Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ফুঁসছে গ্রাম, সনাতন বেপাত্তা

পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে রিঙ্কির শ্বশুর সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বাড়িতে সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে কাজ করতে এসেছিলেন এক স্বামী বিচ্ছিন্না মহিলা।

কান্না: নির্যাতিতা শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন অভিযুক্ত সনাতনের মা। ছবি: সুজিত মাহ

কান্না: নির্যাতিতা শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন অভিযুক্ত সনাতনের মা। ছবি: সুজিত মাহ

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

বন্ধ দরজার পাশে পড়ে ছোট্ট গোলাপি জুতো, হাওয়াই চটি। উঠোনের ডালিম গাছের ডালে ঝুলছে লাল ফ্রক। সে দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে রিঙ্কি গোস্বামী (ঠাকুর) বললেন— ‘‘কে বলবে মেয়েটা আর নেই। ফুলের মতো মেয়েটা কত কষ্ট নিয়ে চলে গেল...।’’

পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে রিঙ্কির শ্বশুর সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বাড়িতে সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে কাজ করতে এসেছিলেন এক স্বামী বিচ্ছিন্না মহিলা। কিন্তু সেই শিশুটির উপরে শ্বশুরের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পরে ছেলে ও পুত্রবধূরা ক্ষোভে ফুঁসছিলেন। ততটা তাঁরা উদ্বেগে ছিলেন ওই শিশুর শারীরিক অবস্থা নিয়ে। শুক্রবার সেই শিশুর মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছনোর পর থেকে শোক নেমে এসেছে সনাতনের পরিবারেও। গ্রামবাসীদের মুখেও সেই ছাপ।

কয়েকটা মাস এই গ্রামে কাটালেও, ওই নির্যাতিত এ ক’দিনে যেন নদিয়াড়ার মেয়েই হয়ে উঠেছিল। তাই এ দিন খবরটা শুনে অনেকেই ঘরে বসে থাকতে পারেননি। বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের কথায় ঘুরে ফিরে এসেছে সনাতনের কথা, মেয়েটার যন্ত্রণা।

বিচার চেয়ে: নির্যাতিত শিশুকন্যার মৃত্যুতে পুরুলিয়া শহরের পথে মোমবাতি মিছিল। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বছর বাষট্টির অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড সনাতনের বাড়িতে পরিচারিকার মেয়েকে জ্বর-সর্দিতে ভুগতে দেখে তার পুত্রবধূরাই জোর করে গাড়ি ভাড়া করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। পড়শিরা চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুলে পুরুলিয়ায় গিয়ে শিশুটির মায়ের হাতে টাকাও দিয়ে এসেছিলেন। সেখানেই ডাক্তারদের নজরে আসে শিশুটির দেহের ভিতরে বিঁধে সাতটি সুঁচ, দু’টি হাত ভাঙা। দেহে ক্ষত। শিশুটির মায়ের কথার ভিত্তিতে চাইন্ডলাইন সনাতনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করে। আঁচ পেয়ে সনাতন গা ঢাকা দেয়।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল ঘুরে এসএসকেএম-এ শিশুটিকে আনার পরে অস্ত্রোপচার করে সুচ গুলো বের করা হয়। তখন কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন নদিয়াড়ার মানুষজন। কিন্তু এই পরিণতি যে অপেক্ষা করছে, তাঁরা তা আঁচ করতে পারেননি। এ দিন তাই সনাতনের বিরুদ্ধে তার পড়শি আনন্দ গোপ, সন্দীপ রাজোয়াড়দের ক্ষোভ উগড়ে দিতে দেখা যায়। তাঁরা বলেন, ‘‘মেয়েটা যে আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছিল প্রথম দিকে আমরা টেরই পাইনি। বাইরে থাকা সনাতনের দুই পুত্রবধূ শাশুড়ির বাৎসরিক কাজ করাতে ভাগ্যিস এসেছিলেন বলেই তাঁদের নজরে মেয়েটা পড়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সনাতনকে এমন শাস্তি দিতে হবে যে সারা দেশ যেন মনে রাখে।’’ সনাতনের দুই নাতি-নাতনিও বলে, ‘‘দাদুর মুখ দেখতে চাই না। কঠিন শাস্তি চাই।’’

সনাতনের সৎ মা জুহিবালা ঠাকুর দাবি করেছেন, ‘‘সনাতন বরাবর রগচটা। কথায় কথায় মারধর করত।’’

শিশুটির দেহ আনতে শুক্রবার রাতে কলকাতা রওনা দেন চাইল্ডলাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার ও কয়েকজন কর্মী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE