Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘ভোটারহীন’ সাবেক ছিটেই প্রচার

ভোটার তালিকায় এখনও নাম ওঠেনি। কিন্তু সেজন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে রাজী নন যুযুধান রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে নেতা-কর্মীরা। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের মন জয়ে এলাকায় গিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোর কাজও শুরু করেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে চলছে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে কৃতিত্ব দাবির লড়াই।

সাবেক ছিটে প্রচারে দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। —নিজস্ব চিত্র।

সাবেক ছিটে প্রচারে দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

ভোটার তালিকায় এখনও নাম ওঠেনি। কিন্তু সেজন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে রাজী নন যুযুধান রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে নেতা-কর্মীরা। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের মন জয়ে এলাকায় গিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোর কাজও শুরু করেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে চলছে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে কৃতিত্ব দাবির লড়াই। তাই আপাতত ‘ভোটারহীন’ সাবেক ছিটমহলেই জমে উঠেছে ভোটের লড়াই।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সাবেক ছিটমহল এলাকা মশালডাঙায় ভোট প্রচারে যান দিনহাটা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। সেখানে একটি বৈঠকও করেন তিনি। রবিবার পোয়াতেরকুঠি লাগোয়া এলাকায় প্রচারে যান ওই কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর। ছিটমহল বিনিময়ের কৃতিত্ব নিয়ে জোরালো সওয়াল করছেন তাঁরা। বিজেপি, কংগ্রেসের নেতারাও আবার একই দাবি করছেন। উদয়নবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করাতেই ছিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। এ দিন এলাকার ২৩ জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আগে কেউই ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিকত্বহীনতার সমস্যা নিয়ে ভাবেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই ওই বাসিন্দারা স্বাধীনতার ছয় দশক পরে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাবেক ছিটমহলের বিভিন্ন এলাকা। সেখানকার বাসিন্দাদের নামও ভোটার তালিকায় উঠতে চলেছে।”

বিরোধীরা অবশ্য তা মানতে রাজী নন। বামেদের দাবি, ছিটমহল বিনিময় তাঁদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর বলছেন, “ওই সমস্যা মেটানোর দাবিতে প্রথম থেকেই বামেরা সরব ছিলেন। তা সবাই জানেন। বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকায় উঠলেই প্রচারে নামব।” ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক আবদুর রউফ বলেন, “আমি নিজে মশালডাঙা, কচুয়ার মত বিভিন্ন সাবেক ছিটমহলে প্রচারে গিয়েছি। সাড়াও মিলছে।”

কৃতিত্ব দাবিতে বসে নেই বিজেপি ও কংগ্রেসও। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “সাবেক ছিটমহলে দলের শাখা তৈরি হয়েছে। যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলেই প্রচার শুরু হবে। মোদীজির উদ্যোগে ওই সমস্যা মিটেছে সেটা আমরা বলছি।” কংগ্রেস নেতা কেশব রায়ের বক্তব্য, “ইন্দিরা গাঁধীর আমল থেকে ছিট বিনিময়ের উদ্যোগ শুরু হয়। তৃণমূলের বিরোধিতা না থাকলে মনমোহন সিংহের আমলে বিনিময় বাস্তবায়ন হত। আসল কাজ কংগ্রেসই করেছে।”

ভোটার তালিকায় এখনও নাম না থাকলেও সাবেক ছিটবাসীদের মন জয়ে কেন এমন তৎপরতা? ওই বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকায় তোলার ব্যাপারে প্রশাসনিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সবুজ সঙ্কেত মিললে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হবে। তালিকা থেকে তৈরি থেকে সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরির জন্য দু’সপ্তাহের মত সময় লাগবে। প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দশ হাজারের বেশি বাসিন্দার নাম তালিকায় উঠতে পারে। মেখলিগঞ্জ, সিতাই, শীতলখুচি, দিনহাটা, তুফানগঞ্জ এলাকার ৪২টি বুথে ওই বাসিন্দাদের ভোটদানের বন্দোবস্ত করার ব্যাপারে পরিকল্পনা হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভারতের ১১১টি ও বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। ঠিকানা বদলে এ দেশের কোচবিহার জেলায় আসেন এখন বাংলাদেশের আওতাধীন সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের ৯২১ জন বাসিন্দা। সাবেক বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৫,৮৫৬ জনও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁদের মধ্যে দশ হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছেন। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “নির্দেশ এলে সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকায় তোলার কাজ শুরু হবে।”

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলির ‘প্রতিশ্রুতি’ আদায় করে নিতে চাইছেন ছিটমহলের বাসিন্দাদের সংগঠন নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির কর্তারা। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জমির নথি, এলাকার বাসিন্দাদের মাধ্যমে সমস্ত উন্নয়ন কাজ, চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থার মত দাবিতে প্রার্থীদের কাছে প্রতিশ্রুতি চাইবে কমিটি। মশালডাঙায় সংগঠনের তৈরি মঞ্চে প্রচারে যাওয়া সব দলকে বক্তব্য জানানোর আমন্ত্রণ জানাবেন তাঁরা। ওই কমিটির মুখ্য সম্বন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “স্থানীয় নেতাদের অনেকের ওপর আস্থা নেই বলেই আমরা প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাখতে চাইছি।” উদয়ন গুহ এ দিন প্রচারে গেলেও ওই মঞ্চে যাননি। উদয়ন বলেন, “কোনও সংগঠনের ব্যানারে বিরোধীদের সমালোচনা করলে কেউ প্রতিবাদ জানাতে পারেন। তাই যাইনি। এলাকায় সভা করে যা বলার সভা করে বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news chitmahal vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE