Advertisement
E-Paper

খাগড়াগড়-সাক্ষীদের নিরাপত্তা চায় এনআইএ

বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে রাজ্য পুলিশ বহু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এ বার ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া তথ্যপ্রমাণ তো বটেই সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। খাগড়াগড়-কাণ্ডে বাজেয়াপ্ত করা সব নথি এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মঙ্গলবার নগর দায়রা আদালতে আবেদন করেছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৪
নগর দায়রা আদালতে মঙ্গলবার মহম্মদ খালিদ।  ছবি: রণজিৎ নন্দী

নগর দায়রা আদালতে মঙ্গলবার মহম্মদ খালিদ। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে রাজ্য পুলিশ বহু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এ বার ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া তথ্যপ্রমাণ তো বটেই সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। খাগড়াগড়-কাণ্ডে বাজেয়াপ্ত করা সব নথি এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মঙ্গলবার নগর দায়রা আদালতে আবেদন করেছে তারা। আদালতের কাছে এনআইএ-র বক্তব্য, মামলার সাক্ষী এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ নিরাপদে রাখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।

তা হলে কি সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপ এবং সাক্ষীদের উপরে হামলার আশঙ্কা করছে এনআইএ? সংস্থা-কর্তারা এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে আদালতের বাইরে এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ জানান, খাগড়াগড়-কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েক সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রচুর তথ্যপ্রমাণ বাজেয়াপ্ত করেছে এনআইএ। সে সবের কিছু এনআইএ নিজেদের অফিসে রেখেছে। আবার অভিযুক্তদের ব্যবহার করা বাড়ি সিল করে সেখানেও কিছু তথ্যপ্রমাণ রাখা আছে। এনআইএ-র আইনজীবী মনে করিয়ে দিয়েছেন, ওই সব বাড়ির পাহারায় রয়েছে রাজ্য পুলিশ।

খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্ত দ্রুত শেষ করার দাবি তুলেছে বিরোধী দলগুলি। তাদের আশঙ্কা, তদন্তে যত দেরি হবে, ততই প্রকৃত অপরাধীরা গা-ঢাকা দেওয়ার সুযোগ পাবে। যদিও এনআইএ জানিয়েছে, সেই আশঙ্কা অমূলক। খাগড়াগড় তদন্তের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখতে এ দিনই কলকাতায় এসেছেন এনআইএ-র স্পেশাল ডিরেক্টর জেনারেল এন আর ওয়াসন। তদন্তকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি জানান, চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই জাল গুটিয়ে আনা যাবে। খাগড়াগড়-কাণ্ডকে তাঁরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা বোঝাতে গিয়ে ওয়াসন জানান, এই তদন্তে এ পর্যন্ত সব চেয়ে বড় দলকে মাঠে নামিয়েছেন তাঁরা। এক জন আইজি, তিন জন ডিআইজি এবং ছ’জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অফিসার সমেত সংস্থার মোট ৮০ জন অফিসার এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত।

খাগড়াগড়-কাণ্ডের পিছনে ‘র’-এর ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ করে কয়েক দিন আগেই শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওয়াসনের বক্তব্য, কোনও পুলিশ কর্তা এই প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিতেন। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মন্তব্য নিয়ে কোনও কথা বলবেন না তিনি।

খাড়গড়াগড়-তদন্তে ধৃতদের প্রকৃত পরিচয়, তাদের সঙ্গে বিদেশের যোগাযোগের বিষয়টির মতোই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি মাদ্রাসার ভূমিকাও। এ দিন ওয়াসন রীতিমতো বিস্ময়ের সুরেই জানতে চান, কী ভাবে একটা প্রায় ভগ্নপ্রায় কাঁচা বাড়ি শিক্ষাদানের কেন্দ্র হিসেবে সরকারি অনুমোদন পাচ্ছে! তাঁর কথায়, “মাটি দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করে সেটিকে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেয় এই রাজ্য? এই রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির ক্ষেত্রে কি নির্দিষ্ট নিয়ম নেই?”

ওয়াসন জানান, এখনও পর্যন্ত খাগড়াগড়-কাণ্ডে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের নিয়ে এনআইএ-র বিভিন্ন দল রাজ্যের নানা প্রান্তে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সোমবারই এনআইএ-র একটি দল রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত সাজিদকে নিয়ে বীরভূমের নানুর থানা এলাকার খুজুটিপাড়ার ভেলু শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে যায়। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত কওসরের শ্যালক কদরের সঙ্গে পরিচয় ছিল ভেলুর। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, নকল পরিচয়পত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে ভেলু। সোমবার সকালে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় একটি দোকানে সাজিদকে নিয়ে হানা দেয় এনআইএ-র দল। জানা যায়, রকেট লঞ্চার তৈরি করতে ওই দোকান থেকেই লোহার পাইপ কিনত সাজিদ।

খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু বিস্ফোরক রাজ্য পুলিশ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সরাসরি রাজ্য পুলিশের উপরে দোষারোপ না করে ওয়াসন সারা দেশে সামগ্রিক ভাবে পুলিশের মান নিয়েই হতাশা প্রকাশ করেন। এনআইএ-র কর্তাটি বলেন, “এর জন্য আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের উপরে দোষ চাপানো ঠিক হবে না। গোটা দেশের পুলিশের মান নেমে গিয়েছে। আমি তো এই বাহিনীরই অফিসার। বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের অবস্থা দেখেই তো এই কথা বলছি।”

খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত সাজিদ, আবদুল হাকিম ও খালিদ মহম্মদকে এদিন মুখ্য বিচারক মুমতাজ খানের এজলাসে হাজির করে এনআইএ। ওই তিন জন গত পাঁচদিন ধরে এনআইএ হেফাজতেই ছিল। আদালতে শ্যামলবাবু জানান, ধৃতদের সঙ্গে নিয়ে মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বর্পূণ নথি উদ্ধার এবং বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের পক্ষে এ দিনও কোনও আইনজীবী সওয়াল করেননি।

khalid khagragarh blast sajid nia witnesses security NIA want to security DG burdwan blast case state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy