সামিল: চা বলয়ের জনজাতি নেতা রাজেশ লাকড়ার সঙ্গে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ও রাজ্য তৃণমূলের সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র
একই দিনে উত্তরবঙ্গের চা বলয়ের দুই জনজাতি নেতাকে দলে টানল তৃণমূল। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লার একদা পড়শি এবং সতীর্থ রাজেশ লাকড়া সোমবার দুপুরে কলকাতায় গিয়ে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের হাত থেকে পতাকা নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। এ দিন বিকেলে নাগরাকাটার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তথা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার সঞ্জয় কুজুরের হাতে জলপাইগুড়ি জেলা পার্টি অফিসে পতাকা তুলে দিয়েছেন জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও সঞ্জয় আগে থেকেই তৃণমূলেরই কৃষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
লোকসভা ভোটের পর থেকে চা বলয় তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দলের নেতাদেরই দাবি। লোকসভায় চা বলয়ের ভোটেই জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার দু’টি আসনে বিজেপি বিপুল মার্জিনে জিতেছিল বলে তৃণমূলের নেতারা মনে করেন। তার উপরে দিনকয়েক আগেই নাগরাকাটার বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ বার দুই ‘প্রভাবশালী’ নেতাকে দলে টেনে চা বলয়ে ভোটের আগে তৃণমূল দলের ‘ফরওয়ার্ড লাইন’ মজবুত করে রাখল বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজেশ লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বাসিন্দা। শিক্ষিত যুবক রাজেশ ‘টাইগার’ নামেই বেশি পরিচিত। কিছুদিন আগে গুরুংদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন তিনি। তাঁকেই দলে টেনে তৃণমূল কৌশলী পদক্ষেপ করল বলে মনে করছে ডুয়ার্সের রাজনৈতিক নেতারা। একসময়ে জন বার্লাদের সঙ্গেই আদিবাসী বিকাশ পরিষদে নাম লিখিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তথা প্রবীণ নেতা তেজকুমার টোপ্পোর জামাই হওয়ায় ডুয়ার্স-তরাইয়ের আদিবাসী সমাজের সব অংশের সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। এতদিন তিনি রাজনীতির বাইরে ছিলেন। সম্প্রতি ‘মূলনিবাসী আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’ বলে নিজের একটি সংগঠনও করেছিলেন। উদ্দেশ্য, ডুয়ার্স-তরাইয়ের আদি বাসিন্দা ‘কালো চেহারার জনজাতি’ মানুষদের অধিকারের জন্য লড়াই করা। অল্প সময়েই তাঁর সংগঠন শক্তিশালী হয় বলে দাবি। সম্প্রতি তিনি চালসার শালবাড়ি মোড়ে থাকতে শুরু করেছেন বলে খবর। বিজেপি সাংসদ জন বার্লার মন্তব্য, ‘‘উনি (রাজেশ লাকড়া) ভোটে দাঁড়িয়ে নিজের বুথ থেকে জিতে দেখালে তার পর মন্তব্য করব।’’
অন্যদিকে, নাগরাকাটার ব্যবসায়ী সঞ্জ কুজুরকে দলে টানতে পারাও বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সাফল্য বলে দাবি করা হচ্ছে। সঞ্জয় অবশ্য ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত কাজে আগে থেকেই শাসকদলের একাংশের ঘনিষ্ঠ। ওই এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য তথা সহকারী সভাধিপতি দুলাল দেবনাথের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে সঞ্জয়র বাড়িতে। সেই সুবাদে তৃণমূল কিসান খেত মজদুর কংগ্রেসের জেলা জমিটিতে আগেই সঞ্জয়কে পদ পাইয়ে দিয়েছেন ওই সংগঠনের সভাপতি দুলাল। পুলিশ মহলেও সঞ্জয়ের যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থাকায় সঞ্জয় বহু আদিবাসী পরিবারকে প্রতিদিন কোনও না কোনও পরিষেবা দিয়ে থাকেন। এ দিন জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “সঞ্জয় নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ডুয়ার্স-তরাইয়ের আদিবাসীদের পরিষেবা দেন। রাজেশ লাকড়া তো আদিবাসী আন্দোলনের অন্যতম মুখ।”
এ দিনের যোগদানের অনুষ্ঠানে জলপাইগুড়িতে ছিলেন জেলায় সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া ওমপ্রকাশ মিশ্র। দুই নেতাকেই আগামী বিধানসভায় প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল, এমন জল্পনা চলছে।
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর মন্তব্য, “যে দু’জনের কথা বলা হচ্ছে তাঁরা তো এতদিনও তৃণমূলের সঙ্গেই ছিলেন। এখন নতুন করে হাতে পতাকা দিয়ে কমির ছানার গল্পের মতো সংখ্যা গোনানো হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy