হাতির পর এ বার চিতাবাঘ।
চা বাগান, জঙ্গল লাগোয়া রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার হল এক পুরুষ চিতাবাঘের দেহ। শুক্রবার সকালে বন দফতরের কার্শিয়াং ডিভিশনের বামনপোখরি রেঞ্জের মাটিগাড়া-কার্শিয়াং রোডের গাড়িধুরা এলাকার ঘটনা। মাঝবয়সী চিতাবাঘটির শরীরের বাইরে কোনও আঘাতের চিহ্ন না থাকায় ধন্দে পড়েছেন বন কর্তারা।
দুপুরে বামনপোখরির জঙ্গলে নিয়ে চিতাবাঘাটির ময়নাতদন্তের পরে বনকর্তারা জানান, মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তবে তা কোনও গাড়ির ধাক্কা হয়েছে, না কি কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করায় মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। কারণ খুঁজতে চিতাবাঘটির দেহাংশ কলকাতায় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।
কার্শিয়াং ডিভিশনের ডিএফও সন্দীপ ব্রেওয়াল বলেন, ‘‘এলাকাটিতে চিতাবাঘের গতিবিধি রয়েছে। তবে উৎপাতের সাম্প্রতিক তেমন খবর ছিল না। আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছি। দেহাংশ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, গাড়িধুরার আগে শিমুলবাড়ি চা বাগান, ফুলবাড়িপতন চা বাগান রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিরাট এলাকা জুড়ে সেনা বাহিনীর ছাউনি এবং গ্রাম। কয়েক দিন আগে ওই এলাকার কিছুটা দূরে মেথিবাড়ির দিকে চিতাবাঘের গতিবিধির খবর মিলেছিল। এ দিন উদ্ধার হওয়া চিতাবাঘটির উচ্চতা দু’ফুটের মতো। লম্বায় প্রায় ৪ ফুট। বয়স আনুমানিক চার বছর।
অফিসারেরা জানান, উত্তরবঙ্গের চিতাবাঘের উপদ্রবের জেরে পিটিয়ে মারা বা বিষপ্রয়োগ করে মারার ঘটনা নতুন নয়। ডুয়ার্সে তো বটেই তরাই-ত্রিহানা চা বাগান এলাকায় কয়েক বছর আগে এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, মারার পর গোঁফ ছিঁড়ে নেওয়া, লেজ উপড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এ দিনের ঘটনাটি পুরোপুরি সেনা ছাউনি দিয়ে ঘেরা এলাকায় হওয়ায় সম্ভবত তাও করা হয়নি। তা ছাড়া চিতাবাঘের যা গতি থাকে, তাতে গাড়ির ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে গভীর রাতে চোখে গাড়ি়র আলো পড়লে সেটি বিভ্রান্ত হতে পারে।
তরঞ্জাবাড়ি, ফুলবাড়িপতন, শিমুলবাড়ির বাসিন্দারা অনীক থাপা, বিজয় লোহার বা মহেশ বিশ্বকর্মারা জানান, চা বাগানের সামনে ঝোপ জঙ্গল রয়েছে। তার পাশে রাস্তা। সেনা বাহিনীর আবাসন থাকলেও সে দিকে গেট না থাকায় লোকজনের যাতায়াত কম। তাই কখন সেটি পড়ে ছিল তা সকাল ৯-১০ টা অবধি কারও চোখেই পড়েনি। পরে কয়েক জন চালক, বাসিন্দা দেখে হইচই শুরু করতেই বামনপোখরি, বাগডোগরা রেঞ্জ থেকে অফিসারেরা আসেন।
দুপুরে ময়নাতদন্তের পর জঙ্গলের গভীরে কাঠের চিতা বানিয়ে দেহটি পুড়িয়ে দেন বনকর্মীরা।