Advertisement
E-Paper

সীমান্ত ডিঙোলেও নিরস্ত্রকে গুলি নয়: কমিশন

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলে অর্থাৎ অনুপ্রবেশ করলে আইনের চোখে সেটা অপরাধ ঠিকই। আইন তার শাস্তির বিধানও দিয়েছে। কিন্তু অস্ত্রহীন অবস্থায় কেউ সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করলে তাঁকে কোনও ভাবেই গুলি করে মেরে ফেলা যায় না বলে রায় দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৪

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলে অর্থাৎ অনুপ্রবেশ করলে আইনের চোখে সেটা অপরাধ ঠিকই। আইন তার শাস্তির বিধানও দিয়েছে। কিন্তু অস্ত্রহীন অবস্থায় কেউ সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করলে তাঁকে কোনও ভাবেই গুলি করে মেরে ফেলা যায় না বলে রায় দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি খাতুনের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিতে গিয়ে কমিশন এ কথা জানিয়ে দিয়েছে। সাড়ে চার বছর আগে কোচবিহারের চৌধুরীহাট সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরোতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে মারা যায় ফেলানি। দীর্ঘ আইনি লড়াই চালায় তার পরিবার। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ছ’মাসের মধ্যে ফেলানির পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া কী ভাবে এগোচ্ছে, ছ’সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সেই কাগজপত্র পেশ করতে হবে কমিশনের কাছে।

ফেলানি-হত্যা মামলা নিয়ে দুই পড়শি দেশের মধ্যে দীর্ঘ চাপান-উতোর চলে। কমিশন সূত্রের খবর, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিরাজুর রহমান এই ব্যাপারে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তারা ২০১৪ সালের অগস্টেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেই সুপারিশপত্র পেয়ে কমিশনের কাছে বিএসএফের একটি রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেলের পাঠানো সেই রিপোর্টে বলা হয়, ফেলানি তার পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বেআইনি ভাবে ভারতে বসবাস করছিল। সে পরিচারিকার কাজ করত দিল্লিতে। বাংলাদেশে তার বিয়ে ঠিক হওয়ায় ২০১১ সালের জানুয়ারি বাবা ও মামার সঙ্গে সে বেআইনি ভাবেই সীমান্ত পেরোতে গিয়েছিল। বাবা ও মামা ও-পারে ঢুকে পড়েন। তার পরে ফেলানি বেড়া টপকাতে যায়। তাকে আইন ভেঙে সীমান্ত পেরোতে দেখেই বিএসএফ গুলি চালায়। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণ দিলে অনুপ্রবেশে মদত দেওয়া হচ্ছে বলে সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাবে। সীমান্তরক্ষীদের মনোবলও ধাক্কা খাবে বলে কমিশনের কাছে পাঠানো রিপোর্টে যুক্তি দেখিয়েছিলেন বাহিনীর ডিজি।

বিএসএফের সেই রিপোর্ট খারিজ করে কমিশন সম্প্রতি জানিয়ে দেয়, কোনও ভাবেই নিরস্ত্র ব্যক্তিকে গুলি করা যায় না। খোদ বিএসএফ-কর্তৃপক্ষ ২০০৫-এ নির্দেশিকা জারি করে বলেছিলেন, কেউ অস্ত্র-সহ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তবেই সীমান্তরক্ষী বাহিনী অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। নিরস্ত্র অবস্থায় কোনও মহিলা বা শিশু সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করলে তাঁকে আটক করা যেতে পারে। কিন্তু তাঁকে রোখার জন্য কোনও মতেই গুলি ছোড়া যাবে না।

কমিশনের পর্যবেক্ষণ, ফেলানির ক্ষেত্রে বিএসএফ-কর্তৃপক্ষের সেই নির্দেশিকা মানা হয়নি। ওই কিশোরী সীমান্ত ডিঙোনোর চেষ্টা করছিল ঠিকই। কিন্তু তার কাছে কোনও অস্ত্র ছিল না। তা সত্ত্বেও অমিয় ঘোষ নামে বিএসএফের এক কনস্টেবল তাকে লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিলেন। এবং তিনি মোটেই আত্মরক্ষার তাগিদে গুলি ছোড়েননি। কারণ, ফেলানির দিক থেকে সশস্ত্র আক্রমণের কোনও আশঙ্কাই ছিল না। নিতান্ত নিরস্ত্র অবস্থায় কাঁটাতারের বেড়া টপকানোর সময়েই তার গায়ে গুলি লাগে। এবং ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেও মেয়েটির দেহ সেই বেড়ায় ঝুলছিল।

ঘটনার পরে অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ‘জেনারেল সিকিওরিটি ফোর্স কোর্ট’-এ বিচার শুরু করেন বিএসএফ-কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেই বিশেষ আদালত অমিয়কে নির্দোষ বলে ঘোষণা করে। ফেলানির পরিবার তা মানতে চায়নি। তাই নতুন করে বিচারের ব্যবস্থা হয় গত জুলাইয়ে। কিন্তু সেখানেও কনস্টেবলকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে আগের রায় বহাল রাখা হয়।

ভারত-বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এবং অন্যান্য সংগঠন সেই রায় মেনে নিতে পারেননি। তাই বিশেষ আদালতের দ্বিতীয় রায়ের পরে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এ দেশের জাতীয় কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক আধিকারিক জানান, ফেলানিকে নিরস্ত্র অবস্থায় যে-ভাবে মারা হয়েছে, তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে গুলি না-চালিয়ে অভিযুক্তকে রোখার চেষ্টা করা বা তাকে আটক করা যেতে পারে। তাতে অনুপ্রবেশকে কোনও ভাবেই মদত দেওয়া হয় না। ফেলানির ক্ষেত্রে প্রথমে সুপারিশের আকারেই ক্ষতিপূরণের কথা বলেছিল কমিশন। এ বার তারা জানিয়েছে, সময়সীমার মধ্যে ওই টাকা দিতেই হবে মেয়েটির পরিবারের হাতে।

felani murder national human rights commission unarmed people border crossing firing cross border
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy