সিপিএমের প্রবীণ নেতা বিমান বসু পতাকার দড়িতে টান দিতে প্রথমে গেরুয়ার বদলে সবুজ উপরে উঠে যায়। দেখতে পেয়েই তড়িঘড়ি এগিয়ে আসেন মহম্মদ সেলিম ও সুজন চক্রবর্তী। ঠিক করা হয় ভুল। নিজস্ব চিত্র
স্বাধীনতার ৭৫ বছরে প্রথম বার জাতীয় পতাকা উঠল রাজ্য সিপিএমের সদর দফতরে। পতাকা তুলতে গিয়ে বাধল বিভ্রাটও! দলের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু পতাকার দড়িতে টান দিতে শুরু করার পরে দেখা যায়, গেরুয়ার বদলে সবুজ উপরে চলে যাচ্ছে। দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই হস্তক্ষেপ করেন দলের দুই নেতা মহম্মদ সেলিম ও সুজন চক্রবর্তী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ঠিকমতোই পতাকার উত্তোলন সমাধা হয়েছে। একে বহু বিলম্বে স্বাধীনতা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত এবং তার উপরে জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে হোঁচট— এই দুইয়ের জেরে নানা কটাক্ষ থেকে রহাই পায়নি সিপিএম!
বিমানবাবু অবশ্য বিভ্রাট নিয়ে মাথা ঘামাতে চাননি। স্বাধীনতার পরে পরে গড়িয়াহাটের বাসিন্দা বিমান মনে রাখার মতো প্রথম রাজনৈতিক মিছিল দেখেছিলেন রাসবিহারীর মোড়ে। তখন তিনি হাফপ্যান্টে, নেহাতই বালক। দেখেছিলেন এক দল লোক লাল ঝান্ডা নিয়ে দৌড়চ্ছে, তাদের মুখে ‘আজাদি’ এবং ‘ঝুটা হ্যায়’ কথাগুলো শুনেছিলেন। মিছিলকারীদের পিছনে তাড়া করছিল পুলিশ। সে দিনই প্রথম প্রশ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে দাদাদের কাছে জেনেছিলেন, ওটা ছিল কমিউনিস্টদের মিছিল। সাত দশক আগে ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’-এর মিছিল দেখে যাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সূচনা, এখন সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য, অশীতিপর সেই বিমানের হাত দিয়েই দলের রাজ্য দফতরে প্রথম বার জাতীয় পতাকা উড়ল। সময়ের মোচড় এমনই!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি এ বার স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার ডাক দিয়ে এবং স্বাধীনতার আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে বছরভর কর্মসূচি নিয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে রবিবার জাতীয় পতাকা তুলে সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষার শপথ পাঠ করিয়েছেন বিমানবাবু। দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদর দফতরে জাতীয় পতাকা থাকে, স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলন হয় আগে থেকেই। ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা-সহ কিছু রাজ্যেও সিপিএম তেরঙা পতাকা তুলে ১৫ অগস্ট উদযাপন করে। কিন্তু বাংলা ও কেরলের মতো বাম রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে এমন কর্মসূচি এই প্রথম। বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘এই দফতরে বছরে ৩৬৫ দিন ভোরে লাল পতাকা তোলা হয়, সন্ধ্যায় নামানো হয়। জাতীয় পতাকা এ বার তোলা হল।’’ কেরলেও জাতীয় পতাকা তুলেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদক এ বিজয়রাঘবন।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ছাদে এ দিন দুপুরে হাওয়া ছিল প্রবল। তার মধ্যেই পতাকা তোলার সময়ে বিভ্রাট ধরা পড়ে। যদিও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘পতাকা যদি উল্টো থাকত, তা হলে খুলে আবার পাল্টাতে হত। তা কিন্তু হয়নি। দু’দিকে দড়ি দিয়ে পতাকা বাঁধা থাকে। বাঁ দিক বা ডান দিকের দড়ি টানলে বোঝা যায়, কোন দিকটা উপরে যাচ্ছে। সেটা বুঝেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছে। এটাকে বিভ্রাট বলা ঠিক নয়।’’
বাম শরিকদের মধ্যে সিপিআই স্বাধীনতা দিবস পালন করে। রাজ্য দফতর ভূপেশ ভবনের পাশাপাশি এ দিনও যেমন ঢাকুরিয়ায় দলের আঞ্চলিক পরিষদের উদ্যোগে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনে জাতীয় পতাকা তোলেন প্রাক্তন ফুটবলার বিক্রমজিৎ দেবনাথ। পরে ময়দান এলাকায় বামফ্রন্টের ডাকে দেশের অখণ্ডতা ও গণতন্ত্র রক্ষার শপথ গ্রহণ কর্মসূচি পালিত হয়। দেশভাগের ‘আতঙ্ক’ মনে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানকে বিঁধে সেখানে সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য সেলিম বলেন, ‘‘দেশভাগের যন্ত্রণা আমরা বহন করছি। কিন্তু সাম্প্রদায়িক ভাবনা উস্কে দেওয়ার জন্যই এখন আলাদা করে ‘হরর ডে’-র কথা বলা হচ্ছে। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অশংগ্রহণ করেনি, বিদেশি শাসককে মুচলেকা দিয়েছে এবং রাজসাক্ষী হয়েছে, তাদের উত্তরসূরীরাই এখন দেশ শাসন করছে!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy