Advertisement
E-Paper

রূপা-কাণ্ডের চার্জশিট স্বস্তিই দিল প্রতাপকে

ঘটনার পরে তদন্তকারীরা ওঁকে ছোঁয়ার সাহস দেখাননি। জামিনের বিরোধিতা করেননি সরকারি কৌঁসুলিও। ফলে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। এ বার সেই প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে আদালতে দু’টো মামলায় দু’টো চার্জশিট জমা দিল পুলিশ।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৯
প্রতাপ সাহা এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

প্রতাপ সাহা এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়

ঘটনার পরে তদন্তকারীরা ওঁকে ছোঁয়ার সাহস দেখাননি। জামিনের বিরোধিতা করেননি সরকারি কৌঁসুলিও।

ফলে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। এ বার সেই প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে আদালতে দু’টো মামলায় দু’টো চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। একটা বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলা সংক্রান্ত, অন্যটি ওসি নিগ্রহের ।

তবে লালবাজারের খবর, পুলিশ হেনস্থায় আলিপুরের ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় চার্জশিট দেওয়া হলেও রূপা-মামলায় তিনি বিজেপি নেত্রীকে খুনের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন। এলাকার আর এক তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্রেরও নাম আছে দুই চার্জশিটে। সম্প্রতি আলিপুর কোর্ট চত্বরে পুলিশকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে। বিপ্লববাবু অবশ্য এখনও অধরা।

একই ভাবে প্রতাপও নিজের তল্লাটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যাচ্ছে। বিগত কলকাতা পুরভোটের দু’দিন আগে, গত ১৪ এপ্রিল আলিপুরের গোপালনগর মোড়ে বিজেপির নির্বাচনী সভায় হামলা ও সেখানে রূপাদেবীকে হেনস্থার জন্য বিজেপির তরফে প্রতাপ-সহ আলিপুরের একাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মীর নামে আলিপুর থানায় নালিশ দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশের তরফেও প্রতাপের নামে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হয়। ওঁর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশকে নিগ্রহের অভিযোগ আনেন আলিপুর থানার এক অফিসার।

জামিন-অযোগ্য ধারায় দু’টি মামলা দায়ের হয়েছিল একই দিনে। কিন্তু আলিপুর আদালত-সূত্রের খবর, রূপা-মামলার গুরত্ব কমাতেই চার্জশিটে খুনের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির মতো ধারা বাদ গিয়েছে। দেওয়া হয়েছে জামিন-যোগ্য ধারা। অন্য দিকে তদন্তকারীদের দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেই চার্জশিট তৈরি হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি।

তবে পুলিশের ভূমিকা দেখে তোপ দেগেছে বিরোধীরা। তাদের আক্ষেপ, শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বাঁচানোই এখন পুলিশের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘‘তা হলে সে দিন ওখানে কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছিল। খেলাচ্ছলেই আমাদের মেরেছে!’’— বৃহস্পতিবার কটাক্ষ করেছেন রূপা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওঁরা (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার) ভেবে পাচ্ছেন না, কী ভাবে আমাকে ফাঁসাবেন। কয়েকটা মিথ্যে মামলা আমার নামে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, হার ছিনতাইয়ের নালিশও বাদ যায়নি!’’ কাশীপুরে প্রকাশ্যে গুলিচালনার আট মাস বাদেও অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতা কী ভাবে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, প্রতাপ প্রসঙ্গে তারও উল্লেখ শোনা যাচ্ছে বিরোধীদের মুখে।

এ দিকে ওসি নিগ্রহের চার্জশিটে প্রতাপ অভিযুক্ত হয়েছেন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ নম্বর ধারায়, যা কিনা জামিন-অযোগ্য। এখানে উল্টোটা হল কেন?

পুলিশমহলের অন্দরের ইঙ্গিত, নিচুতলার চাপেই লালবাজারকে এ হেন ‘কড়া’ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। চার্জশিটে বলা হয়েছে, সে দিন গোপালনগর মোড়ে তৃণমূল-বিজেপির গোলমাল চলাকালীন এক পুলিশকর্মী ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করছিলেন। প্রতাপের লোকজন তাঁকে বাধা দেয়। আলিপুর থানার তদানীন্তন ওসি’র উপরেও তারা চড়াও হয়। বস্তুত পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রতাপ ওই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ‘‘এমনিতেই শাসকদলের নেতা-সাংসদদের হাতে পুলিশ হেনস্থার পরের পর ঘটনার জেরে বাহিনীর নিচুতলায় অসন্তোষ যথেষ্ট। এমতাবস্থায় প্রতাপকে ছাড় দিলে তা জোরদার হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা ছিল।’’— পর্যবেক্ষণ লালবাজারের এক কর্তার।

তাই সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে ওই তৃণমূল নেতাকে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ দিন বিকেলে প্রতাপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কৌঁসুলি অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘‌আমরা মামলা খারিজের আবেদন করার কথা ভাবছি।’’

pratap saha rupa gangopadhay non-bailable warrant chargesheet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy