Advertisement
E-Paper

আশিক শুধরে নিক নিজেকে, চায় এনআইএ

এমনটাও হতে পারে! আইএস জঙ্গি সন্দেহে এক জনকে জালে ফেলেছেন। অথচ কথাবার্তায় সাফল্যের তৃপ্তির আঁচ নেই। বরং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ অফিসারটির গলায় যেন আক্ষেপেরই সুর!

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৪
.

.

এমনটাও হতে পারে!

আইএস জঙ্গি সন্দেহে এক জনকে জালে ফেলেছেন। অথচ কথাবার্তায় সাফল্যের তৃপ্তির আঁচ নেই। বরং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ অফিসারটির গলায় যেন আক্ষেপেরই সুর!

পাঁচ মাস আগের ঘটনা। ১৭ মার্চের বিকেল। বিস্তর জেরার পরে হুগলির ধনেখালির বাসিন্দা আশিক আহমেদকে যে শেষমেশ গ্রেফতার করা হল, তা একটু আগে ঘোষণা করে দিয়েছে এনআইএ। আশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে তার ওঠাবসা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বসে আইএস-সংশ্রব চালানোর অভিযোগে এটাই প্রথম গ্রেফতারি।

তবে সে দিন দিল্লি থেকে মোবাইলে কথা বলার সময়ে কিছুটা অসহায়তা ও সহানুভূতি যেন ফুটে উঠেছিল এনআইএ-র আইজি’র গলায়। ‘‘ছেলেটা সমস্ত রকম সহযোগিতা করেছে। ও অনুতপ্ত। লজ্জিত। ওকে শোধরানোর সুযোগ দেওয়া যেত। কিন্তু আমরা নিরূপায়।’’— বলেছিলেন তিনি। আইজি সে দিন যুক্তি দেন, ‘‘একই মামলায় একই অভিযোগে আমরা অন্যদের গ্রেফতার করেছি। আশিককে গ্রেফতার না-করাটা আইনের চোখে অন্যায়।’’

পাঁচ মাস বাদে আইন বাঁচিয়েই আশিককে আত্মসংশোধনের সুযোগ দিল এনআইএ। আইএসের ভারতীয় শাখার কয়েক জন সদস্যের বিরুদ্ধে দিল্লিতে রুজু হওয়া মামলায় তারা আশিককে রাজসাক্ষী করতে চায়। আশিক বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে। তার পরে জামিনে ছাড়াও পেয়েছে। এবং এনআইএ জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেনি। কেন? রবিবার দিল্লি থেকে এনআইএ’র এক শীর্ষ কর্তা ফোনে বলেন, ‘‘আইএস-যোগের অভিযোগে আগে অন্যান্য রাজ্যে যারা ধরা পড়েছে, তাদের কয়েক জনকে আমরা সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে আশিক আহমেদ প্রথম সুযোগটা পেল।’’ এনআইএ-র বক্তব্য: আশিকের বয়স মাত্র ঊনিশ। বাকি জীবন পড়ে আছে। নিজের ভুল কাজকর্মের জন্য অনুশোচনা ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে। তদন্তে যথাসম্ভব সহযোগিতাও করেছে। উদাহরণ হিসেবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি— পশ্চিমবঙ্গে আইএসের এজেন্ট কারা, সে প্রশ্নের উত্তরে আশিক প্রথমেই করেছিল বীরভূমের মুসার নাম। পরে অন্য সূত্র ধরে যাকে বর্ধমান স্টেশনে পাকড়াও করা হয়।

এমতাবস্থায় বিপথগামী ছেলেটির সামনে নতুন ভাবে বাঁচার পথ খুলে দেওয়ার প্রয়াস। ‘‘আইন মতো সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আশিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে হবে। রাজসাক্ষী হলে সাজা কম হতে পারে। খালাসও হয়ে যেতে পারে।’’— পর্যবেক্ষণ এক গোয়েন্দা অফিসারের।

বস্তুত আইএসের সাইবার-প্রচারে প্রভাবিত হয়ে ভারতের যে সব ছেলেমেয়ে ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে, হদিস মিললে তাদের সকলকে গ্রেফতার করলেই সমস্যার সমাধান হবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা মহলের একাংশের আশঙ্কা, এতে সমস্যা কমবে তো না-ই, উল্টে বাড়বে। ওঁদের বক্তব্য, গ্রেফতার করা মানে ছেলে-মেয়েগুলোর ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়া। পুঞ্জীভূত সেই আক্রোশ ভবিষ্যতে নতুন চেহারায় জোরদার বিপদ ডেকে আনতে পারে। তার চেয়ে ওদের কাউন্সেলিং করে বা বুঝিয়ে-সুজিয়ে ঠিক পথে ফেরানো গেলে অনেক লাভ।

এ প্রসঙ্গে উঠে আসছে ২০১৪-র অগস্টে কলকাতায় ধরা পড়া হায়দরাবাদের দুই ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-সহ চার যুবকের কথা। আইএসের হয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে তারা ইরাক যাচ্ছিল। ছেলেগুলিকে কিন্তু গ্রেফতার করা হয়নি। দিনের পর দিন কাউন্সেলিং করা হয়েছে। তদন্তকারীদের যুক্তি ছিল, আইএসের কোনও ‘অপারেটিভ’-এর সঙ্গে ওদের যোগাযোগ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় আইএসের প্রচারেই তাদের মগজধোলাই হয়ে গিয়েছিল। আশিকের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটা আলাদা। এনআইএ-র দাবি: আইএসের ভারতীয় শাখার দুই চাঁইয়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। যার সুবাদে এক পান্ডা পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে যায়। সম্ভাব্য নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে তখন দু’জনের আলোচনাও হয়েছিল।

এ হেন গুরুতর তথ্য-প্রমাণ মজুত থাকায় আশিককে গ্রেফতার করা ছাড়া উপায় ছিল না বলে জানাচ্ছেন এনআইএ-কর্তারা। তবে ওঁরা এ-ও বলছেন, ‘‘ছেলেটি স্রেফ ঝোঁকের বশে এ সব করেছিল। ভুল বুঝতে পেরে ভেঙে পড়ে। নিজে থেকে প্রচুর তথ্য দেয়, যা আমাদের তদন্তে ভীষণ কাজে লেগেছে।’’

তাই এখন ওকে রাজসাক্ষী বানিয়ে শোধরানোর চেষ্টা।

NIA ISIS Ashik
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy