কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নিউ টাউনের নজরুল তীর্থে স্মার্ট সিটি সংক্রান্ত কর্মশালায়। ছবি: সৌভিক দে।
কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া যোগ্যতার মাপকাঠি পূরণ করে ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদীর ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্পে জায়গা পেয়েছে রাজ্যের চারটি শহর। নিউ টাউন, বিধাননগর, দুর্গাপুর এবং হলদিয়ার পাশাপাশি এ বার রাজ্যের রাজধানী কলকাতাকেও ‘বিশেষ মর্যাদা’ দিয়ে স্মার্ট সিটি হিসেবে ঘোষণার জন্য শনিবার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কাছে আর্জি জানালেন পশ্চিমবঙ্গের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বেঙ্কাইয়া সেই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করেননি। তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সরকার। পুরমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের এই প্রস্তাব লিখিত ভাবে দিল্লির কাছে পাঠানো হবে।
দেশের ১০০টি শহরকে স্মার্ট সিটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র। তার আগে স্মার্ট সিটি-র মর্যাদা পাওয়ার একটি মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই মাপকঠিতে বলা হয়েছিল, স্মার্ট সিটি হবে এমন শহরগুলি, যেখানে জনসংখ্যার অনুপাতে স্বনির্ভরতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বসবাসের সুস্থ পরিবেশ রয়েছে। যেখানে পানীয় জলের অভাব নেই, রাস্তাঘাট যান চলাচলের পক্ষে মসৃণ। নেই বিদ্যুৎ-ঘাটতি। শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য রয়েছে আধুনিক বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা। শহরের নিজস্ব আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা থাকার কথাও বলা হয়েছিল।
এই মাপকাঠি মেনে পশ্চিমবঙ্গের ওই চারটি শহর ‘পাশ নম্বর’ আদায় করতে পেরেছিল। স্মার্ট সিটিতে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধে ও পরিকাঠামোর কথা কেন্দ্র বলেছে, আসানসোল-হলদিয়ার মতো ছোট শহরে সেগুলি রূপায়ণ করা যত সহজ, মহানগরে ততটা নয়। কলকাতা কলেবরে অনেক বড়, তার জনসংখ্যাও বেশি। ফিরহাদ জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নবান্নের তরফে স্মার্ট সিটির যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল, তাতে কলকাতার নাম রাখা হয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। সে কথা মনে রেখেই যাতে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দিয়ে কলকাতাকে যাতে স্মার্ট সিটির তকমা দেওয়া হয়, বেঙ্কাইয়ার কাছে সেই আর্জিই জানানো হয়েছে।
শনিবার নিউ টাউনের নজরুল তীর্থে স্মার্ট সিটি নিয়ে এক কর্মশালায় হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। ছিলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বা়ঞ্চলের ১৩টি রাজ্যের সরকারি প্রতিনিধিরা কর্মশালায় অংশ নেন। সেখানেই রাজ্যের নতুন প্রস্তাবের কথা জানান ফিরহাদ।
স্মার্ট সিটি হতে গেলে কী কী করণীয়, কর্মশালায় তা বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেন বেঙ্কাইয়া। তিনি জানান, শহরকে ‘স্মার্ট’ করার জন্য প্রথমে একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট বা ডিপিআর তৈরি করতে হবে। ডিপিআর তৈরির টাকা দেবে কেন্দ্র। আপাতত দেশের ১০০টি শহরকে স্মার্ট সিটির জন্য চিহ্নিত করা হলেও প্রথম পর্যায়ে ২০টি শহরকে বেছে নেওয়া হবে। সেই বাছাই হবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। কোন ২০টি শহর প্রথম পর্যায়ের জন্য বিবেচিত হবে, তা ঠিক হবে ডিসেম্বরের মধ্যে।
এই প্রকল্পের সফল রূপায়ণের জন্য তৈরি স্মার্ট সিটি মিশনের তরফে জানানো হয়েছে, চিহ্নিত প্রতিটি শহরকে বছরে ১০০ কোটি করে পাঁচ বছরে মোট ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এ দিন কর্মশালায় ফিরহাদ বলেন, ‘‘যে সব শহরে এক লক্ষের নীচে জনসংখ্যা রয়েছে, সেখানে উন্নয়নের জোয়ার আনা দরকার। তা না হলে মানুষের বড় শহরের দিকে চলে যাওয়ার যাওয়ার ঝোঁক বাড়বে। বড় শহরের উপর চাপ বাড়বে। মার খাবে ছোট শহরের উন্নয়ন।’’ এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কর্মশালায় নিউ টাউনের প্রশংসা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ফিরহাদ জানান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন নিউ টাউনকে মডেল হিসেবে রেখে তার থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই শহর তাঁর খুব ভাল লেগেছে। ফিরহাদ জানান, ফেরার পথে ইকো পার্কে গ্লাস হাউস দেখে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, পরের বার কলকাতায় এলে তিনি নিউ টাউনে থাকবেন এবং গ্লাস হাউসে বৈঠক করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy