Advertisement
E-Paper

ডাক্তারি পরীক্ষায় নজরদারিতে আমরা-ওরা

পরীক্ষা থাকলেই পরিদর্শক বা নজরদার থাকবেন। স্বাভাবিক। ডাক্তারি পরীক্ষায় সেই সব সাধারণ পরিদর্শকের পাশাপাশি পর্যবেক্ষক বা বিশেষ পরিদর্শকের ব্যবস্থা হয়েছে। আর সেই বিশেষ বন্দোবস্ত নিয়েই উঠছে দ্বিচারিতার অভিযোগ। উঠছে এক যাত্রায় পৃথক ফলের অভিযোগ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২

পরীক্ষা থাকলেই পরিদর্শক বা নজরদার থাকবেন। স্বাভাবিক। ডাক্তারি পরীক্ষায় সেই সব সাধারণ পরিদর্শকের পাশাপাশি পর্যবেক্ষক বা বিশেষ পরিদর্শকের ব্যবস্থা হয়েছে। আর সেই বিশেষ বন্দোবস্ত নিয়েই উঠছে দ্বিচারিতার অভিযোগ। উঠছে এক যাত্রায় পৃথক ফলের অভিযোগ।

অভিযোগ উঠছে, কারণ, সব মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষায় ওই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে না। বাঁকুড়া ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এমিবিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যবেক্ষক রাখা হচ্ছে। অথচ মেদিনীপুর, মালদহ, উত্তরবঙ্গ, কল্যাণী-সহ অন্য ছ’টি জেলা মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যবেক্ষকের কোনও বিশেষ নজরদারির বন্দোবস্ত থাকছে না। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জারি করা এ-হেন নির্দেশিকায় তোলপাড় চলছে স্বাস্থ্য ভবনে। প্রশ্ন উঠছে, মেডিক্যাল পরীক্ষায় এমন ‘আমরা-ওরা’ কেন? আমরা-ওরা বিভাজনের ক্ষোভ এমন তীব্র হয়েছে যে, বাঁকুড়া-বর্ধমানের হবু ডাক্তারেরা বলছেন, ‘‘আমরা চোর! আর ওরা সব যুধিষ্ঠিরের বংশধর?’’

বাঁকুড়া ও বর্ধমান মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকেরা যে এই নির্দেশিকায় বেজায় ক্ষুব্ধ, তার আঁচ পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনে। একই যাত্রায় পৃথক ফল কেন, বড় হয়ে উঠছে সেই প্রশ্ন। অনেকে এমন সন্দেহও প্রকাশ করছেন যে, কল্যাণী, মেদিনীপুর, উত্তরবঙ্গ-সহ অন্য ছ’টি মেডিক্যাল কলেজ থেকে কি তা হলে কোনও কোনও ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিচ্ছেন? আর সেই জন্যই পর্যবেক্ষকের বিশেষ নজর থেকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে ওই সব কলেজকে? অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বাস্থ্য ভবনের কাছে দাবি জানিয়েছে বর্ধমান ও বাঁকুড়া।

কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের অন্য কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু জেলা মেডিক্যাল কলেজগুলির ক্ষেত্রে ‘হোম সেন্টার’ অর্থাৎ সেখানকার পড়ুয়ারা পরীক্ষা দেন নিজেদের কলেজেই। হোম সেন্টারের সুযোগ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় যাতে কোনও অসৎ উপায় অবলম্বন করতে না-পারেন, সেই জন্য ওই সব কলেজে পর্যবেক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে শুধু বাঁকুড়া ও বর্ধমানের জন্য। মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তরবঙ্গ ও সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের জন্য পর্যবেক্ষক নেই।

‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের কেউ পরীক্ষা দিলে তাঁদের খাতিরে নজরদারি ঢিলেঢালা রাখা হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ এ ভাবে কখনও প্রকট হয়নি বলে শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ।

এ ক্ষেত্রে দু’রকম ব্যবস্থা কেন?

স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক কান্তাপ্রসাদ সিংহের ব্যাখ্যা, এমবিবিএস পরীক্ষায় পর্যবেক্ষকের বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন আছে কি না, জেলার সব মেডিক্যাল কলেজের কাছেই তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। বাঁকুড়া আর বর্ধমান তাতে ‘হ্যাঁ’ বলেছিল। তাই ওই দুই জায়গায় পর্যবেক্ষক পাঠানো হচ্ছে। ‘‘বাকিরা জানিয়েছিল, তাদের কলেজে পরীক্ষা হয় শান্তিপূর্ণ ভাবেই। তাদের পর্যবেক্ষক লাগবে না। তাই পাঠানো হয়নি,’’ বলেন পরীক্ষা নিয়ামক।

জেলার মেডিক্যাল কলেজে হোম সেন্টার। তাই সেখানে টোকাটুকির সুযোগ বেশি বলে অভিযোগ। সেটা ঠেকাতে হলে জেলার সব কলেজেই বিশেষ নজরদারি রাখা উচিত। তা না-করে আমরা-ওরা কেন?

‘‘এখন অনৈতিক অনেক কিছুই ঘটে চলেছে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি ক্ষমতাহীন। আমার প্রতিবাদ ধোপে টিঁকবে না। কন্ট্রোলারই এখানে সর্বেসর্বা,’’ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাসের সুরে হতাশা। তিনি জানান, নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ রুখতে এমবিবিএসের সব খাতা কেন্দ্রীয় ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ‘‘কিন্তু চাপে পড়ে নাকে খত দিয়ে সেই চেষ্টা থেকে আমাকে সরে আসতে হয়েছে,’’ তীব্র ক্ষোভ ভবতোষবাবুর গলায়।

কোনও মেডিক্যাল কলেজই যে স্বর্গরাজ্য নয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘টোকাটুকি হয় সব জায়গায়। তাই সর্বত্র পর্যবেক্ষক থাকবেন কি না, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্‌জিকিউটিভ কমিটিই সেটা ঠিক করুক,’’ বলছেন সুশান্তবাবু।

Medical Examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy