তারকেশ্বরে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক সভায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রছাত্রী এবং অন্যদের সামনে অস্থায়ী উপাচার্য আশুতোষ ঘোষকে ভর্ৎসনা করলেন ঠিকই। কিন্তু উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উচ্চ পদে অস্থায়ী ব্যক্তিরা কত দিন থাকবেন, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব মিলল না।
কয়েক মাস আগে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা নাক-এর প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে এসে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এত দিন অস্থায়ী উপাচার্য, অস্থায়ী রেজিস্ট্রার, অস্থায়ী পরীক্ষা নিয়ামকের হাতে থাকবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এর জেরে নাকের মূল্যায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডও কমে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারের প্রশাসনিক সভায় বিষয়টি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক টিএমসিপি নেতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের কোনও জবাব না-মেলায় পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ বেজায় হতাশ।
তারকেশ্বরে প্রশাসনিক বৈঠকে টিএমসিপি নেতা কুণাল সামন্ত বলেন, ‘‘প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে স্থায়ী পদে কেউ না-থাকায় উন্নয়ন এবং অন্য নানা বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে ভীষণ ভাবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠনের এক নেতার বক্তব্য, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যকে ভর্ৎসনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ এই বিষয়টি তো উপাচার্যের হাতেই নেই। এবং এ ব্যাপারে কোনও ভূমিকা নেই রাজ্য সরকারেরও। ‘‘সরকার উদ্যোগী হলে সমস্যাটা যে আগেই মিটে যেত, সেই বিষয়ে বিকাশ ভবন সম্পূর্ণ উদাসীন,’’ মন্তব্য ওই নেতার।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, স্থায়ী উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য সার্চ বা সন্ধান কমিটি তৈরি করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। সেই কাজটাই ঠিক সময়ে না-হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী উপাচার্য, অস্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়ে চলছে শতাব্দী-প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য যে-সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, নিয়মবিধির বাধা-সহ নানান জটিলতায় সেটা বাতিল হওয়ার মুখে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ফের স্থায়ী উপাচার্য কবে পাবে, তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন সুরঞ্জন দাস কলকাতা থেকে যোগ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পরে ছ’মাস করে দু’দফায় অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন সুগত মারজিত। তাঁর পরে আশুতোষ ঘোষকে অস্থায়ী ভাবে বসানো হয় উপাচার্যের পদে। আগামী জুলাইয়ে ওই পদে তাঁরও দু’দফার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কিন্তু সার্চ কমিটির কাজ থমকে যাওয়ায় অগস্টেও কলকাতা স্থায়ী উপাচার্য পাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, সমস্যা মেটানোর জন্য আলাপ-আলোচনা চলছে ।
কলেজ স্কোয়ারে মিছিল ও সভা নিয়ে টিএমসিপি নেতার তোলা প্রশ্ন বৃহস্পতিবারের বৈঠকে লুফে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্থায়ী উপাচার্য, স্থায়ী রেজিস্ট্রার, স্থায়ী পরীক্ষা নিয়ামক নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নকে একই ভাবে গুরুত্ব দিয়ে কোনও সমাধানসূত্র বাতলে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত উপকার হতো বলে মনে করছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীদের বড় একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy