রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ‘উন্নয়ন-বিরোধী’ বলে দাগিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে যত দিন উন্নয়ন বিরোধী সরকার থাকবে, তত দিন কেন্দ্রের উন্নয়ন প্রকল্পগুলি গতি পাবে না।’’
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের বিরোধ চলছে কিছুদিন ধরে। মমতার অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প নকল করে কেন্দ্র নাম কিনছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ টাকাও দিল্লি কমিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। কৃষক-বিমার ক্ষেত্রেও প্রিমিয়ামের সব টাকা রাজ্য নিজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শনিবার দুর্গাপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এই সবের দিকে ইঙ্গিত করেই মমতাকে ‘উন্নয়ন-বিরোধী’র তকমা দেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ভারত গড়তে উদ্যোগী হয়েছে। এখানে পশ্চিমবঙ্গের বড় ভূমিকা আছে। বাজেটেও এ রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে অনেক কিছু রাখা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এখানকার সরকার উন্নয়নে আগ্রহী নয়।’’ এর পরেই মোদীর কটাক্ষ, ‘‘যে সব প্রকল্পে সিন্ডিকেটের ভাগ নেই, কোনও ক্ষীর নেই, সেখানে তৃণমূল সরকার হাত লাগায় না— দুনিয়া এই সত্য জানে।’’ অটল পেনশন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি যোজনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আবেদন করেন, ‘‘এ রাজ্যের যাঁরা এখনও এই প্রকল্পগুলিতে ঢোকেননি, তাঁদের বলছি, ঢুকে পড়ুন। কারণ, এগুলো কেন্দ্রের প্রকল্প। এখানে সিন্ডিকেটের ভয় নেই।’’
আয়ুষ্মান প্রকল্প প্রসঙ্গে মোদীর অভিযোগ, ‘‘১৭ কোটি মানুষ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ পেত। কিন্তু এ রাজ্যের গরিব-বিরোধী সরকার তা থেকে হাত তুলে নিয়েছে। এর চেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা, অসংবেদনশীলতা আর কী হতে পারে?’’ প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে যে সব গরিব মানুষের হৃৎপিণ্ড বা হাঁটুর অপারেশনের মতো বড় চিকিৎসা হয়েছে, তাঁদের মুখ ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছে, ওটা মোদীর প্রকল্প। বাংলার গরিবের মুখে মোদীর নাম শুনে ‘ঘুম ছুটে গিয়েছে দিদি’র। তাই রাজ্য সরকার ওই প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছে।’’ এই প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এমন নির্দয় সরকারের আর এক মুহূর্তও থাকার অধিকার নেই।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ রাজ্যে বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়। অনেক আগে থেকেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে টাকা দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পেও ওরা আমাদের টুকলি করতে চাইছে। কিন্তু ঠিক ভাবে টুকলি করতেও পারছে না।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘কৃষিঋণ মকুব নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের অপমান করেছেন। কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধী দলকে আক্রমণ করেই মোদী সাড়ে চার বছর চালিয়েছেন। রাহুল গাঁধী বুঝিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে শুধু কৃষক স্বার্থই সুরক্ষিত করবে না, আইন এনে ন্যূনতম রোজগারের নিশ্চয়তা সকলকে দেবে।’’