নোট বাতিল ঘোষণার পরে ব্যাঙ্ক খুলতেই প্রথম তিন দিনে উত্তরবঙ্গে জমা পড়া প্রায় ২১১ কোটি টাকার উৎস নিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে আয়কর দফতর ও কয়েকটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
গত ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী পুরনো পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেন। তার পরে ব্যাঙ্ক খোলার প্রথম তিনদিনের মধ্যে বহু কোটি টাকা জমা পড়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২১১ কোটি টাকার হিসেব সন্দেহজনক ঠেকেছে আর্থিক শাখার গোয়েন্দাদের কাছে। আপাতত ওই অ্যাকাউন্টগুলির কয়েকটিতে লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে। বাকি অ্যাকাউন্টগুলির ওপর নজরদারি চলছে। চলছে তল্লাশিও। গত শুক্রবার প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে ব্যবসায়ী রূপচাঁদ প্রসাদের বিভিন্ন সংস্থা, ভাইদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দফতর। কলকাতা থেকে বিশেষ দল শিলিগুড়িতে এসেছিল অভিযান চালাতে। শিলিগুড়ির আয়কর আধিকারিকরাও ছিলেন। নেহেরু রোডে সংস্থার অফিস থেকে গভীর রাতে ট্রাঙ্কে ভরে নগদ টাকা, নথি আয়কর দফতরের গাড়িতে তোলা হয়। দফতরের তরফে জানানো হয়, নগদ টাকা থেকে বিনিয়োগ নথি সবই বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
কালো টাকা সাদা করার চেষ্টার অভিযোগেই আয়কর দফতর গত শুক্রবার একসঙ্গে শিলিগুড়ি এবং জয়গাঁর অন্তত ৫ জায়গায় হানা দেয়। একই অভিযোগে নজরদারি চলছে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। উত্তরবঙ্গের একটি ব্যবসায়ী সংস্থা তাদের কলকাতা এবং দিল্লির নয়ডায় ব্যাঙ্কের শাখায় অন্তত ৩৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। ওই সংস্থার পদাধিকারি ও কর্মীদের বেশ কয়েক জনের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়েছে। রাতারাতি কলকাতা এবং দিল্লিতে ওই সংস্থার কয়েকজন কর্মীর নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা জমা করানো হয়। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ওই কর্মীদের কলকাতা এবং দিল্লিতে বদলি করানো হয়েছে। যদিও, অতীতে ওই সংস্থার রেকর্ডে কর্মীপদে বদলির কোনও রেকর্ড নেই। হঠাৎ কী প্রয়োজনে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে একসঙ্গে এতগুলি বদলি হল তা জানাতে পারেনি সংস্থাটি।
শিলিগুড়ির এক নামী ব্যবসায়ী সহ পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্টে নোট বাতিলের ঘোষণার পরেই সাড়ে পনেরো কোটি টাকা জমা পড়ে। কেন্দ্রীয় একটি সংস্থার পাঠানো নোটিসে ব্যবসায়ী দাবি করেন সিকিম এবং ভূটানের তাঁর ব্যবসা থেকে আয় হয়েছে। আপাতত কলকাতায় ডেকে জেরা চলছে ওই ব্যক্তিকে। উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামের অ্যাকাউন্টেও উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীর টাকার খোঁজ মিলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় প্রায় ৬ কোটি টাকা জমা পড়ে। যে ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা হয়েছিল তাকে জেরা করে উঠে আসে উত্তরবঙ্গের ওই ব্যবসায়ীর নাম।
শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায় আয়কর দফতর থেকে শিলিগুড়ি এবং সিকিমের ৪২ জন ব্যবসায়ীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। শিলিগুড়ির পরিবহণ নগরেও আয়কর দফতরের আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। শনিবার ছুটির দিনেও অফিসের ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। লাল শালুতে মোড়া রাশি রাশি নথি দফতরের বিভিন্ন ঘরে স্তূপাকৃতি ছিল। বিভিন্ন অভিযানে বাজেয়াপ্ত করা অথবা জমা দেওয়া সেই সব নথি খতিয়ে দেখে টাকার উৎসের নাগাল পেতে চাইছে দফতর। তবে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কোনও কর্তা। ডেপুটি কমিশনার রানি লামা জানিয়েছেন, তাঁদের পক্ষে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy