Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খুঁটি পোঁতার জমিও মিলছে না, আক্ষেপ বিদ্যুৎকর্তার

শিল্প তো অনেক দূরের কথা, এ রাজ্যে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার জন্য জমি পাওয়াও এখন প্রায় অসম্ভব। কোনও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী নন। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁদের যে হিমশিম দশা, তা স্বীকার করে নিয়েছেন খুঁটি পোঁতার দায়িত্বে থাকা রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন (ট্রান্সমিশন) সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুশান্তকুমার দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

শিল্প তো অনেক দূরের কথা, এ রাজ্যে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার জন্য জমি পাওয়াও এখন প্রায় অসম্ভব।

কোনও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী নন। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁদের যে হিমশিম দশা, তা স্বীকার করে নিয়েছেন খুঁটি পোঁতার দায়িত্বে থাকা রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন (ট্রান্সমিশন) সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুশান্তকুমার দাস। মঙ্গলবার বণিকসভা সিআইআই আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “রাজ্যে সংবহন লাইন (ট্রান্সমিশন) পাতার বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। কিন্তু মূল জটিলতা তৈরি হচ্ছে জমি নিয়ে। খুঁটি পোঁতা কিংবা সাব-স্টেশন তৈরির জন্য দু’তিন একর জমি পেতেও কালঘাম ছুটছে। সরাসরি চাষিদের সঙ্গে সংস্থাকে দর কষাকষি করতে হচ্ছে। আর সেই কারণেই মার খাচ্ছে দ্রুত লাইন পাতার কাজ।”

‘এনার্জি কনক্লেভ-২০১৪’ নামে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের নানাবিধ সংস্কার এবং উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেছিল সিআইআই। এ দিন সেখানেই এক আলোচনা সভায় ওই মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ কর্তাটি। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে হাজির ছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। এই সভা চলাকালীন অবশ্য তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সভার শেষে সংবহন সংস্থার কর্তাটি জানান, এ রাজ্যের মানুষ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চান। কিন্তু খুঁটি পোঁতার জমি দিতে চান না! কিন্তু সব ক্ষেত্রেই কি তাঁদের একই রকম অভিজ্ঞতা নাকি নির্দিষ্ট কোনও প্রকল্পে সমস্যা হচ্ছে? সুশান্তবাবুর জবাব, “আলাদা করে কোনও প্রকল্প বলব কী করে? যেখানেই লাইন পাতার কাজ শুরু হচ্ছে, সেখানেই জমির সমস্যা।” তিনি জানান, জমি সমস্যা মেটানোর দায় ঠিকাদার সংস্থার। আর তারা প্রায় সব জায়গাতেই জমি-জটের কথা বলছে। তবে তাদের বলা হয়েছে, আলোচনা করেই সর্বত্র জমি নিতে হবে।

বাম আমলের শেষ দিকে রাজারহাটে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার কাজেও স্থানীয় মানুষের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে। তখন তাঁদের সমর্থন করেছিল তৃণমূল। রাজ্যের এক বিদ্যুৎ কর্তার কথায়, “এখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে তারা নিজেরাই সেই সমস্যার শিকার!” এ নিয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও বিদ্যুৎ মন্ত্রী ফোনই ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।

সংবহন সংস্থার জমি কেন প্রয়োজন, তারও ব্যাখ্যা দেন সুশান্তবাবু। ‘এনার্জি কনক্লেভ-২০১৪’-য় ‘বিদ্যুৎ পরিবহণ এবং সংবহন ক্ষেত্রে রূপান্তর’ শীর্ষক বিষয়ে কথা বলছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন রাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহণ সংস্থার সিএমডি নারায়ণ স্বরূপ নিগম। সভায় সুশান্তবাবু জানান, নিরবচ্ছিন্ন এবং উন্নত মানের বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাব-স্টেশনগুলির উন্নতির জন্য বিরাট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তার জন্য রাজ্যজুড়ে হাই-টেনশন লাইন পাততে হবে। এখন রাজ্যে ৭০টি সাব-স্টেশন রয়েছে। দু’তিন বছরের মধ্যে সেই সংখ্যা ১৪০-এ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জমি জটে শুধু সাব-স্টেশন নয়, হাই-টেনশন লাইন পাতার কাজও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সুশান্তবাবু জানান, রাজ্য থেকে লো-ভোল্টেজের সমস্যা দূর করতে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৭০টি সাব-স্টেশন বসাতে হবে। জমি সমস্যা কাটিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা কী ভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয়ে তিনি।

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, সংবহন কোম্পানির মূল কাজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে হাই-টেনশন লাইনের মাধ্যমে সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। এ জন্য রাজ্য জুড়ে ৪০০, ২২০, ১২০ এবং ৬৬ কিলোভোল্ট ক্ষমতা সম্পন্ন একাধিক সাব-স্টেশন রয়েছে তাদের। বর্তমানে মেদিনীপুর, গোকর্ণ ও জিরাটে তিনটি ৪০০ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন সাব-স্টেশন রয়েছে। তিন-চার বছরের মধ্যে আরও তিনটি ৪০০ কেভি সাব-স্টেশন তৈরি করতে চায় সংস্থা। পাশাপাশি কেন্দ্রের সহায়তায় মেদিনীপুর, গোকর্ণ ও জিরাটের সাব-স্টেশনগুলিকে ৭৬৫ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন করার কাজও হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সংবহন সংস্থার। কিন্তু সে জন্য যে বাড়তি জমি লাগবে, তা কী ভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে সংশয়ে কর্তারা। জমির সমস্যা এড়াতে ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে শহরাঞ্চলে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল পাতার কাজ হাতে নেওয়ার কথা ভাবছে সংস্থা। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে সাব-স্টেশনের জন্য যে জমি লাগবে, তা কী ভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে সংশয়ে কর্তারা।

এ দিনের অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত তিনটি নতুন প্রকল্পের কথা জানান। অযোধ্যা পাহাড়ে পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্ট (পিপিএসপি) প্রকল্পের ধাঁচে ওই এলাকার তুরগা এবং বন্ধু এলাকায় আরও দুটি পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প এবং বাঘমুন্ডিতে পিপিএসপি-র খালি জমিতে রাজ্যের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিদ্যুৎ মন্ত্রী। তিনি বলেন, “দেশে এত বড় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প আগে কখনও হয়নি।” প্রকল্পটি কার্যকর হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমবে। এ জন্য খরচ হবে ১৪০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ক্লিন এনার্জি ফান্ড’ থেকে এই প্রকল্পের ৪০% টাকা আসবে। বাকি টাকার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাহায্য চাওয়া হবে বলে জানান মণীশবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE