Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ফের ভোট নয় আজ, গণনাও সেই তিমিরে

বিধাননগর ও আসানসোল পুর-নিগম এবং বালি পুর এলাকার ১৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচন-পরবর্তী জটিলতা বহাল রইল। অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার দায়িত্ব নিলেও এ দিন রাত পর্যন্ত পুনর্নির্বাচন কিংবা গণনা নিয়ে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

বিধাননগর ও আসানসোল পুর-নিগম এবং বালি পুর এলাকার ১৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচন-পরবর্তী জটিলতা বহাল রইল। অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার দায়িত্ব নিলেও এ দিন রাত পর্যন্ত পুনর্নির্বাচন কিংবা গণনা নিয়ে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে, আজ, বৃহস্পতিবার ওই তিন এলাকার কোথাও যে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে না, সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন অস্থায়ী কমিশনার। কমিশন সূত্রের খবর, পদত্যাগী কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় ঘোষণা করে গেলেও ৯ অক্টোবর ভোট গণনা হচ্ছে না। কারণ এ বিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেননি তিনি।

আলাপনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘প্রিসাইডিং অফিসার, পর্যবেক্ষক, বিশেষ পর্যবেক্ষক— সব রিপোর্ট এবং ফাইলপত্র পরীক্ষা করেছি। এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। সব দিক এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’’ কমিশনের এক কর্তা যদিও জানালেন, পঞ্চায়েত ও পুরভোট পরিচালনার ম্যানুয়াল অনুযায়ী, ভোট গণনার অন্তত তিন দিন আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থীদের তা জানাতে হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হয়। এই পদ্ধতি মানতে হলে শুক্রবার গণনা সম্ভব নয়।

তা হলে উপায়?

আলাপনবাবুর বক্তব্য, গণনার তিন দিন আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথা ম্যানুয়ালে থাকলেও নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিতে এমন কিছুর উল্লেখ নেই। তাই দরকার হলে কমিশন ম্যানুয়াল পরিবর্তন করতেই পারে। এ ব্যাপারে আইনি শলা-পরামর্শ চলছে।

এই সোমবার চার তৃণমূল নেতার চার ঘণ্টার ম্যারাথন চাপের মুখে সুশান্তবাবু ঘোষণা করেছিলেন, গণনা হবে ৯ তারিখ। শাসক দলের নেতারা এখনও বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ওই দিনই ভোট গণনা চাইছেন তাঁরা। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, ৯ তারিখ গণনা না হলে পুরভোটের ফল বের হতে বেশ কিছু দিন গড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, ১১ অক্টোবর রাজ্যে টেট পরীক্ষা। তার প্রস্তুতির জন্য ১০ তারিখ থেকেই পুলিশি বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। ১২ অক্টোবর মহালয়া, ছুটির দিন। ওই দিনও ভোট গণনা কার্যত অসম্ভব। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর কথায়, ‘‘৯ তারিখ ভোট গণনার কথা কমিশনই জানিয়েছিল। আশা করব, তা বহাল থাকবে। কমিশন যতক্ষণ গণনার দিন ঘোষণা না করছে, আমাদের অবস্থান চলবে।’’ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘‘পুনর্নির্বাচন বা গণনার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল কি হয়নি— সেটা আমাদের বিচার্য নয়। কমিশন দ্রুত আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবে, আমরা সেই আশায় রয়েছি।’’

কমিশনের দোরগোড়ায় শাসক দলের অবস্থান প্রসঙ্গে অস্থায়ী কমিশনার অবশ্য বলেন, ‘‘এ সব কমিশনের বিচার্য বিষয় নয়। বাইরের বিষয়। তিন পুরভোটের নথিপত্র নৈর্ব্যক্তিক ভাবে বিশ্লেষণ করতে কিছুটা সময় লাগবে। কমিশন তার পরেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’’

পুনর্নির্বাচনের প্রশ্নে কমিশন কি ওয়েবক্যাম বা ভিডিও ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নেবে? নাকি কেবল প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়েরি এবং রিটার্নিং অফিসার, পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে? আলাপনবাবু বলেন, ভোটের দিনের প্রায় দু’হাজার ঘণ্টার ফুটেজ কমিশনের কাছে রয়েছে। তা দেখতে সময় লাগবে। তা ছাড়া, প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়েরি বা পর্যবেক্ষকদের ডায়েরি ও রিপোর্ট যেমন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হয়, ভিডিও ফুটেজের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সময়সীমা নেই। আলাপনবাবুর মতে, ভোট-পরবর্তী মামলার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে ভেবেই সম্ভবত ভিডিও ছবি তোলার সিদ্ধান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়েবক্যাম বা ভিডিও ফুটেজ কমিশনে জমা দেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া ছিল না। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই তা জমা দেওয়ার কথা। আবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়মাবলিতেও ছবি দেখে কোনও পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিধিবদ্ধ নির্দেশ নেই। এ ক্ষেত্রেও সব রকম দলিল-দস্তাবেজ এবং অন্যান্য তথ্য নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

এ দিন সওয়া দু’টো নাগাদ কমিশনের অফিসে আসেন আলাপনবাবু। এর পর দফায় দফায় কমিশনের অফিসার ও পুরভোটের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে কমিশনের নিজস্ব আইনজীবী এবং শহরের এক সলিসিটর ফার্মের সঙ্গেও পরামর্শ করেন। কমিশন সূত্রের খবর, ভিডিও ফুটেজ এবং ওয়েবক্যামের ফুটেজ দেখা না-দেখার আইনি দিকটি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। পদত্যাগী কমিশনার বেশ কিছু বুথে গোলমাল এবং অনিয়মের বিষয় চিহ্নিত করে গিয়েছিলেন। সেগুলি কী কী, তা-ও খতিয়ে দেখেছেন আলাপনবাবু। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকারি রিপোর্টে জুতসই ব্যাখ্যা না থাকায় পর্যবেক্ষক এবং বিধাননগরের মহকুমাশাসকের কাছেও বিস্তারিত জানতে চান তিনি। মূলত পুনর্নির্বাচনের প্রশ্নেই এই সব আলোচনা চলেছে। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

বৃহস্পতিবার ফের এক দফা আলোচনায় বসবেন সদ্য দায়িত্ব নেওয়া অস্থায়ী কমিশনার। তার পরেই তিনি পুনর্নির্বাচন এবং গণনার দিন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি যে শুধু এই কাজটি করার দায়িত্ব নিয়েই কমিশনে এসেছেন, প্রকারান্তরে তা-ও বুঝিয়ে দেন আলাপনবাবু। নবান্ন সূত্রের খবর, এ বারের নির্বাচনপর্ব মিটে গেলে স্থায়ী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার অমরেন্দ্রকুমার সিংহের নাম বিবেচিত হচ্ছে। ১৯৮২ ব্যাচের ওই অফিসার মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন। ভূমিসচিব হিসেবে অবসর নেওয়ার পরেও তাঁকে আরও প্রায় দেড় বছর পুনর্নিযুক্ত রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অগস্ট মাসে তিনি ওই পদ থেকে পাকাপাকি ভাবে অবসর নেন।

এর মধ্যেই নানা মহল থেকে নির্বাচন বাতিলের দাবি উঠেছে। এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে ‘সেভ ডেমোক্রেসি ফোরাম’-এর পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। তিনটি পুরসভার ভোট বাতিল করে নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি তোলা হয়েছে ওই স্মারকলিপিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE