Advertisement
E-Paper

‘নির্মল’ নদিয়ায় আজও রয়েছেন মলবাহকেরা

থাকার কথা নয়। তবুও রয়ে গিয়েছেন ওঁরা। অশোক ডোম, মুন্না বাসফোরের মতো ন’জন পুরকর্মী এখনও প্রতিদিন মানুষের মলমূত্র পরিষ্কার করেন নিজ হাতে। ‘নির্মল’ নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভার খাতাতেও তাঁদের পরিচয়, ‘হিউম্যান স্ক্যাভেঞ্জার।’ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সমীক্ষায় শৌচাগার তৈরিতে নদিয়া দেশের মধ্যে এক নম্বর স্থান পেয়েছে। বিশ্বেও নাকি সেরা। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং জেলা সফরে গিয়ে নদিয়াকে ‘নির্মল জেলা’ বলে ঘোষণা করে প্রশংসা করেন জেলাশাসকের। জেলা প্রশাসনের সমীক্ষাই বলছে, নদিয়ার বেশ কিছু জায়গায় স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:১৯

থাকার কথা নয়। তবুও রয়ে গিয়েছেন ওঁরা। অশোক ডোম, মুন্না বাসফোরের মতো ন’জন পুরকর্মী এখনও প্রতিদিন মানুষের মলমূত্র পরিষ্কার করেন নিজ হাতে। ‘নির্মল’ নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভার খাতাতেও তাঁদের পরিচয়, ‘হিউম্যান স্ক্যাভেঞ্জার।’

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সমীক্ষায় শৌচাগার তৈরিতে নদিয়া দেশের মধ্যে এক নম্বর স্থান পেয়েছে। বিশ্বেও নাকি সেরা। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং জেলা সফরে গিয়ে নদিয়াকে ‘নির্মল জেলা’ বলে ঘোষণা করে প্রশংসা করেন জেলাশাসকের। জেলা প্রশাসনের সমীক্ষাই বলছে, নদিয়ার বেশ কিছু জায়গায় স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। যেমন, তাহেরপুর পুর এলাকার রেল লাইন-সংলগ্ন কলোনি ও বস্তি এলাকা, তাহেরপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে পূর্ত দফতরের জমিতে সাফাইকর্মীদের বস্তি। সব মিলিয়ে তাহেরপুরে অন্তত গোটা চল্লিশ পরিবারকে ‘বাইরে’-র কাজ সারতে হয় খোলা নালায়, নইলে প্লাস্টিক-ঘেরা গর্তে।

সেই সব জায়গায় জমে-থাকা বর্জ্য সাফ করেন অশোক ডোম। মুখোশ-দস্তানা ছাড়া, খালি হাতেই। পুরসভার খাতায় তাঁর নাম রয়েছে মানুষের ‘মলমূত্র বাহক’ (হিউম্যান স্ক্যাভেঞ্জার) হিসেবে। কিন্তু নদিয়া জেলা তো নির্মল হিসেবে ঘোষণা হয়েছে? শুনে অবাক মধ্য-চল্লিশের অশোকবাবু। বললেন, ‘‘কই সে সব তো কিছু শুনিনি। বস্তির টিন-ঘেরা শৌচাগারে নিজে হাতেই আমরা মল পরিষ্কার করি।’’ প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, শুধু তাহেরপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকাতে অশোকবাবুর মতো আরও আটজন মলবাহক রয়েছেন।

অশোক ডোমের দাবি, আশপাশের অনেক এলাকাতেই নেই শৌচাগার। যেমন, বারাসত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। সেখানে কোদাল দিয়ে কয়েক ফুট গর্ত খোঁড়া হয়। মাস খানেকের মধ্যেই তা ভরে যায় মলে। সেই মল অশোকবাবুদেরই তুলে ঝুড়ি ভর্তি করে দূরে ফেলতে হয়।

বারাসত গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হারান পাল। পেশায় ভ্যান চালক। কোনও মতে প্লাস্টিক-ঘেরা শৌচাগার তাঁর বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘শৌচাগার সরকার বানিয়ে দিচ্ছে? আমরা তো কিছুই জানি না।’’ একই অবস্থা তাহেরপুর বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকাতেও। সেখানে থাকেন কয়েক ঘর বাসফোর সম্প্রদায়ের লোক। মুন্না, বিরজু, রামপ্রসাদ, রাজু বাসফোর, সকলেই পুরসভার ঠিকা সাফাইকর্মী। দিনমজুরি ১২৫ টাকা। চারজনেরই কাজ, মানুষের মলবহন। নিজেদের বাড়িতেও নেই উপযুক্ত শৌচাগার। রাজু বাসফোর বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার কাছে হাজার টাকা জমা দিই শৌচাগার বানানোর জন্য। কিন্তু নিজের জমি নেই বলে তা পাইনি।’’

বাসফো‌র ও ডোম পরিবারের এই সাফাইকর্মীদের দাবি, পুরসভার খোলা নালায় আবর্জনা থেকে শুরু করে মানুষের মল-মূত্র সবই পড়ে থাকে‌। হাতে‌ করেই সেই নোংরা তুলতে হয় ঠেলা গাড়িতে।

তাহেরপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান, তৃণমূলের সুব্রতকুমার শীল বলেন, ‘‘বস্তি, কলোনি এলাকায় শৌচাগার তৈরি করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, সাধারণ শৌচাগার তৈরি করব। নির্বাচন এসে যাওয়ায় করতে পারিনি।’’ কিন্তু মলবাহক নিয়োগ করা তো বেআইনি। ওই পুরকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য কী করেছে পুরসভা? সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘অনগ্রসর উন্নয়ন দফতরের কাছে ওই ন’জনের নাম পাঠিয়েছি।’’ নদিয়ার জেলাশাসক পিবি সালিম বলেন, ‘‘বস্তি এলাকাতেও শৌচাগার তৈরি করে দিয়েছি। তাহেরপুরে কেন সমস্যা হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

আগামী ২৩ জুন দক্ষিণ আমেরিকার কলাম্বিয়ায় থাকবেন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা। শৌচাগার তৈরিতে নদিয়া বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের পুরস্কার নেবেন তাঁরা। কোদাল-ঝুড়ি হাতে অশোক ডোম, রাজু বাসফোরেরা তখন হয়তো মল পরিষ্কার করছেন।

manirul sekh nadia excreta municipality toilet mamata bandopadhyay chief minister trinamool tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy