Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Higher Secondary Examination 2024

 ধরেছে ‘ভূতে’, শত চেষ্টাতেও দেওয়া হল না পরীক্ষা

এ দিন উচ্চ মাধ্যমিকের অর্থনীতি পরীক্ষা ছিল। সূত্রের খবর, ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিতে আসছেন না দেখে, আলিপুরদুয়ার জংশন শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁর স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

examination

—প্রতীকী ছবি।

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২০
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে ‘ভূতে ধরেছে’, পরিবারের এমন অবাস্তব দাবির জেরে মঙ্গলবার কার্যত হুলুস্থুল হল আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন আলিপুরদুয়ার জংশন শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যামন্দিরে। ওই পরীক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে, না ওঝার কাছে— তা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষার্থীর বাড়ির লোকেদের মধ্যে রীতিমতো টানাপড়েন চলে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্সে করে পরীক্ষার্থীকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেখানেও পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি। হাসপাতাল থেকে বন্ডে ছাড়িয়ে তাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় এক ওঝার কাছেই!

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আলিপুরদুয়ার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইসরি বোর্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক ভাস্কর মজুমদার বলেন, “ছাত্রীটিকে পরীক্ষায় বসানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সকলের চেষ্টাতেও শেষ পর্যন্ত তা করা গেল না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।” আলিপুরদুয়ারের বিদ্যালয় পরিদর্শক আসানুল করিম বলেন, “গোটা ঘটনাটাই অনভিপ্রেত। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও অনেক চেষ্টা করে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসানো যায়নি। পরে, হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছুটি করিয়ে গুনিন বা ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। যেটা আরও আমাকে অবাক করেছে।”

এ দিন উচ্চ মাধ্যমিকের অর্থনীতি পরীক্ষা ছিল। সূত্রের খবর, ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিতে আসছেন না দেখে, আলিপুরদুয়ার জংশন শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যামন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁর স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খোকারাম রায় বলেন, “তখন ঘড়িতে প্রায় সওয়া ১০টা বাজে। স্কুলের গেটের সামনে এসেই ওই পরীক্ষার্থী কেমন যেন একটা আচরণ শুরু করে দেয়। সে অসুস্থ রয়েছে বুঝে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করি। অ্যাম্বুল্যান্সও ডাকা হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা তার মা ও শাশুড়ি দাবি করতে থাকেন, তাকে ‘ভূতে’ ধরেছে। তাই তাঁরা তাকে ওঝার কাছে নিয়ে যাবেন। তবে অনেক চেষ্টা করে তাকে শেষ পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি নিজেও ওর জন্য প্রশ্নপত্র নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু শত চেষ্টাতেও ওকে পরীক্ষা
দেওয়াতে পারিনি।”

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার পরিতোষ মণ্ডল বলেন, “পরীক্ষা ঘিরে চিন্তার কারণেই হয়তো এমন অসুস্থতা হয়েছে ওই পরীক্ষার্থীর। জেলা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু একটা সময়ের পরে পরীক্ষার্থীর বাড়ির লোকেরা বন্ডে সই করে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি করে নিয়ে যান।”

পরীক্ষার্থীর স্বামীর দাবি, “কিছু দিন আগে আমার বোনকে ভূতে ধরেছিল। এখন সেই ভূতটা আমার স্ত্রীর মধ্যে গিয়েছে। সে জন্যই হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে ওকে ওঝার কাছে নিয়ে যাই। ওঝার ঝাড়াঝাড়ির পরে, আমার স্ত্রী ভালই রয়েছে। এখন বাড়িতেই রয়েছে।”

আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করার চেষ্টা চলছে।” আলিপুরদুয়ার বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক শান্তনু দত্ত বলেন, “এ ধরনের ঘটনা রুখতে আমাদের আরও প্রচার বাড়াতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alipurduar West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE