Advertisement
১৯ মে ২০২৪

শুভ কামনার মাইকবাজিতে পরীক্ষা মাথায়

ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে— অনেক যন্ত্রণায় বলতে বাধ্য হয়েছিলেন কবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে— অনেক যন্ত্রণায় বলতে বাধ্য হয়েছিলেন কবি।

মাইকগুলো সরিয়ে নাও, আমাদের বাজছে— পরীক্ষার্থীরা এ-কথা বলে কী করে!

ওই মাইক যে বাজাচ্ছে শাসক দলের দুই শিবির! এবং সেই মাইকে চলছে শুভেচ্ছা জানানোর হুড়ুদ্দুম প্রতিযোগিতা!! ফলে পরীক্ষা দেবে কি, শুভেচ্ছার ঘায়েই প্রাণ ওষ্ঠাগত! মাইকের পাশাপাশি ফুলেল শুভেচ্ছার অত্যাচারও কিছু কম ছিল না।

জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, মাধ্যমিক দিতে গিয়ে বুধবার শুভেচ্ছা-বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। এবং এক-এক জায়গায় বিড়ম্বনা এক-এক রকমের! কার শুভেচ্ছা পরীক্ষার্থীদের কানে আগে পৌঁছবে, তা নিয়ে কোথাও কোথাও মাইক বাজানোর প্রতিযোগিতা চলেছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। কোথাও আবার পরীক্ষার হলে ঢোকার মুখে নেতা-মন্ত্রীদের শুভেচ্ছার ঠেলা সামলাতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আতান্তরে। জলের বোতল, ফুলের তোড়া সামলাতে কোনও কোনও কোনও পরীক্ষার্থীর হাত থেকে পড়ে গেল বই, পেন। পরীক্ষার্থীর মুখ শুকিয়ে আমসি।

বাগুইআটির অর্জুনপুর মোড়ে এ দিন সকাল থেকে একই জায়গায় চোঙা বেঁধেছিল তৃণমূলের যুযুধান দু’পক্ষ। পরস্পরকে টেক্কা দিতে মাইকে চিৎকার করে চলেছে দুই শিবিরই। কে যে কী বলতে চাইছে, বুঝে ওঠা দায়। মাইকের দাপাদাপিতে কান ঝালাপালা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের! উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও ঘাড়ে এসে পড়েছে। শাসক দলের মাইক-বাজিতে সেই পরীক্ষার্থীদেরও মাথায় উঠছে পড়া। দু’পক্ষের ঘোষণার সারমর্ম অবশ্য একটাই। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টোটো সফর এবং কলম ও জলের বোতল সরবরাহ। এক পক্ষের নেতা বিধাননগর পুর নিগমের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তী। যিনি আবার রাজারহাট যুব তৃণমূলের সভাপতিও। অন্য পক্ষ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রীতা সাহার অনুগামী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন সকাল ৯টা থেকে দু’পক্ষই নেমে পড়ে ‘মাইক যুদ্ধ’-এ। এক পরীক্ষার্থীর মায়ের অভিযোগ, ‘‘শেষ মুহূর্তে যে বইয়ের পাতা উল্টে দেখবে মেয়েটা, সেটাও হল না। মাইকের জ্বালায় একেবারে সিঁটিয়ে গেল মেয়েটা। একেই ভয়ে প্রায় কিছুই খাচ্ছে না কয়েক দিন ধরে। এ দিন তো কিছু খাওয়াতেই পারলাম না।’’

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিনে প্রায় একই রকম বিড়ম্বনায় অন্য কিছু পরীক্ষার্থীও। কারণ, এ দিন পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে পথে নেমেছিলেন শাসক দলের মন্ত্রী-নেতারা। শাখাওয়াত মেমোরিয়াল, সাউথ পয়েন্ট, কমলা গার্লসের মতো কয়েকটি স্কুলে পরীক্ষার্থীদের ফুল ও জলের বোতল বিলি করেন এক মন্ত্রী। কোনও কোনও পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছে শিবির গেড়ে বসা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রায় জোর করেই জলের বোতল গুঁজে দিয়েছে পরীক্ষার্থীদের হাতে। জীবনের প্রথম পরীক্ষার ঠিক আগে হলে ঢোকার মুখে হঠাৎ এই প্রায় ভিআইপি-শুভেচ্ছায় বিব্রত পরীক্ষার্থীদের অনেকেই।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এখন প্রকাশ্যে মাইক বাজানো নিষেধ। শাসক দলের কাউন্সিলারেরা তা হলে প্রকাশ্যে মাইক বাজালেন কী ভাবে? কেনই বা পুলিশ কিছু না-বলে নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল?

দুই শিবিরের মঞ্চেই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর ছবি দেওয়া ব্যানার। তাতে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে লেখা শুভেচ্ছা বার্তা। তৃণমূল সূত্রের খবর, এতে পূর্ণেন্দুবাবু নিজেও ক্ষুব্ধ। দলের অন্দরে তিনি এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘সব শুনেছি। দুই কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলব।’’

তবে এ-সব বিড়ম্বনা মিটিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পরে মোটের উপরে খুশি পড়ুয়ারা। এ বছর প্রথম নতুন ধাঁচের প্রশ্নপত্রের মুখোমুখি তারা। এই প্রশ্নপত্রে অনেক বেশি নম্বর তোলার সুযোগ আছে বলে জানাল বেশ কিছু পরীক্ষার্থী। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের এক পড়ুয়া বলল, ‘‘নতুন ধরনের প্রশ্নে কী ভাবে লিখতে হবে, তা নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। তবে পরীক্ষা দিয়ে খুবই ভাল লাগছে।’’ নবদ্বীপের একটি স্কুলের বাংলা শিক্ষক অপূর্ব নাথ অবশ্য জানাচ্ছেন, প্রশ্নপত্র সহজ হলেও খুঁটিয়ে পড়া জরুরি। ‘‘আবার এই ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষার হলে উত্তর সংগ্রহ করে নেওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়,’’ বলছেন ওই শিক্ষক। মাধ্যমিকের প্রথম দিনে বাংলা পরীক্ষা ভালয় ভালয় পার করে দেওয়ার পরে বাকি দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Noise pollution:
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE