত্র।

স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছিল খেলাধুলার মানোন্নয়নের জন্য। দেখাশোনার ভার দেওয়া হয়েছিল শহরের দু’টি স্কুলের হাতে। বিশাল মাঠ আর কয়েকটা ঘর। তার মধ্যে রয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য ড্রেসিং রুম বা টেবিল টেনিস খেলার ঘর। কিন্তু ফাল্গুনের শেষ লগ্নে সেখানেই বসল বিয়ের আসর। ড্রেসিং রুমে ছাদনাতলা আর টেবিল টেনিস রুমে কয়েকশো নিমন্ত্রিতের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা।

সিপিএম নেতার আত্মীয়ের বিয়েতে ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়াম ভাড়া দিয়ে বিতর্কে জড়াল জঙ্গিপুর পুরসভা। শহরের ক্রীড়াপ্রেমী বহু মানুষই পুরসভার এই কাণ্ডে ক্ষুব্ধ। প্রতিবাদও হয়েছে, কিন্তু তা গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেননি পুরকর্তারা। সিপিএম পরিচালিত পুরসভার এই আচরণকে সমর্থন করেননি কংগ্রেস, এমনকী সিপিএমের অনেক কাউন্সিলারও।

অন্যদিকে ম্যাকেঞ্জি মাঠের মালিক শহরের যে দু’টি হাইস্কুল তারাও স্টেডিয়াম ভাড়া দেওয়ায় পুরসভার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। দু’টি স্কুল কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে পুরসভার কাছে লিখিত চিঠি পাঠাচ্ছেন। জঙ্গিপুরের মহকুমা শহর রঘুনাথগঞ্জে একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত ম্যাকেঞ্জি মাঠটির মালিকানা রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর হাইস্কুলের। বছর পাঁচেক আগে এলাকার খেলাধুলার উন্নয়নে পরিকাঠামো তৈরির শর্তে জঙ্গিপুর পুরসভাকে দুটি স্কুলই লিখিত ভাবে মাঠটির দেখভালের দায়িত্ব দেন।

সেইমত জঙ্গিপুর পুরসভা মাঠের পশ্চিম প্রান্ত বরাবর স্টেডিয়ামের গ্যালারি, ড্রেসিং রুম, টেবিল টেনিস রুম, ব্যাডমিন্টন হল-সহ বেশ কিছু পরিকাঠামো তৈরিও করে। সেখানে শৌচাগার ও জলের ব্যবস্থা হয়, আসে বিদ্যুৎও। গত দু’বছরে কেকেএম ফুটবল, মহকুমা স্তরের সমস্ত খেলা, এমনকী আন্তঃজেলা ফুটবলের আয়োজন হয়েছে এখানেই।

গত বছর ১২ জুন জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম ম্যাকেঞ্জি মাঠটিকে খেলাধুলোর জন্যই ব্যবহার করার আশ্বাস দিয়ে জঙ্গিপুরের কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত আবেদন করেন মাঠটিকে ঘেরার জন্য অর্থ চেয়ে। সাংসদ তহবিল থেকে ২০ লক্ষ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দও করেন অভিজিতবাবু। রাজ্য পূর্ত দফতর চলতি বছরের ৮ মার্চ থেকে মাঠ ঘেরার সে কাজ শুরু করবে। শুক্রবার সেই স্টেডিয়ামেই এক সিপিএম নেতার ভাইঝির বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিল পুরসভা। আর তা নিয়েই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে শহর জুড়ে।

মহকুমা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তাপস রায় বলেন, “স্টেডিয়ামটি রক্ষা করতে স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা যখন বিভিন্ন ভাবে একজোট হয়ে কাজ করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন এভাবে ভাড়া দেওয়া ঠিক হয়নি পুরসভার। প্রতিবাদ করেও ফল হয়নি।” ফুটবল প্রশিক্ষক সুবোধ দাস কটাক্ষ করে বলেন, “এরপর রবীন্দ্র ভবনও হয়তো বিয়ে বাড়ি হিসাবে ভাড়া দিয়ে দেবে পুরসভা। এটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। সেখানে বিয়ের আসর হতেই পারে না। পুরভবনের টাউন হলেও একবার এক বিয়েতে ভাড়া দেওয়ায় কম হইচই হয়নি শহরে।”

জেলা দলের প্রাক্তন ফুটবলার অনিল মাল বলেন, “ড্রেসিং রুমে ছাদনা তলা, টেবিল টেনিস রুমে কয়েক শো নিমন্ত্রিতের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন এ সবের পর সে ঘর আর খেলাধুলোর পরিবেশের উপযুক্ত থাকবে? যত আবর্জনা সব ফেলা হবে স্টেডিয়াম সংলগ্ন ডোবায়। পুরকর্তারা খেলাধুলো করেননি তো, তাই স্টেডিয়ামের মর্ম বোঝেন না।”

রঘুনাথগঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস বলেন, “খেলাধুলোর জন্য পরিকাঠামো গড়তে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পুরসভাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়ার জন্য নয়। প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জঙ্গিপুর পুরসভাকে।” জঙ্গিপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারহাদ আলি বলেন, “মাঠের মালিক স্কুল। পুরসভার আইনগত কোনও এক্তিয়ারই নেই বিয়ের আসর বসিয়ে দেওয়ার। আমরা লিখিত প্রতিবাদ জানাব।”

মাঠটিতে স্টেডিয়াম গড়ার মুখ্য ভূমিকা ছিল যার সেই প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি যতদূর জানি স্টেডিয়াম ভাড়া দেওয়া হয়নি। পরিচিত একজনের ভাইঝির বিয়ে। শহরে কোথাও ঘর ভাড়া না পাওয়ায় বিনা পয়সায় তাকে স্টেডিয়ামের ঘর ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে তা না দেওয়া হয় তা বলে দেওয়া হয়েছে পুরসভাকে।” দলের নেতা মৃগাঙ্কবাবু এ কথা বললেও জঙ্গিপুরের সিপিএমের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, “স্টেডিয়ামের ঘর ভাড়া না দিলে স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কোথা থেকে পাব? তাই সিদ্ধান্ত মতই এখন থেকে স্টেডিয়ামের ঘর ভাড়া দেওয়া হবে যে কোনও অনুষ্ঠানের জন্য। শুক্রবারও বিয়েতে ঘর দেওয়া হয়েছে ভাড়া নিয়েই। এতে অন্যায়ের কি আছে?”

উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের অশোক সাহার এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “স্টেডিয়ামের ঘর তো এখন খেলার জন্য ব্যবহার হচ্ছে না। তাই বিয়ের জন্য ভাড়া দিলে ক্ষতি কি? কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামও তো বিয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। সেখানে জঙ্গিপুর পুরসভা ভাড়া দিলে অন্যায় কোথায়?”

এ দিকে যে ওয়ার্ডের মধ্যে স্টেডিয়ামটি সেই ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সিপিএমেরই শত্রুঘ্ন সরকার বলেন, “স্টেডিয়াম ভাড়া দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি কাউন্সিলারদের সভায়। কেউ একক সিদ্ধান্তে বিয়ের আয়োজনের জন্য স্টেডিয়াম ভাড়া দিয়ে থাকলে সে দায় তার।”

প্রায় একই কথা শুনিয়েছেন কংগ্রেসের কাউন্সিলার বিকাশ নন্দ। তিনি বলেন, “এটা পুরপ্রধান ও উপ পুরপ্রধানের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। কাউন্সিলারদের সভায় এ নিয়ে কোনও আলোচনা বা সিদ্ধান্ত কিছুই হয়নি। তাছাড়া শহরের দু’টি স্কুল মাঠটি দিয়েছে খেলাধুলোর প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। শর্ত ভেঙে সে মাঠের কোনও অংশ বিয়ের জন্য ভাড়া দেওয়ার কোনও আইনি বৈধতাই নেই জঙ্গিপুর পুরসভার।”

stadium marriage raghunathganj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy