সুনীল বিকাশ পাল। নিজস্ব চিত্র
বয়স ৮৩ বছর। পাড়ার ছোট থেকে বড় সকলেই তাঁরা চেনে ‘তারা কাকু’ বলে। আকাশের তারা চেনানো থেকে শুরু করে যে কোনও গ্রহণ। কিংবা মহাজাতিক বিষয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর পেতে তাঁর কাছেই দ্বারস্থ হয় পাড়ার খুদেরা, বাদ যায় না বড়রাও। ‘তারা কাকু’র আসল নাম সুনীল বিকাশ পাল। জলপাইগুড়ি শহরের রায়কত পাড়ার বাসিন্দা সুনীলবাবু অবসরপ্রাপ্ত অধীক্ষক বাস্তুকার। গোড়া থেকেই আকাশ দেখা তাঁর নেশা। অবসরের পরে সেই নেশাটাই ছড়িয়েছে দিচ্ছেন কচিকাঁচা থেকে বড় সবার মধ্যেই।
এতদিন যে কোনও গ্রহণ হলেই বাড়ির ছাদে গ্রহণ দেখার ব্যবস্থা করতেন সুনীলবাবু। পরিচিতরা, পাড়ার অনেকেই তাঁর বাড়িতে আসত গ্রহণ দেখতে। কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা অনেকটাই আলাদা। করোনা সংক্রমণের জেরে ভিড় করা একেবারেই বারণ। সবক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ রয়েছে। তার উপর পাড়ার এক বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। সকলের নিরাপত্তার স্বার্থেই সুনীলবাবু চাননি, রবিবার তাঁর বাড়িতে ভিড় জমান কেউ। তবুও এ দিন বলয় গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে অনেকেই চলে আসেন ‘তারা কাকু’র বাড়িতে। এতদিনের অভ্যেস থাকায় কাউকে ফেরাতে পারেননি সুনীলবাবু। কড়া ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গ্রহণ দেখিয়েছেন সবাইকে। আর গোটা সময়টা সহকারি হিসেবে তাঁর পাশে থেকেছেন স্ত্রী ভারতী পাল। পাড়ার এক বাসিন্দা আশুতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘কাকুর জন্যই গ্রহণ সম্পর্কে আমাদের কুসংস্কার দূর হয়েছে। ওঁর বাড়ির ছাদে গ্রহণ দেখাটা আমাদের কাছে এখন নেশা।’’ এ দিন গ্রহণ দেখতে এসেছিল বেশকিছু পড়ুয়া। ষষ্ঠ শ্রেণির দীপান্বিতা দত্ত, দশম শ্রেণির অনীশ দত্ত, দ্বাদশ শ্রেণির শ্রেয়া মণ্ডলেরা সুনীলবাবুর অত্যাধুনিক টেলিস্কোপে চোখ রেখে সূর্যগ্রহণ দেখতে ব্যস্ত ছিল। আর অসংখ্য প্রশ্ন করছিল ‘তারা কাকু’কে। সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি, বলছিলেন, ‘‘আজকের দিনটা সব চাইতে বড় দিন। সোমবার থেকে শুরু হবে দক্ষিণায়ন।’’
সুনীলবাবু জানান, ছোটবেলা থেকেই আকাশের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল। চাকরি জীবনে কাজের ফাঁকে থিওডোলাইট নিয়ে আকাশ দেখার নেশা ছিল। তারামণ্ডল, গ্রহ-নক্ষত্র দেখতেন তিনি। মহাকাশের জাগতিক বিষয় নিয়ে একটি বইও নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রহণ নিয়ে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আরও বেশি সচেতনতা বাড়াতে প্রচার জরুরি।’’
এ দিন জলপাইগুড়ি শহরের হাকিমপাড়ায় সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের উদ্যোগে স্কাই ওয়াচার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা গ্রহণ দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। সমাজপাড়াতেও এ দিন বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠন লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের উদ্যোগে সূর্যগ্রহণ দেখানো হয়েছে। শহর-শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় এ দিন অনেককেই পুরনো এক্স রে প্লেট নিয়ে সূর্যগ্রহণ দেখতে দেখা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy