অন্য বছর এই সময় গমগম করে ডুয়ার্সের বন বাংলোগুলো। নয় নয় করেও দার্জিলিঙের ম্যালে চোখে পড়ে বিদেশিদের। এ বছর কিন্তু ছবিটা একেবারেই আলাদা। বন বাংলোয় পরপর বুকিং বাতিল। পাহাড়েও মাছি তাড়ানোর অবস্থা। পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে বন উন্নয়ন নিগমের লোকজন, সকলের এক কথা, ‘‘সবই নোট বাতিলের ধাক্কা। জানি না এর জল কত দূর গড়াবে!’’
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে নিগমের ৩২টি বাংলো রয়েছে। ডুয়ার্সের রাজাভাতখাওয়া, সুনতালেখোলা, গরুবাথান, মূর্তি থেকে শুরু করে পাহাড়ের লাভা, লোলেগাঁও, মংপং, লেপচাজগতের বাংলোগুলিতে অনলাইন বুকিংয়ের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু খাওয়া, জঙ্গল সাফারি বা গাড়ি ভাড়া করতে হলে নগদ ছাড়া উপায় নেই। ফলে দিনভর অপেক্ষা করেও পর্যটক পাচ্ছেন না সাফারির চালকেরা। রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ বলেন, “এই সময়ে এত ভিড় থাকে যে বুকিং না পেয়ে ঘুরে যান অনেকে। সেখানে বাংলো সব ফাঁকা পড়ে আছে। সধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। এই অবস্থা যত দিন চলবে, সংস্থার উপরে প্রভাব পড়বে।” শুধু ডুয়ার্সের বন উন্নয়ন নিগমের বাংলোই নয়, দার্জিলিং-এ নভেম্বর মাসে খুব বেশি না হলেও ৬০ শতাংশ হোটেলে বুকিং থাকে। কিন্তু ম্যাল রোডের এক হোটেল ম্যানেজার দেবীপ্রসাদ সরকার বলেন, ‘‘পরপর তিনটে বড় দল বুকিং বাতিল করে দিয়েছে। আমাদের হোটেলে ১৯টি ঘর, এখন পর্যটক রয়েছে মাত্র ২টিতে।’’ ফলে কোনও হোটেল তড়িঘড়ি কার্ড সোয়াইপ মেশিন বসাচ্ছে, কোথাও আবার মোবাইলে টাকা মেটানোর অ্যাপ ডাউনলোড করা হচ্ছে। ম্যালেই শীতের পোশাক-সহ বাহারি জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন সুনীল তামাঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশি পর্যটক তো দেখতেই পাচ্ছি না। সব খাঁ খাঁ করছে। যাঁরা আসছেন, তাঁদের কেউ দোকানে দরদাম করে চলে যাচ্ছেন, কেউ বাতিল নোট চালানোর চেষ্টা করছেন।’’
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘বিদেশিরা হোটেল বুকিং-সহ বেশির ভাগ খরচ কার্ডে বা অনলাইনে করেন। কিন্তু এমন কিছু ঘোরার জায়গা রয়েছে, যেখানে নগদ টাকাই দিতে হয়। সেখানে আর পাঁচশো-হাজারের নোট চলছে না।’’ বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে টাকার রাখার পরিমাণ মাসে ৫ হাজার থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার করা হলেও, টাকা ভাঙাতে পারছেন না তাঁরা। এক্সচেঞ্জ কাউন্টারগুলি ঠিকঠাক টাকা দিতে পারছে না। শুধুমাত্র ফুলবাড়ি আইসিপিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের আসার সংখ্যা ৩০-৩৫ জন থেকে কমে ১০ জনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, পরিস্থিতি এমন চললে বড়দিনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ১৫-২০ শতাংশ কমে যাবে। এ দেশের পর্যটকদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্য জায়গায় বলে মনে করেন সম্রাটবাবু। তিনি বললেন, ‘‘সঞ্চয়ের টাকায় এখানকার মানুষ ঘুরতে বেরোন। সব টাকা তাঁরা ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছেন, কিন্তু প্রয়োজন মতো তুলতে তো পারছেন না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’ এই অবস্থায় উত্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটাই আশঙ্কা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টাকার জোগান না বাড়লে এর পর হয়তো কোপ পড়বে বড়দিনের বুকিংয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy