এক সময়ের গর্ব এই কারখানা এখন পড়ে রয়েছে বন্ধ অবস্থাতেই। কবে খুলবে এর তালা, আশায় উত্তরবঙ্গের মানুষ। ছবি: গৌর আচার্য।
খুলুক বন্ধ চা বাগান
ডুয়ার্স তরাই মিলে এখনও অন্তত ২০টি চা বাগানে অচলাবস্থা চলছে। চা বাগান বন্ধ হওয়ার প্রবণতা নতুন কোনও ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এই বাগান বন্ধের প্রবণতা চা শিল্পের সঙ্গী। যদিও, শিল্পের সঙ্গে সংযুক্তরা দাবি করে থাকেন, গত কয়েক দশকে চা বাগান বন্ধ হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এক সঙ্গে ৩৫টি চা বাগান বন্ধ থাকার নজিরও রয়েছে ডুয়ার্সে। বর্তমানে ৮টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে। অচলাবস্থা চলছে আরও ১৬টি চা বাগানে, যার মধ্যে একটি বৃহৎ সংস্থার ১৫টি বাগানও রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বন্ধ চা বাগানের লিজ বাতিল করেছে রাজ্য সরকার। তবু বাগানের কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়নি। অন্য দিকে, ন্যূনতম মজুরির দাবিতেও গত দু’বছর ধরে চা শ্রমিকদের টানা আন্দোলন চলছে। সব মিলিয়ে চা শিল্পের পক্ষে সময়টা খুব ‘ভাল’ নয় বলে মনে করছে শিল্পমহল। চা শিল্পের সঙ্গে ডুয়ার্সের অর্থনীতির সরাসরি যোগ রয়েছে। কোনও বাগান বন্ধ হয়ে গেলে সেই জনপদের বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে। সে কারণেই চা শ্রমিক-মালিকের সঙ্গে সাধারণ বাসিন্দাদেরও প্রত্যাশা, সব বন্ধ বাগান খুলে যাক, ঘনঘন বাগান বন্ধ হওয়ার প্রবণতাও এবার বন্ধ হোক।
পর্যটনেই পরিচিতি
রাজ্য তো বটেই গোটা দেশের কাছেই পর্যটনে পরিচিত লাভ করেছে উত্তরবঙ্গ। তবে উত্তরবঙ্গের পর্যটন পরিকাঠামো কতটা প্রস্তুত, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। থমকে রয়েছে পর্যটন প্রসারেরও একগুচ্ছ প্রকল্প। ডামডিম, সাতখাইয়া, মঙ্গলবাড়ি, ইনডং এলাকাতে নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলেও এখনও তা চালু করতেই পারেনি দফতর। গজলডোবা ট্যুরিজম হাবে বেসরকারি লগ্নির আশ্বাস শুনেই বছরের পর বছর ঘুরছে। রাজ্যের পর্যটন দফতরের কোনও স্থায়ী অফিসও নেই ডুয়ার্সে। পর্যটকদের অনেকের অভিযোগ, ঘুরতে এসে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়তে হয়। দ্বিগুণ, তিন গুণ ভাড়া দিলে তবেই গাড়ি পাওয়া যায়। লাটাগুড়ির মতো পর্যটক বহুল এলাকায়। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরাজীর্ণ গ্রামীণ হাসপাতাল ছাড়া নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। বন দফতর এবং বন উন্নয়ন নিগম, পর্যটন উন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন পর্যটক আবাসের বুকিং করার উপায় ভিন্ন ভিন্ন। পর্যটকদের একাংশের দাবি বুকিঙেও এক জানালা নীতি চালু হোক। নতুন নতুন এলাকা পর্যটনের জন্য বেছে পরিকাঠামো তৈরি করে বেসরকারি বিনিয়োগ আহ্বান করুক সরকার।
বেত শিল্পের সুযোগ
ডুয়ার্সের বেতশিল্পীদের জন্যে ‘বেত হাব’ তৈরি করে দেবার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। যদিও গত কয়েক বছরে সেই উদ্যোগ শুরু হয়নি। ডুয়ার্সের মঙ্গলবাড়ি এবং লাটাগুড়ি এলাকায় বেতশিল্পীরা রয়েছেন। পরিবারের সকল সদস্যেরা মিলেই নিজের বাড়িতেই বেতের আসবাব বানিয়ে তা নিজ উদ্যোগেই বিক্রি করেন। বেত হাব তৈরি হলে উন্নত কারিগরী সাহায্য, প্রশিক্ষণ যেমন মিলবে তেমনি বিপণনের ক্ষেত্রও অনেক বিস্তৃত হত। বেতের তৈরি জিনিসের কদর আজও রয়েছে। এ বার অন্তত যাতে বেত হাব তৈরি হোক সেটাই এবারে চাইছেন ডুয়ার্সের বেতশিল্পীরা। হাব তৈরি হলে বেতশিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া শিল্পীদের পরবর্তী প্রজন্মও পারিবারিক কাজে আকৃষ্ট হবেন বলেই ধারণা তাঁদের। বেতশিল্পের হাব তৈরি হলে ভিনরাজ্য এবং বিদেশের ক্রেতারাও আসবেন। তাতেই এলাকার অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
শিল্পতালুক, টি পার্ক
জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রানিনগর শিল্প তালুকের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ। সিংহভাগ সংস্থার দফতরে তালা। অনেক প্লট খালি পড়ে রয়েছে। আমবাড়ি, ডাবগ্রাম শিল্পতালুকেও শিল্প সংস্থার অভাব। আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতা ও জয়গাঁও এলাকার মধ্যে একটি জায়গায় পরিকাঠামো গড়ে শিল্প তালুকের দাবি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি সেখানে রাস্তা, জল ও বিদ্যুতের পরিকাঠামো হলে শিল্পতালুক গড়ে ওঠা সম্ভব। পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরে একটি শিল্পতালুক রয়েছে। এখানে দশটি ছোট কারখানা রয়েছে। তবে ওই শিল্প তালুকের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। নেই কোনও নিকাশি। জলের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ ছাড়া নিরাপত্তারও তেমন ব্যবস্থা নেই। ফলে এই শিল্প তালুকের ব্যবসায়ীদেরও এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা বাড়ছে। অন্য দিকে, সাত বছর আগে জমি বণ্টন হলেও, টি পার্ক ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ৮৪ একর জমিতে দেড়শো প্লট তৈরি করে জমি বিলি করা হয়েছিল চা শিল্প সংস্থাগুলিকে। বিভিন্ন প্লটে গুদাম, চা কারখানা, পাইকারি মজুত সহ নানা কিছু তৈরির প্রস্তাব ছিল। দু’হাজার আট সালে জমি বিলির পরে একটি গুদাম ছাড়া আর কিছু তৈরি হয়নি জমিতে। নতুন সরকার এই সমস্যা মেটাবে বলেই আশা।
ভেষজ উদ্যান
তপসিখাতা এলাকায় প্রায় ৬০ একর সরকারি জায়গা ফাঁকা রয়েছে। জয়গাটি স্বাস্থ্য দফতরের। ইতিমধ্যে ওই জায়গায় একটি অংশে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আয়ুষ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এলাকায় ভেষজ উদ্যান গড়ার কথা বাম আমল থেকে বলা হলেও আদতে কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। বিচ্ছিন্ন ভাবে সেট্রনিলার চাষ হলেও পূর্ণাঙ্গ ভেষজ উদ্যানের দাবি রয়েছে এলাকায়। সম্প্রতি এলাকায় আয়ুষ হাসপাতালের কাজ শুরু হয়েছে, তবে পুরো উদ্যানের কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।
ফল প্রক্রিয়াকরণ
প্রতি বছরই মালদহ জেলায় প্রচুর আম উৎপাদন হয়। জেলার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গিয়ে তা প্রক্রিয়াকরণ করে লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা। আমের জুস, জ্যাম, জেলি, আচার তৈরি করা হয়। এই জেলাতে দুটি সংস্থা প্রক্রিয়াকরণ করলেও বড় কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি। যার কারণে প্রতি বছরই আম উৎপাদন হলেও লাভের মুখ দেখতে পান না ব্যবসায়ীরা। আম সংরক্ষণ করে রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই জেলাতে। ফলে আমের মরসুমেই ব্যবসা করতে হয় ব্যবসায়ীদের। তাই আম নিয়ে ভারী শিল্প গড়ে তোলার আশায় বুক বেধেছেন তাঁরা। আমের মতো লিচু নিয়েও জেলাতে কোন প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা নেই। এই দুই অর্থকারী ফলকে কাজে লাগাতে পারলে জেলার অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ২০০৮ সালে মালদহ শহর লাগোয়া এলাকায় ফুড পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি ফুড পার্ক গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়ে যায়। ফুড পার্কের জমিও কিনে ফেলেন শিল্পপতিরা। তবে আজও বাস্তবায়িত হয়নি ফুড পার্কটি। এখন কেবল মাত্র একটি সংস্থা আইস ক্রিম তৈরি করছেন। আর বাকি জমি পড়ে রয়েছে। ফুড পার্ক গড়ে উঠলে এখানে আম, লিচু সহ বিভিন্ন পণ্য প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে। এবারের সরকারের কাছে স্বপ্নের ফুড পার্ক বাস্তবায়নের আশা করছেন জেলার শিল্পীরা।
চালু হোক স্পিনিং মিল
সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে রায়গঞ্জের বোগ্রাম এলাকায় উত্তর দিনাজপুর জেলার একমাত্র সরকারি শিল্প স্পিনিং মিল চালু হয়। মিলে তুলো থেকে সুতো উৎপাদন হত। গত পাঁচ বছর ধরে মিলটি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। ২০১১ সালের এপ্রিল মাস থেকে সংস্থাগুলি মিলে তুলো সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় সুতো উৎপাদন কমতে থাকে। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে তুলোর অভাবে মিলে সুতো তৈরির কাজ বন্ধ। উৎপাদন স্বাভাবিক থাকাকালীন প্রতিদিন ওই মিলে গড়ে ৭ হাজার কেজি সুতো তৈরি হত। রাজ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের অধীনস্থ ওই মিলটি রুগণ হয়ে পড়ায় গত ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর মিলের ৫১৪ জন স্থায়ী কর্মীকে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন সরকারি দফতরে নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে সাড়ে ৩৩ একর জমির উপর স্পিনিং মিলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
আধুনিক বিমানবন্দর
সূর্য ডুবতেই সদর দরজা বন্ধ হয়ে যায় বাগডোগরা বিমানবন্দরের। বিমানবন্দরে ‘ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম’ না থাকাতেই রাতের বেলায় বিমান ওঠা-নামা সম্ভব হয় না। এমনকী কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকলেও বিমান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে যায়। গত শীতের মরসুমের পঞ্চাশটিরও বেশি বিমান চলাচল বাতিল করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। রাতের বেলার ওঠানামার সুবিধে না থাকার কারণে বহু আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থা এখনও বাগডোগরা নিয়ে আগ্রহী নয়। ব্যবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ। ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম চালু করা এবং বিমান বন্দর আধুনিকীকরণ করার জন্য রাজ্য সরকারের থেকে প্রায় ২২ একর জমি চেয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই জমি কর্তৃপক্ষ হাতে না পাওয়ায় বিমানবন্ধর পুরোনো পরিকাঠামোতেই থমকে রয়েছে। মানুষের আশা, উত্তরবঙ্গের খুব গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দরটির আধুনিকীকরণ হোক।
সার্কিট বেঞ্চ শুরু হোক
কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ চেয়ে নব্বইয়ের দশকে উত্তাল হয়ে উঠেছিল জলপাইগুড়ি। নানা আন্দোলন-পরিদর্শনের পরে জলপাইগুড়িতেই বেঞ্চ হবে বলে রাজ্য সরকার-হাইকোর্ট সম্মত হয়। জলপাইগুড়িতে বেঞ্চের পরিকাঠামো তৈরি শুরু হয়। বেঞ্চের অস্থায়ী ভবনের জন্য পরিকাঠামো তৈরির সঙ্গে স্থায়ী ভবনের জন্য জমিও অধিগ্রহণ হয়। সেই জমিতে বছর তিনেক আগে শিলান্যাসও হয়। তারপরে ভবনের নকশা নিয়ে হাইকোর্টের কিছু আপত্তিতে নির্মাণ থমকে যায়। সম্প্রতি সেই নকশায় অনুমোদনও মিলেছে বলে দাবি। সব জট কেটে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু হোক, চান সকলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy