যৌন হয়রানির প্রভাব যেন শিশুর ভবিষ্যত জীবনে না পড়ে, তা দেখতে অভিযোগ জমা নেওয়ার নতুন পদ্ধতি চালু করেছে ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস।’ এখানে অভিযোগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওর মাধ্যমে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে কমিশন। শিশুটিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে যা হয়েছে তাতে তার কোনও ‘দোষ’ নেই। স্কুলে স্কুলে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা শিবিরেরও আয়োজন শুরু করা হচ্ছে।
পুলিশের খাতা হোক বা স্কুলের রেকর্ড দেখা যাচ্ছে, শিশুদের উপর যৌন হয়রানির অভিযোগ বাড়ছে। আবার বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ হচ্ছেও না। সন্তানের ভবিষ্যতে যে কোনও রকম অস্বস্তি এড়িয়ে যেতে অভিযোগ করতে পিছোতে দেখা যায় অভিভাবকদেরও। গত বছর রাজ্যের শিশু বিকাশ, নারী উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ দফতরের তরফে প্রতি ব্লকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শিবিরের আয়োজন করা হয়। ‘সামাজিক সুরক্ষা সচেতনতা শিবির’ শীর্ষক এই শিবিরে হাজির হন বিচার বিভাগ, মানবাধিকার কমিশনের কর্তা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।
যৌন হয়রানি বা হেনস্থা ঠিক কি, তা রুখতে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কিভাবে পদক্ষেপ করতে হবে এ সব শিবিরে পড়ুয়াদের জানানো হয়। আলোচনায় উঠে আসে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন ঘটনায় জড়িত থাকেন আত্মীয়-স্বজনেরাই। ফলে অনেক সময়েই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না। আবার শিশুটি ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারে না অনেক ক্ষেত্রে। এমন পরিস্থিতিতে এক সময় অবসাদের শিকার হতে পারে শিশুটি। বড় হওয়ার পরেও আত্মবিশ্বাসের অভাব, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া প্রবণতা দেখা দিতে পারে বলে জানান ওই শিবিরে হাজির কর্তারা।
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর ২০১২ সালে ১৮ বছরের কম বয়েসীদের উপরে যৌন হয়রানি আটকাতে ‘প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ (পকসো) আইন আনে। অভিযোগের দ্রুত তদন্ত করে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছে এই আইন। এ বার অনলাইনে দ্রুত যৌন হয়রানির অভিযোগ নথিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে ‘পকসো ই-বাটন’ পরিষেবা। এই পদ্ধতিতে ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস’-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘পকসো ই-বাটন’ ক্লিক করতে হবে। তাহলেই একটি অ্যানিমেশন সিনেমা শুরু হয়ে যাবে। সেখানে দেখানো হয়েছে, যৌন হয়রানির যে কোনও ঘটনার জন্য নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে কমিশন। এরপর ফর্ম পূরণ করে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে ‘সাবমিট’ করতে হবে।
‘পকসো ই-বাটন’ পরিষেবা সম্পর্কে স্কুল পড়ুয়াদের অবহিত করতে সম্প্রতি স্কুলে স্কুলে চিঠি পাঠিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সচেতনতা শিবির করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুর্গাপুরের বেনাচিতির রামকৃষ্ণপল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা বক্সি বলেন, ‘‘যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে কারও সাহায্য ছাড়াই সহজে অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’’ নতুনগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ চট্টোরাজও বলেন, ‘‘যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার পড়ুয়ারা গুটিয়ে যায়। এই উদ্যোগে স্মার্টফোন থেকেও অভিযোগ দায়ের করা যাবে।’’ সঙ্গে ভিডিওটি পড়ুয়াদের মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে বলেও তাঁদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy