Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

বাজির আড়ালে কি বিস্ফোরক, বাজারে গোয়েন্দারা

দীপাবলির আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সতর্কবার্তা প্রতি বছরই আসে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে, এ বার সেই সাবধানবাণী আরও সুনির্দিষ্ট। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মানচিত্রে রাজ্যের অন্তত ৬টি জেলার ১৩টি বাজি প্রস্তুতকারক এলাকাকে চিহ্নিত করে এ বার বাড়তি পুলিশি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি।

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

দীপাবলির আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সতর্কবার্তা প্রতি বছরই আসে।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে, এ বার সেই সাবধানবাণী আরও সুনির্দিষ্ট।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মানচিত্রে রাজ্যের অন্তত ৬টি জেলার ১৩টি বাজি প্রস্তুতকারক এলাকাকে চিহ্নিত করে এ বার বাড়তি পুলিশি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি।

রাজ্যকে বার্তা পাঠিয়ে অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ক্রেতা সেজে হুগলির ডানকুনি, পাণ্ডুয়া এবং মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এলাকার বাজি তৈরির মাঝারি মাপের বেশ কিছু কারখানা ইতিমধ্যে ‘ছানবিন’ করে এসেছেন গোয়েন্দা বাহিনীর বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞরা। বড় মাপের কারখানাগুলিকে ছাড় দিয়ে ছোট-মেজ কারখানাগুলির দিকেই নজরদারি কেন, গোয়েন্দা রিপোর্টে সে কথাও খোলসা করা হয়েছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাশকতার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে জঙ্গিরা মাঝারি মাপের প্রস্তুতকারকদেরই পছন্দ করে। কারণ তারা জানে, অজ গ্রাম কিংবা শহরের প্রান্তে, গলি তস্য গলির আড়ালে ওই সব ছোট কারখানাতে পুলিশি নজরদারি থাকে কম। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার অভিজ্ঞতা, “পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ওই সব কারখানায়, আটপৌরে বাজির মশলার বদলে বিস্ফোরকের রাসায়নিক ব্যবহার করলেও নজরদারির কেউ নেই। কখনও পুলিশি হানা হলে, মফস্সল বা শহরতলির ঘিঞ্জি এলাকার ওই সব বাজি কারখানায় বিস্ফোরকের মাল-মশলা লুকিয়ে ফেলাও সহজ।”

ছোট মাপের ওই বাজি প্রস্তুতকারকদের মোটা টাকার টোপ কিংবা ‘জেহাদের’ আাদর্শে তাদের ‘মাথা মুড়িয়ে’ই এ ধরনের নাশকতার কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয় বলেই জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এ বার তাই গোয়েন্দাদের পাখির চোখে, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং অবশ্যই বর্ধমানের বেশ কয়েকটি বাজি প্রস্তুতকারক এলাকা। গত কয়েক দিনে হুগলির পাণ্ডুয়া, ডানকুনি এবং বেলডাঙার বেশ কয়েকটি নিতান্তই ছোট মাপের বাজি কারখানায় বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই ক্রেতা সেজে পা দিয়েছিলেন গোয়েন্দারা।

বেলডাঙার ফরিদপুর এবং নারকেলবেড়িয়া এলাকায় কয়েকটি গ্রামীণ বাজি তৈরির কারখানার উপরে যে তাঁদের ‘বিশেষ’ নজরদারি রয়েছে তাও জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ফরিদপুর-নারকেলবেড়িয়ার প্রসিদ্ধি তো নিছকই তুবড়ি এবং রং মশালের জন্য? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আতস বাজির আড়ালেই বিস্ফোরকের রাসায়নিক ব্যবহারের সুযোগ বেশি। তাঁদের সন্দেহ, তুবড়ি, রকেট কিংবা হাউই-এর মশলার বদলে তার মধ্যে বিস্ফোরকের রাসায়নিক ব্যবহার করা কঠিন নয়। এক বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, “এক পেটি তুবড়ির গোটা কয়েকের মধ্যে বিস্ফোরক রসায়নিক পুরে বাজারে ছেড়ে দিলে তা কি আলাদা করে চেনার উপায় আছে! ছোট ব্যবসায়ীদের দিয়ে এ কাজটাই করিয়ে নেয় জঙ্গিরা।” বেরিয়াম, সোডিয়াম, কপার, স্ট্রনশিয়াম কিংবা ফ্ল্যাশ পাউডার, ব্ল্যাক পাউডারের মতো বাজি তৈরির চেনা রাসায়নিক ও ধাতুর সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিড বা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো রাসায়নিকের মিশ্রণ ঘটিয়ে বড় মাপের বিস্ফোরক তৈরি করা কঠিন কাজ নয়। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, গ্রামীণ ওই সব প্রস্তুতকারদের দিয়ে সে কাজটা সহজেই করিয়ে নিতে পারে জঙ্গিরা।

বেলডাঙার বাজি প্রস্তুতকারকরা অবশ্য সে কথা মানছেন না। ফরিদপুর এলাকার পরিচিত বাজি ব্যবসায়ী লালু শেখ সরকারি উৎসবের বাজি তৈরির বরাত পান। তিনি বলেন, “আমরা নিতান্তই আতসবাজি তৈরি করি। এখানকার বাজি প্রস্তুতকারকরা এমন করবেন বলে মনে হয় না।” বিস্ফোরণের আঁচ অবশ্য পড়েছে কলকাতার বাজি বাজারে। উত্তর কলকাতার বাজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সঞ্জয় ভদ্র স্পষ্টই বলছেন, “খাগড়াগড়ের কথা মাথায় রেখে এ বার আমরা স্থানীয় বাজার থেকে কোনও বাজি কিনছি না। সব বাজিই আনাচ্ছি তামিলনাডুর শিবাকাশি থেকে।” প্রায় একই সুরে মধ্য কলকাতার বাজি সংগঠনের কর্তা হেমন্ত পাল বলেন, “কোনও ঝুঁকি নয়, জেলার কোনও বাজার থেকেই বাজি আনা হচ্ছে না।” তবে কি বর্ধমান কাণ্ডের খেসারত দিচ্ছেন জেলার বাজি ব্যবসায়ীরা?

মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, “অন্য জেলার কথা জানি না। তবে, বেলডাঙায় বিস্ফোরক উদ্ধার নতুন নয়। ১৯৯৭ সালে ওই এলাকা থেকে বাজেয়াপ্ত করা কিছু বিস্ফোরক আচমকা ফেটে গিয়ে বমাল উড়ে গিয়েছিল বেলডাঙা থানার মালখানা ঘর।”

সে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি কে চায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE