Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
narada case

‘সব সত্যি বলে দিয়েছি’, বললেন মির্জা, মুখোমুখি জেরায় নিশানায় ছিলেন মুকুলই

সোমবার মির্জাকে আদালতে ফের হাজির করানো হয়। আর সেখান থেকে বেরনোর সময়েই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তিনি।

মুকুল রায় ও সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

মুকুল রায় ও সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:০১
Share: Save:

আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা আসলে মুকুল রায়ের ‘লোক’, পুলিশ মহলে এমন গুঞ্জনই ছিল একটা সময়ে। মুকুল রায় তখন তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’। গত সাড়ে তিন বছরে নারদ-তদন্ত চলাকালীন সেই সমীকরণ একেবারেই উল্টে গিয়েছে। মুকুল এখন পদ্ম শিবিরের নেতা। আর মির্জা গিয়েছেন গারদে।

গত বৃহস্পতিবার মির্জাকে নারদ-মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। সে দিনই তারা আদালতে আর্জি জানিয়ে ওই পুলিশ কর্তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। মেয়াদ শেষ হতে সোমবার তাঁকে আদালতে ফের হাজির করানো হয়। আর সেখান থেকে বেরনোর সময়েই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মির্জা।

আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে মির্জা বললেন, “সব সত্যি কথা বলে দিয়েছি। রেকর্ড হয়েছে। ভিডিয়োগ্রাফিও হয়েছে। তদন্ত চলছে। সব জানা যাবে। আইন আইনের পথে চলবে। বাদ-বাকি আপনারা জেনে যাবেন, কী হয়েছিল! সাড়ে তিন বছর ধরে মনের ভিতর বিভিন্ন জিনিস চেপে রেখেছিলাম। সবটা বলে ফেলে এই দু’তিন দিনে আমি অনেকটা হালকা বোধ করছি।’’ জেলে যাওয়ার আগেই অবশ্য নারদ-তদন্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন বলেও এ দিন দাবি করেছেন মির্জা।

আরও পড়ুন: আগামী কাল অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন সব্যসাচী দত্ত

গত শনিবার নিজাম প্যালেসেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁদের দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। ওই জেরার সময় মির্জার সরাসরি নিশানায় ছিলেন মুকুল রায়। একে অপরের দিকে তাঁরা অভিযোগের আঙুলও তোলেন। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় দু’জনের মধ্যে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে ওই জেরা পর্ব। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, জেরার সময় মির্জা দাবি করেন, মুকুল রায়ের কথায় তিনি টাকা নিয়েছিলেন। সন্তোষ শঙ্করণ পরিচয়ে ওই স্টিং অপারেশন করেছিলেন সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। ‘মুকুলদা’ই তাঁর কাছে ম্যাথুকে পাঠিয়েছিলেন বলে মুখোমুখি জেরার সময় জানিয়েছেন মির্জা। ম্যাথুর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর তা তিনি মুকুল রায়কে এলগিন রোডের ফ্ল্যাটে গিয়ে দিয়ে এসেছিলেন বলেও দাবি করেছেন ওই পুলিশ কর্তা। যদিও মির্জার এই দাবি জেরার সময় মুকুল রায় অস্বীকার করেন বলে সিবিআই সূত্রে খবর। মুকুল সিবিআইকে জানান, কেউ অভিযোগ করতেই পারেন। তার প্রমাণ কোথায়? কারও নাম নিলেই কী দোষ প্রমাণিত হয়ে গেল? গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মির্জাকে নিয়ে এলগিন রোডে মুকুলের ফ্ল্যাটে ঘটনার পুনর্গঠনও করা হয়।

আনন্দবাজারের তরফে এ দিন মুকুল রায়কে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমিও চাই সত্যটা সামনে আসুক। কোনও রকম অনৈতিক কাজে আমি জড়িত নই। ভিডিয়োতে আমাকে কেউ টাকা নিতে দেখেনি। কেউ কোনও অভিযোগ জানাতেই পারেন, কিন্তু তা বলে কি বিষয়টি প্রমাণ হয়ে গেল? আগে প্রমাণ হোক। সিবিআই তদন্তের স্বার্থে যত বার ডাকবে যাব।”

আরও পড়ুন: রাজীব মামলায় রায়দান স্থগিত রাখল কলকাতা হাইকোর্ট, ঝুলেই রইল আগাম জামিনের আবেদন

এ দিন ম্যাথু স্যামুয়েলকেও ঘটনার কথা জানতে ফোন করা হয়। মির্জার এই দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি তো আগেই এ সব সিবিআইকে জানিয়েছি। অনেক তথ্য দিয়েছি। এখন দেখার তদন্ত কোন পথে এগোয়।”

সোমবার হেফাজতের মেয়ার শেষ হওয়ার পর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হয় মির্জাকে। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এ দিন সিবিআই আর মির্জাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানায়নি। কারণ গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই মুহূর্তে তাঁকে আর জেরা করার প্রয়োজন নেই। মির্জা যা তথ্য দিয়েছেন, তা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। প্রয়োজন পড়লে ফের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছে সিবিআইয়ের একটি সূত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narada Case Mukul Roy SHM Mirza CBI IPS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE