কার্শিয়াঙে দফতর উদ্বোধনে মন্ত্রী।
পাহাড়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের শাখা খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মামলার হুমকি দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
সোমবার কার্শিয়াংয়ে নতুন শাখা কার্যালয় উদ্বোধন করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। কার্শিয়াংয়ের গিদ্দাপাহাড়ে সার্কিট হাউসের একটি ঘরে অস্থায়ীভাবে এই কার্যালয় চালু করে দেওয়া হল। পরে স্থায়ী ঘর তৈরি হলে সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে বলে দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্তকে ভাল চোখে দেখছেন না মোর্চা নেতৃত্ব। দফতরের শাখা উদ্বোধনের পরেই নিজেদের আপত্তি জানিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক রোহিত শর্মা, মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পংয়ের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রীরা। সন্ধ্যায় দলীয় তরফে সরকারিভাবে মামলার হুমকি দিয়ে রাখলেন মোর্চার জিটিএ সদস্য অনীত থাপা। সন্ধ্যায় তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এই শাখা খোলার সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য জিটিএ গঠন করা হয়েছে। তাতে কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্মতি রয়েছে। এরপরেও অন্য উন্নয়ন দফতর এখানে অপ্রয়োজনীয়। জিটিএর কারও সঙ্গে কোনও আলোচনাও করা হয়নি। আমরা আদালতে মামলা করব।’’
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সূর্যকুমার যাদব। সভা ভরাতে প্রায় ২০টি গাড়িতে করে পতাকা লাগিয়ে পাহাড়ের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আনা হয়েছিল, পাহাড় তৃণমূলের সভাপতি রাজেন মুখিয়া, বিনি শর্মা সহ বহু নেতাকেই দেখা গিয়েছে। অথচ যেখানে এই কার্যালয় খুলল সেখানকার বিধায়ক কিংবা জিটিএর কোনও সদস্যদের এখানে ডাকা হয়নি। এমনকী এখানে শাখা খোলা হয়েছে তাঁরা জানেন না বলেও জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন ছোট অনুষ্ঠান তাই তাঁদের কাউকে ডাকা হচ্ছে না। এরপরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পরবর্তী সফরে উত্তরবঙ্গে এলে তিনি কার্শিয়াংয়ে যাবেন। তখনই তাঁদের ডাকা হবে।’’ শুধু তাই নয়, মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার কাছে পাহাড়ের তিন বিধায়ক পাহাড়কে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সেই মতই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের শাখা এখানে খোলা হচ্ছে।’’
এ মন্তব্যেই চটেছেন মোর্চা নেতারা। বিধায়ক রোহিত শর্মা মনে করছেন, আসন্ন বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের জনতার মন পেতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই শাখা খোলা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘জিটিএ নিজেই একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ফলে আলাদা করে কোনও উন্নয়ন বোর্ডের দরকার নেই। তাছাড়া আমাদের উন্নয়নের দাবি করতে হলে জিটিএর মাধ্যমে করার দাবি জানাব। মন্ত্রীকে আমরা এমন কিছু বলিনি। এই সময়ে পাহাড়ে ওই দফতরের শাখা খোলার পিছনে রাজনীতি ছাড়া কিছু নেই।’’ এমনকী এদিন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণও তাঁদের জানানো হয়নি বলে তিনি জানান। এমন কোনও দাবি তিনি কেন কোনও মোর্চা বিধায়কই মন্ত্রীর কাছে করেননি বলে দাবি করেন কালিম্পংয়ের বিধায়ক তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রীও। তাঁর দাবি, দু’বছর আগে তাঁরা বিধানসভায় জিটিএর বরাদ্দ নিয়ে সরব হওয়াতে একবার মন্ত্রী নিজেই তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাঁদের উন্নয়নের জন্য কিছু চাই কি না? তারপরে আর এ বিষয়ে কোনও কথা হয়নি। তিনিও বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষের দাবি অনুযায়ী জিটিএ হয়েছে। জিটিএকে ঠিকমত চালাতে দেওয়াই রাজ্যের কাছে আমাদের দাবি।’’ জিটিএ সদস্য (শিক্ষা) তথা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিও শাখা খোলার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমি দার্জিলিংয়ের বাইরে রয়েছি। তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে কোনও আমন্ত্রণ এসেছে বলে আমার জানা নেই।’’ পরে দলীয় তরফে অনীতবাবু বলেন, ‘‘কোনও বিধায়ক মন্ত্রীকে কোনও অনুরোধ জানাননি। উনি মিথ্যা বলছেন।’’
এর আগেও রাজ্য সরকারের প্রকল্প নিয়ে পাহাড়ে মামলা হয়েছে। গত বছরের শেষ নাগাদ পাহাড়ের তিনটি রাস্তার কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। সম্মতি ছাড়াই কাজ হচ্ছে বলে আদালতের দ্বারস্থও হয় জিটিএ। তার পর থেকে রাস্তাগুলির কাজ বন্ধ। সোমবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ওই মামলাগুলি তুলে নেওয়ার জন্য তিনি জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গকে অনুরোধ করবেন বলে জানান। কিন্তু বিকালেই জিটিএ তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই মামলা তুলে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
মামলাকারী জিটিএ সদস্য পেম্বা শেরিং ওলা জানান, মামলা তুলছি না। কারণ, জিটিএ এলাকায় উন্নয়ন বা রাস্তার কাজ জিটিএ করবে। অন্য দফতর এভাবে তা করতে পারে না। উল্লেখ্য, গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকায় কালিম্পঙের পায়ুং ও লোয়ার দালাপচাদ, দার্জিলিঙের গৈরিগাঁও ফাটক ও মানেদারা এবং কার্শিয়াঙের পাঙ্খাবাড়ি রোড, থাপাখালিতে এলাকাগুলিতে তিনটি রাস্তার কাজে হাত দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর।
এ দিন কার্শিয়াংয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের শাখা খোলা হলেও এক বছরের মধ্যে নয়াবাজারে সিভিল ডিফেন্সের জায়গায় তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। জমি হস্তান্তরের কাজ দ্রুত সেরে ফেলা হবে বলে তিনি জানান। এখানে যুগ্ম বা সহ সচিব পদের কেউ না থাকলেও সচিব পর্যায়ের কেউ মাসে একবার অন্তত আসবেন বলে জানান মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে আমি প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শনিবার এখানে দফতরের কাজ দেখতে আসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy