মমতাকে নিয়ে শুভেন্দু-শোভন যুদ্ধ। ফাইল চিত্র।
নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করায় শুভেন্দু অধিকারীকে পাল্টা হুঁশিয়ার দিলেন তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী শোভন চট্টোপাধ্যায়। ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে শোভন জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামের ঘটনাটি যে দিন ঘটে, সে দিন তিনি ছিলেন তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে। শান্তিকুঞ্জ অর্থাৎ শুভেন্দুর কাঁথির বাড়ি থেকে নন্দীগ্রামে যাওয়ার যে দাবি শুভেন্দু করেছেন, তা অসত্য। শোভন বলেন, ‘‘রাজনীতি করতে নেমে ইতিহাসকে বিকৃত করছেন উনি। এটা কখনওই মেনে নেব না। আমি ওই আক্রমণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলার মানুষ জানেন সে দিন কী হয়েছিল।’’
রবিবার লক্ষ্মীপুজোয় অধিকারী পরিবারের আমন্ত্রণ পেয়ে কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’-এ এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁকে বাড়িতে স্বাগত জানাতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আক্রমণ করেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বাড়ির সামনে হাজির হওয়া সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা যে বাড়ি থেকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন..., এই বাড়িতে (শান্তিকুঞ্জ) ছিলেন উনি। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের ঘটনা ঘটেছিল। ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ এই বাড়ির (শান্তিকুঞ্জ) ছাদে ছিলেন রাতে। নন্দীগ্রাম না হলে দিদি তো .... মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না।’’
শোভন আপত্তি তুলেছেন এই ব্যাখ্যা নিয়েই। তিনি বলেছেন, ‘‘২০০৭ সালের ১৪ মার্চ না ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ তা নিয়েই ধন্দে উনি। ঘটনাটা ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ। যে দিন নন্দীগ্রামে গুলি চলে, সে দিন আমি উপস্থিত ছিলাম মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে। তৃণমূল ভবনে। সেটা নিশ্চয়ই শান্তিকুঞ্জ ছিল না। আমার মনে আছে মমতা ব্যানার্জি চোখে জল...। ঝরঝর করে কাঁদছেন। বললেন, ‘ওরা সবাইকে মেরে ফেলল কানন (শোভনকে এই নামেই ডাকতেন তৃণমূলনেত্রী), চল আমরা নন্দীগ্রামে যাই।’ বিকেল সাড়ে ৩টে -৪টের সময় আমরা রওনা হয়েছিলাম।’’ শুভেন্দুর মন্তব্যের জের টেনে শোভন জানতে চেয়েছেন, সেই দিন শুভেন্দু কোথায় ছিলেন! আর তিনি এমন ভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করছেনই বা কী করে?
ফেসবুকে সে দিনের যাত্রাপথের কাহিনিও শুনিয়েছেন শোভন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে আছে রাত সাড়ে দশটার সময় আমরা কোলাঘাট থেকে চণ্ডীপুরের দিকে বাঁক নিতেই আমাদের গাড়ি আটকে দেওয়া হল। সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়ি। দেখলাম, চারপাশ থেকে আমাদের ঘিরে ধরেছে বহু মানুষ। তাঁদের হাতে গাঁইতি, কোদাল। তারা বলছে, পুলিশ, মিডিয়া এমনকি সহকর্মীদেরও যেতে দেওয়া হবে না। একমাত্র মমতা ব্যানার্জি যেতে পারেন। এ দিকে ওঁরও জেদ, ‘আমি নন্দীগ্রাম যাবই।’ সে দিন আমিই এগিয়ে গিয়েছিলাম। পরিস্থিতি দেখে শুনে ওঁকে বলেছিলাম, ‘আপনাকে ওরা মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। তাই কাউকে যেতে দেবেন না বলছে। আপনি ফিরে চলুন।’ সে দিন শুভেন্দু চণ্ডীপুরে আসেননি কেন? কোথায় ছিলেন তিনি? নিজেকে তিনি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হোতা বলে দাবি করেন!’’
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে মমতার নন্দীগ্রাম নিয়ে আন্দোলনের পরেই বিরোধী দল হিসাবে তৃণমূলের উত্থান। সেই আন্দোলনে মমতার সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা শোভন। ছিলেন শুভেন্দুও। বস্তুত সেই সেই আন্দোলনের পরই মমতা শুভেন্দুকে নন্দীগ্রামের টিকিট দিয়ে সেখানকার বিধায়ক করেন বলে ফেসবুকের ভিডিয়োতে জানিয়েছেন শোভন। বলেছেন, ‘‘মমতাই ওঁকে মন্ত্রী করে নিয়ে আসেন নন্দীগ্রাম থেকে।’’ নেতা হিসেবে শুভেন্দু আদতে মমতারই হাতে গড়া বলে জানিয়ে শোভন পুরনো সহকর্মীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমি-আপনি সব ওঁরই হাতে তৈরি। মনে রাখবেন, সৃষ্টি যদি স্রষ্টাকে অপমান করেন, তবে স্রষ্টার কিছু যাবে আসবে না। মানুষ সব দেখছেন তাঁরাই বুঝিয়ে দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy