Advertisement
E-Paper

পর্যটনে গতি বাড়বে কবে

পর্যটন বাড়াতে দিঘায় যখন পরিষেবার নানা দিক তৈরি করছে সরকার, তখন রাজ্যের আর এক সৈকত বকখালি অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। না তো কোনও ওয়াটার স্পোটর্স তৈরি হয়েছে এখানে। না যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল ফিরেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৬:৪৭
বকখালির সমুদ্র সৈকত। —নিজস্ব চিত্র।

বকখালির সমুদ্র সৈকত। —নিজস্ব চিত্র।

পর্যটন বাড়াতে দিঘায় যখন পরিষেবার নানা দিক তৈরি করছে সরকার, তখন রাজ্যের আর এক সৈকত বকখালি অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। না তো কোনও ওয়াটার স্পোটর্স তৈরি হয়েছে এখানে। না যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল ফিরেছে। রাস্তাঘাট নিয়েও সমস্যা আছে। এটিএম মাত্র একটি। বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং। হোটেলে এসি থাকলেও অনেক জায়গায় তা লোডশেডিংয়ের জন্যই চালানো যায় না বলে অভিযোগ।

আগে কলকাতা থেকে দিনে ৪টি করে সরকারি বাস যাতায়াত করত বকখালিতে। এখন ভূতল পরিবহণ নিগমের দু’টি বাস সারা দিনে যায়-আসে। বকখালিতে সরকারি বাস পরিষেবা বলতে এটুকুই। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রচুর কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বেলা ২টোর পরে কেউ বকখালি থেকে কলকাতায় ফিরতে চাইলে মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ, সরাসরি কলকাতায় যাওয়ার সরকারি বাস তারপরে আর নেই। গত স‌প্তাহে বকখালি এসেছিলেন প্রবাসী বাঙালি শুভ্রাংশু মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবার নিয়ে এ ভাবে আসা খুবই কষ্টকর। কলকাতা থেকে সরকারি বাস কম থাকায় ট্রেনে এসেছিলাম নামখানা পর্যন্ত। কিন্তু সেখান থেকে বকখালি পৌঁছতে অনেকবার ওঠানামা করতে হল।’’

হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে গত বছর থেকে। তার জেরে এমনিতেই রাস্তাঘাটের একটু সমস্যা রয়েছে বকখালি আসার ক্ষেত্রে।

সমস্যায় পড়েছেন ছোট গাড়ি নিয়ে আসা পর্যটকেরাও। বাইরে থেকে নামখানা পর্যন্ত এসে সরকারি বার্জ পরিষেবা বন্ধ থাকলে গাড়ি নিয়েই ফেরত যেতে হচ্ছে অনেককে। অভিযোগ, এই পরিষেবা মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে পড়ছে নানা কারণে। তখন আর নামখানায় গাড়ি রেখে বকখালি যাওয়ার উপায় থাকছে না, কেন না নামখানায় কোনওখানেই পার্কিংয়ের পরিষেবা নেই। তার জেরে একটা বড় অংশের পর্যটক হারাচ্ছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। বকখালি-ফ্রেজারগঞ্জ হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আবহাওয়া খারাপ থাকলে মাঝে মধ্যে বার্জ পরিষেবা বন্ধ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন তখন তা বন্ধ হয়ে পড়ছে। অথচ তা নদীপাড় পর্যন্ত গিয়ে না পৌঁছলে বোঝার উপায় থাকছে না। পর্যটক ফিরে গেলে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে প্রচুর।’’

গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের তরফেও বিষয়টি পরিবহণ দফতরের নজরে আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘এটা যে একটা বড় সমস্যা সেটা ঠিক। আমরা বিষয়টি পরিবহণ দফতরের কর্তাদের জানিয়েছি। তারা জানিয়েছেন, তিনটি পরিবহণ সংস্থা এক হয়ে যাওয়ার পরে কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগোবে।’’ সরকার ইতিমধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বার দেখার, বাস পরিষেবার হাল কী ভাবে ফেরানো হয়। কী বলছেন পরিবহণ কর্তারা?

নিগমের এমডি নীলাঞ্জন সাণ্ডিল্য বলেন, ‘‘বাস পরিষেবায় মাঝে মধ্যে কিছু যান্ত্রিক গোলযোগ হয়, তার বাইরে কিছু নয়। বার্জ পরিষেবার ক্ষেত্রেও তাই। তবে আমরা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করছি, যেখানে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সরকারি বার্জ পরিষেবার সমস্ত রকমের হালের খবর পাওয়া যাবে। শীঘ্রই তা চালু করার চেষ্টা চলছে।’’ এ তো গেল রাস্তার কথা।

কিন্তু একবার বকখালি এসে পৌঁছলে যদি কোনও কারণে টাকায় টান পড়ে? তা হলে আর কোনও উপায় থাকছে না। পর্যটকদের হয়, সাত কিলোমিটার বাসে করে গিয়ে এটিএম থেকে টাকা তুলতে হচ্ছে। তা-ও খারাপ থাকলে প্রায় ৪০ মিনিট পেরিয়ে নামখানায় যেতে হচ্ছে টাকা তুলতে। বকখালিতেই একটিই মাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম আছে। তা-ও সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। কিন্তু পর্যটকদের অভিযোগ, বেশিরভাগ সময় তাতে হয় টাকা থাকে না, না হলে ইন্টারনেট লিঙ্ক কেটে যায়। এর জেরে পর্যটক, ব্যবসায়ী— সমস্যা দু’তরফেই। পর্যটকদের পর্যাপ্ত টাকা সঙ্গে করে আনারই পরামর্শ দেওয়া হয় হোটেল বুকিংয়ের সময়ে। অথচ, কলকাতা থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরের এই সৈকতে সপ্তাহান্তে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। এক-দু’দিনের ছোট সফরের জন্য খুবই ভাল গন্তব্য। ঝাউবনে ঘেরা ফ্রেজারগঞ্জে বা কিছুটা দূরে মৎস্য দফতরের নয়া গন্তব্যও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কিন্তু পরিষেবা উন্নত না করতে পারলে পর্যটকদের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।

Bakkhali bakkhali tourism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy