Advertisement
E-Paper

বেচাল চলবে না, আজ কড়া চাবুক মমতার

২১১-র ভার কম নয়! এ বারের ২১-শের সভাও তাই হতে পারে অন্য রকম! পুলিশের গুলিতে ’৯৩ সালের ২১ জুলাই প্রাণ হারিয়েছিলেন যুব কংগ্রেসের ১৩ জন কর্মী। তাঁদের স্মরণ করতেই ফি বছর এ দিনটায় ধর্মতলায় সমাবেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শঙ্খদীপ দাস ও সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০৪:৫৪

২১১-র ভার কম নয়! এ বারের ২১-শের সভাও তাই হতে পারে অন্য রকম!

পুলিশের গুলিতে ’৯৩ সালের ২১ জুলাই প্রাণ হারিয়েছিলেন যুব কংগ্রেসের ১৩ জন কর্মী। তাঁদের স্মরণ করতেই ফি বছর এ দিনটায় ধর্মতলায় সমাবেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলে, বিরোধীদের ঝাঁঝালো আক্রমণ এবং দলে শৃঙ্খলা রাখতে কিছু কড়া শব্দের ব্যবহার ভিন্ন এ সভার অন্য কোনও মাত্রা বিশেষ থাকে না। কিন্তু এ বার আবহ আলাদা। তোলাবাজি ও জুলুমের অভিযোগ পেয়ে দিদির নির্দেশেই শাসক দলের লোকজনকে ধরপাকড় চলছে দক্ষিণবঙ্গের দু’জেলায়। তাই দলের অন্দরে স্বাভাবিক প্রত্যাশা হল (পড়ুন আশঙ্কা), ভোটের সাফল্য উদ্‌যাপনের পাশাপাশি সিন্ডিকেট রাজ ও তোলাবাজির বিরুদ্ধে আজ, বৃহস্পতিবার আরও কষাঘাত করতে পারেন নেত্রী।

ধর্মতলায় সভাস্থলের সামনে। বুধবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

কিন্তু দিদি-ঘনিষ্ঠ একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, জুলুম বন্ধে কঠোর মনোভাব দেখানোটা আসলে খণ্ডচিত্র মাত্র। এ বার মঞ্চ থেকে বৃহত্তর বার্তা দিতে পারেন নেত্রী। কারণ উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে ভোটে জিতেছে তৃণমূল। দিদি জানেন উন্নয়নের জন্য বাংলার ‘খিদে’ রয়েছে বিস্তর। শিল্পায়ন, নগরায়ণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর কথা তাঁর কাছ থেকে শুনতে চায় মানুষ। সে কথা মাথায় রেখে একুশের মঞ্চ থেকে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার বার্তাই হয়ে উঠতে পারে তাঁর বক্তৃতার মূল সুর। দলের ওই নেতার কথায়, দিদি মনে করেন কিছু স্বার্থান্বেষী এবং লোভী নেতার জন্যই তৃণমূলের বদনাম হচ্ছে। এঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের বার্তাও শোনা যেতে পারে দিদির মুখে। কারণ, সিন্ডিকেট ও তোলাবাজি বন্ধ করলে বহু যুবক রুটিরুজি হারাবেন। পাড়ায় পাড়ায় তাঁরাই তৃণমূলের পতাকা বহন করেন। রোজগার হারালে দলের প্রতি তাঁদের অনাস্থা তৈরি হবে, সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূল দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই দুর্নীতি দমনের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোটা রাজনৈতিক ভাবেও এখন অপরিহার্য।

দলের এক সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বুধবার বলেন, এ বারে মঞ্চে দ্বিতীয় ইনিংসে দল ও রাজ্যকে সার্বিক ভাবে দিশা দেখাতে চান নেত্রী। তার প্রস্তুতি হিসেবেই গত এক মাস ধরে ধারাবাহিক পদক্ষেপ শুরু করেছেন তিনি। সিন্ডিকেট চক্র-তোলাবাজি কঠোর হাতে দমন, সরকারি জমিতে জবরদখল উচ্ছেদের নির্দেশ, প্রশাসনে দুর্নীতি রোখা, সময়ানুবর্তিতা কায়েম করা, শিল্প টানতে সিঙ্গল উইন্ডো ব্যবস্থা শুরু করা— এ সবই সেই সামগ্রিক প্রস্তুতির অঙ্গ।

সবিস্তারে দেখতে ক্নিক করুন।

প্রসঙ্গত গত বছরও একুশের সভা থেকে তোলাবাজি ও জুলুমের ব্যাপারে দলকে হুঁশিয়ার করেছিলেন দিদি। বলেছিলেন, সিন্ডিকেট ব্যবসা বা খাদান থেকে টাকা তোলা যাবে না। তা করলে তৃণমূলে থাকা যাবে না— ‘‘ইউ মে গেট আউট।’’ কিন্তু দিদির সেই সতর্কবার্তার বাস্তব কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি। উল্টে গত এক বছরে তা আরও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এমনকী ভোট চলাকালীন একটি টিভি সাক্ষাৎকারে সিন্ডিকেটের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত নিজেই। এ বার ছবিটা দৃশ্যত আলাদা। দলের উপরতলার নেতাদের মতে, গত বছর দিদি যে কথা বলেছিলেন, তার রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা থাকলেও বাস্তবায়িত করার সুযোগ ছিল না। কারণ, নেত্রী জানতেন সিন্ডিকেট ও তোলাবাজি বন্ধ করতে গেলে ভোট মরসুমে বিক্ষুব্ধ রাজনীতি জন্ম নিতে পারে। বাম-কংগ্রেসের সমঝোতার বাজারে তাতে হিতে বিপরীত হতো। কিন্তু একাই দু’শো পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই সমস্যা আর নেই। তাঁর কব্জিতে দলকে ঝাঁকুনি দেওয়ার জোর যেমন বেড়েছে, তেমনই মওকা বুঝে দিদিকে বেকায়দায় ফেলতে তৃণমূলেই যাঁরা প্যাঁচ কষছিলেন, তাঁদের ট্যাঁ-ফোঁ করার মুরোদ কমেছে। তাই ‘অ্যাকশনও’ শুরু হয়ে গিয়েছে।

বিরোধী দল ভেঙে কিছু নেতা-বিধায়ককে তৃণমূলে সামিল করানো একুশের সমাবেশে রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল ইদানীং। এ বার সেই ঝোঁক বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবারও দাবি করেন, ভাঙাভাঙির মধ্যে তৃণমূল নেই। নতুন মুখ কি তবে পাওয়াই যাবে না? দিদির একুশের বার্তার মতো এ ব্যাপারেও কৌতূহল জিইয়ে থাকছে আরও কয়েক ঘণ্টা!

Mamata Banerjee 21st July Law and Order
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy