Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Heavy Rainfall

নাছোড়বান্দা বৃষ্টি, আশঙ্কা উস্কে দিচ্ছে সাগরের হবু নিম্নচাপ

আবহাওয়া দফতর অবশ্য এখনই ঘূর্ণিঝড়ের কোনও রকম সতর্কতা দিতে নারাজ। তাদের মতে, ঘূর্ণিঝড় হবে কি না, তৈরি হওয়ার পর কোথায় আছড়ে পড়বে তা এত আগে বলা সম্ভব নয়।

An image of Rain

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩০
Share: Save:

ক্যালেন্ডারে শরৎ কাল শুরু হলেও রাজ্যে নাছোড়বান্দা বৃষ্টির দাপট চলছেই। এরই মধ্যে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে, ভরা শরতেও কি কোনও দুর্যোগ ঘনিয়ে আসবে? কারণ, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর নাগাদ উত্তর আন্দামান সাগর এবং লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ দানা বাধতে চলেছে। সেটি তার পর উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে আসবে। বঙ্গোপসাগরে এসে নিম্নচাপটি ক্রমান্বয়ে শক্তিও বাড়াতে পারে। সেই শক্তিবৃদ্ধি করে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনাতৈরি হয়েছে।

আবহাওয়া দফতর অবশ্য এখনই ঘূর্ণিঝড়ের কোনও রকম সতর্কতা দিতে নারাজ। তাদের মতে, ঘূর্ণিঝড় হবে কি না, তৈরি হওয়ার পর কোথায় আছড়ে পড়বে তা এত আগে বলা সম্ভব নয়। শনিবার তারা জানিয়েছে, ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তর আন্দামান সাগর এবং লাগোয়া পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হবে। সেটি আন্দামান সাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে সরে এলে শক্তিবাড়াতে পারে।

আবহবিদদের অনেকে এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভরা বর্ষায় ঘূর্ণিঝড় দানা বাধে না। কিন্তু বর্ষাকালের অন্তিম পর্বে (তখন মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী থাকে না) ঘূর্ণিঝড় তৈরিতে কোনও বাধা থাকে না। অক্টোবর মাসে এর আগেও ঘূর্ণিঝড় দেখা দিয়েছে। ২০১৩ সালে অক্টোবরের মাঝামাঝি ঘূর্ণিঝড় পিলিন ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল। প্রসঙ্গত, এ বার গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষা গোড়া থেকেই দুর্বল। এক সময়ে গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ৪০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে অগস্ট মাস থেকে কিছুটা দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে। মৌসম ভবনের হিসাবে, সেপ্টেম্বর মাসে গাঙ্গেয় বঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে ৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ১ জুন থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে ২২ শতাংশ ঘাটতি আছে। গোটা রাজ্যের নিরিখে ঘাটতি ১২ শতাংশ। তবে সামান্য হলেও উত্তরবঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

বস্তুত, গত কয়েক দিন ধরে মৌসুমি অক্ষরেখা এবং নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশির ভাগ জেলাতেই জোরালো বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির দাপটতুলনায় বেশি। প্রশাসনের খবর, জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তা ও জলঢাকা নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি। আজ, রবিবারও উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং ডুয়ার্সে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। গাঙ্গেয় বঙ্গে অবশ্য ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। এ বার বৃষ্টি কম হওয়ায় ‘বন্যাপ্রবণ’ বলে পরিচিত ঘাটালেও বন্যার আশঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতেহলদিয়ার নদী তীরবর্তী টাউনশিপ এলাকা, পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাট ব্লকের নিচু এলাকাগুলিতে জল জমেছে। বাঁকুড়ার নদ-নদীতে অবশ্য জলস্তর বেড়েছে। বাঁকুড়া-২ ব্লকের মানকানালিতে মগড়া-মানকানালি রাস্তায় গন্ধেশ্বরী নদীর উপরে থাকা কজ়ওয়ে উপচে শুক্রবার রাতে থেকে জল বইছে। কজ়ওয়ের উপরে জলের তীব্র স্রোত থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে যাত্রিবাহী বাস, সাইকেল, বাইক যাতায়াত করছে। মেজিয়ার রামচন্দ্রপুরে শনিবার জলে ডোবা সেচ খালের কজ়ওয়ে পার হতে গিয়ে ভেসে গেল একটি ট্রাক্টর। বিডিও (মেজিয়া) অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ট্রাক্টরটি ভেসে গিয়েছে। তবে কেউ জখম হননি।’’

অন্য দিকে, প্রতি বছরের মতো এ বারও নদীবাঁধ নিয়ে আশঙ্কিত উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ২, শেয়ারা রাধানগর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। তবে সন্দেশখালি-১ ব্লকের বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “বাঁধের দিকে আমাদের নজর আছে। সেচ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।” টানা বৃষ্টির জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং গার্লস স্কুলপাড়া, তাঁতকলপাড়া, নন্দনপল্লি, মিঠাখালি এলাকায় জল জমেছে। অন্য দিকে, বাসন্তীর পালবাড়ি, ভরতগড়, নারায়ণতলা গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। গোসাবার নদীগুলিতে জলের পরিমাণ যথেষ্ট বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় অনেকটা উপরে উঠে এসেছে জল। তবে বাঁধ উপচে গ্রামে কোথাও জল ঢোকেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE