Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্প্রীতির জগদ্ধাত্রী গোপালপুরঘাটে

কৃষ্ণনগর বা চন্দননগরের মতো আলোর রোশনাই নেই। তাই প্রচারের আলো পড়ে না এখানে। তবু বাসুদেব মণ্ডল, সহিদুল মণ্ডল, অ্যান্টনি মোল্লারা ভাসেছেন আনন্দ জোয়ারে। নদিয়ার শেষ সীমান্তে গোপালপুরঘাটের স্থানীয় বাসিন্দারা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মেতেছেন জগদ্ধাত্রী পুজোর উত্‌সবে। গত ৬৩ বছর ধরে গোপালপুরঘাটে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। সেই আয়োজনে ধর্ম, সংস্কৃতির মিলনই প্রধান বিশেষত্ব। পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিত্‌ সাহা বলেন, “বহু বছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে গোপালপুর পর্যন্ত বাস চলাচল করত।

গোপালপুরঘাটের প্রতিমা। কল্লোল প্রামাণিকের ছবি।

গোপালপুরঘাটের প্রতিমা। কল্লোল প্রামাণিকের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share: Save:

কৃষ্ণনগর বা চন্দননগরের মতো আলোর রোশনাই নেই। তাই প্রচারের আলো পড়ে না এখানে। তবু বাসুদেব মণ্ডল, সহিদুল মণ্ডল, অ্যান্টনি মোল্লারা ভাসেছেন আনন্দ জোয়ারে। নদিয়ার শেষ সীমান্তে গোপালপুরঘাটের স্থানীয় বাসিন্দারা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মেতেছেন জগদ্ধাত্রী পুজোর উত্‌সবে।

গত ৬৩ বছর ধরে গোপালপুরঘাটে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। সেই আয়োজনে ধর্ম, সংস্কৃতির মিলনই প্রধান বিশেষত্ব। পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিত্‌ সাহা বলেন, “বহু বছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে গোপালপুর পর্যন্ত বাস চলাচল করত। সেই সময় বাস মালিকদের উদ্যোগে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। সেই আমাদের প্রথম উত্‌সব। প্রথম থেকেই এই উত্‌সবে জড়িয়ে রয়েছেন হিন্দু, মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ।”

এখনও পুজো কমিটির সদস্যদের নামের তালিকাটা হাতে এলেই স্পষ্ট হয়ে যায় বিষয়টা। সেখানে যেমন রয়েছেন মানিক মণ্ডল, বাসুদেব মণ্ডল, বিদেশ মণ্ডল, তেমনই রয়েছেন আফাজুদ্দিন মণ্ডল, ইসমাইল বিশ্বাস বা সহিদুল মণ্ডল। পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম পেশায় বাস চালক সহিদুল মণ্ডল বলেন, “সারা বছর বাস চালালেও এই সাত দিন কাজ থেকে ছুটি নিই। পুজোর সময় বাড়িতে আমার মেয়ে জামাই আসবেই। সেজন্য আমরাও চেয়ে থাকি আজকের দিনের জন্য। পরিবারের সকলে একসঙ্গে ক’টাদিন খুব মজা করে কাটাই।”

গ্রামের ছেলেমেয়েরা যে যেখানেই থাকুন না কেন, জগদ্ধাত্রী পুজোয় ঘরে ফেরা চাই-ই। সামরিক বাহিনীতে কর্মরত টিঙ্কু মণ্ডল বা হোটেলকর্মী অ্যাণ্টনি মোল্লা বাড়ি এসেছেন পুজো উপলক্ষে। কর্মসূত্রে হায়দরাবাদে থাকেন অ্যান্টনি। সারা বছর বাড়ি না ফিরলেও পুজোর সময় ফিরতেই হবে। আর এসেই লেগে পড়েন পুজোর কাজে। ব্যস্ত অ্যাণ্টনি বলেন, “এখানে হিন্দু মুসলিম বলে আলাদা কিছু নেই। সকলে মিলেই সাত দিনের এই অনুষ্ঠানটা করি। আমি গত দশ বছর পুজোর কার্যকরী কমিটিতে রয়েছি।” পুজো কমিটির অন্য এক সদস্য বিদেশ মণ্ডল বলেন, “আমাদের এটা সম্প্রীতির পুজো। পুজোর চাঁদা হোক বা সক্রিয় অংশ গ্রহণ, সব কাজ সবাই করেন। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই এই সাত দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এটাও কি আমাদের সকলের কম প্রাপ্তি?”

স্থানীয় রেখা মোল্লা জানান, “আমারা মুসলিম হলেও পুজোটাকে আমাদের বলেই মনে করি। আমার স্বামী প্রায় ৪০ বছর এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমার বড় ছেলে বায়ু সেনায় রয়েছে। যেখানেই থাকুক, প্রতি বছর পুজোয় বাড়ি আসবেই।”

জগদ্ধাত্রী পুজো এখন আকারে আয়তনে বেড়েছে। রবিবার দশমীতে কিন্তু প্রতিমা বিসর্জন হয়নি। বিসর্জন হবে আগামী শুক্রবার। সামান্য শোভাযাত্রা পরিক্রমা করবে গ্রাম। স্থানীয় পুকুরেই বিসর্জন। তার মাঝখানের এই সাত দিন চলবে পুজোর আনন্দ। বহরমপুর-করিমপুর রাজ্য সড়কের দু’পাশে বসেছে মেলা। নিতান্ত সাধারণ গ্রামীণ মেলা। মণ্ডা-মিঠাই, আলুকাবলি, কাচের চুড়ির মেলায় মানুষের উত্‌সাহের শেষ নেই। “আসলে এ হল আমাদের উত্‌সব” এটাই স্থানীয় বাসিন্দাদের মনের কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jagadhatri puja gopalpur idol immersion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE