Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
National Green Tribunal

রাজ্যকে সতর্ক করল পরিবেশ আদালত

রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘সবুজায়নের দিকে নজর রেখেই কলকাতা বা শহর লাগোয়া বিভিন্ন স্মার্ট সিটি গড়ে তুলছে রাজ্য সরকার।’’

জাতীয় পরিবেশ আদালত।

জাতীয় পরিবেশ আদালত। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৩০
Share: Save:

উন্নয়নের ‘ধুলোয়’ ক্রমেই ধূসর হয়ে পড়ছে সবুজায়ন! দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও যে সেই তালিকায় অন্যতম নাম, তা জানিয়ে রাজ্যকে সতর্ক করল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

আকাশ ছোঁয়া আবাসন, প্রশস্ত রাস্তাঘাট, বাহারি ইমারত কিংবা একের পর এক উড়ালপুলে সমৃদ্ধ ‘শহুরে উন্নয়ন’ আর স্মার্ট সিটি-র প্রসারে প্রগতির ছায়া থাকলেও আড়ালে যে ক্রমান্বয়ে সবুজ-সাফ হয়ে চলেছে পরিসংখ্যান তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। কাগজে-কলমে উন্নয়নের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণের উদ্যোগের উল্লেখ থাকলেও রাজ্যে সবুজায়ন যে যথাযথ নয়, তা-ও মেনে নিচ্ছেন রাজ্য বন দফতরের একাধিক কর্তা। ছবিটা যে জাতীয় পরিবেশ আদালতেরও নজর এড়ায়নি, রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে সম্প্রতি পাঠানো সতর্ক বার্তায় সে কথাই জানিয়েছেন ওই আদালতের চার বিচারপতির বেঞ্চ। যেখানে স্পষ্টই জানানো হয়েছে, নিছক নিয়মরক্ষার নয়, দূষণ রুখতে ও প্রকৃত সবুজায়নের স্বার্থে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এবং সরকার পোষিত নিগম ও পর্ষদগুলিও যেন বিশেষ সতর্ক থাকে।

রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘সবুজায়নের দিকে নজর রেখেই কলকাতা বা শহর লাগোয়া বিভিন্ন স্মার্ট সিটি গড়ে তুলছে রাজ্য সরকার।’’ তবে সে আশ্বাসে অবশ্য ভ্রুকুটি দূর হচ্ছে না কলকাতা ও তার লাগোয়া এলাকার নগর-উন্নয়ন সংক্রান্ত দু’টি সাম্প্রতিক রিপোর্টে।

দুই পরিবেশ গবেষক অশ্বিনী সাঙ্খালা এবং ভাস্বতী রায়চৌধুরী পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন)-এর কাছে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন— ‘আর্বান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিডিন্ ডিমলিশন’। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে— উন্নয়নের নামে রাজ্যে যে ‘কর্মযজ্ঞ’ চলছে তা কার্যত সবুজায়নকে ব্রাত্য রেখে। কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুর এমনকি খড়্গপুরের মতো শহরে দূষণের মাত্রা ‘বিপজ্জনক’ স্তরে। কলকাতা লাগোয়া নিউটাউনের মতো স্মার্ট সিটিতেও সবুজায়নের নামে যে গাছ লাগানো হয়েছে তা নিছকই বাহারি গাছ, তাকে বৃক্ষরোপণ বলা যায় না। বনায়নের পরিভাষায় যার ৮০ শতাংশই ‘টল ট্রি’ বা বড় গাছ নয়। দূষণ রোধে বাতাসে ধূলিকণা বা ডাস্ট পার্টিকল্ ধরে রাখার ক্ষমতা যে সব গাছের প্রায় নেই।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন-অধিকর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সারা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে তাতে আপাত একটা চাকচিক্য থাকলেও আড়ালে পরিবেশের ভারসাম্যটাই নষ্ট হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, সবুজ উচ্ছেদ করে বা জলাজমি বুজিয়ে যে উন্নয়ন তার প্রাথমিক শর্ত বৃক্ষরোপণ বা জলাশয় রক্ষা কোনওটাই কার্যকর করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে শহুরে বনায়ন বা আরবান ফরেস্ট্রি সংক্রান্ত কোনও স্পষ্ট নীতি আজও নেই।’’

প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে পরিবেশবিদ ডঃ অর্ণব গুহের কথায়, ‘‘পূর্ব কলকাতার বাইপাস লাগোয়া এলাকায় জলাজমি ভরাট করে চলছে নির্বিচারে বহুতল তৈরির ধুম। বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় একটি ঠান্ডা পানীয় তৈরির কারখানার বর্জ্য আবাসিক এলাকার ভূগর্ভস্থ জলের মান নষ্ট করে ফেলেছে।’’ তাঁর দাবি, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মানা ভবিষ্যতের জন্যই জরুরি। না হলে উন্নয়নের ‘ধুলোয়’ ঢাকা পড়বে আগামী দিন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Green Tribunal West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE