Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
চা শ্রমিকদের টাকা তছরুপ

টাকা ফেরাতে উদ্যোগী নয় কর্তৃপক্ষ, ক্ষোভ

ডুয়ার্সের রায়ডাক চা বাগানের শ্রমিকদের তছরুপ হয়ে যাওয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বানিয়ে অথবা শ্রমিকদের মৃত দেখিয়ে তাঁদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের কোটি কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেলেও সে টাকা তাঁরা ফেরত পাবেন কী ভাবে সেটাই বড় প্রশ্ন।

রাজু সাহা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০২:০৫
Share: Save:

ডুয়ার্সের রায়ডাক চা বাগানের শ্রমিকদের তছরুপ হয়ে যাওয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বানিয়ে অথবা শ্রমিকদের মৃত দেখিয়ে তাঁদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের কোটি কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেলেও সে টাকা তাঁরা ফেরত পাবেন কী ভাবে সেটাই বড় প্রশ্ন। বাগান কর্তৃপক্ষ পিএফ ক্লার্কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়ে তাঁর বন্ধ বাড়ির দরজায় নোটিস টাঙিয়েছেন। কিন্তু, শ্রমিকেরা টাকা কী ভাবে ফেরত পাবেন এই নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী না হওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। টাকা ফেরতের দাবিতে ডান বাম সমস্ত শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি তুলে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, তছরুপ হয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশের মদতে। তাই টাকা ফেরতের দায় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। শুধু পিএফ ক্লার্ক নয়, ওই চা বাগানের ম্যানেজারের মদত ছাড়া পিএফের টাকা কোনও ভাবে তোলা সম্ভব নয় বলে দাবি তাঁদের। তাই যে সময় এই ঘটনাগুলি ঘটেছে তখন যে ম্যানেজার ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে তদন্তের দাবিও তোলা হয়েছে। রায়ডাক চা বাগানের মালিক পক্ষের এক প্রতিনিধির কথায়, ‘‘এই অনিয়মের তদন্তও শুরু হয়েছে। বেশ কয়েক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। যাঁরা টাকা তছরূপ করেছেন তাঁদের থেকে টাকা উদ্ধার করতে হবে। বাগান কর্তৃপক্ষ এর দায় নিতে যাবেন কেন? তবে আমরা চাই শ্রমিকেরা তাঁদের টাকা ফেরত পাক।’’

পিএফ অফিসের এক আধিকারিক জানান, পিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে অগ্রিম নেওয়া হোক বা ফাইনাল সেটলমেন্ট, দু’টি ক্ষেত্রেই পিএফ অফিসে আবেদন পাঠাতে হয়। ওই আবেদনপত্রে চা শ্রমিক এবং সংশ্লিষ্ট বাগানের ম্যানেজারের সিলমোহর ও সাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক। ব্যাঙ্কে যে ভাবে গ্রাহকের সাক্ষর মেলানো হয়। এ ক্ষেত্রে একই পদ্ধতিতে ম্যানেজারের সাক্ষর মিলিয়ে নেওয়া হয়। এর পরেই আবেদনপত্রে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয় সেই অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এ বার বাগান কর্তৃপক্ষ যদি ভুয়ো আবেদনপত্র বানিয়ে ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠায়, তার দায় কেন পিএফ অফিস নেবে?’’

তবে টাকা তছরুপ চক্রের সঙ্গে পিএফ অফিসের কর্মীদের একাংশের গোপন বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই দিনের পর দিন এমন ঘটেছে বলে বিভিন্ন মহলে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠেছে। রায়ডাক চা বাগানের মালিক পক্ষের ওই প্রতিনিধির দাবি, এই তছরুপ কাণ্ডে যে ভাবে ম্যানেজারদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। কারণ ম্যানেজারেরা অল্প সময়ের জন্য আসেন। কিন্তু বছরের পর কাজ করেন পিএফ ক্লার্ক-সহ অন্য কর্মীরা। ম্যানেজার তাঁদের উপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখেন। ওই কর্মীরা বাইরের দালালদের সঙ্গে জোট বেঁধে যদি ভুয়ো কাগজ বানিয়ে ম্যানেজারের কাছে নিয়ে যান। ম্যানেজার তাতে সাক্ষর করে দেন ওই কর্মীদের উপর ভরসা করেই।

আবার ওই চা বাগানের এক কর্মীর কথায়, ‘‘অন্য চা বাগানে সারা বছরে অবসর নেওয়া ছাড়া এক বা দু’জন পিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার আবেদন করেন। এই বাগানে পিএফের টাকা তোলার জন্য বছরে দুশো-তিনশো করে আবেদন জমা পড়েছে। ম্যানেজার সেটা বোঝেননি বললে ভুল বলা হবে।’’ তাঁর দাবি, ম্যানেজারের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এই প্রক্রিয়া চলতে পারে না। রায়ডাক চা বাগানের বাসিন্দা জীবন খালকোর অভিযোগ, ‘‘বাগানের ম্যানেজার, পিএফ ক্লার্ক, পিএফ অফিস ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশ ও স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে এই তছরুপ চক্র চলেছে। তাই টাকা ফেরতের দায় বাগান কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। এই ঘটনার সঠিক তদন্তের পাশাপাশি মালিক পক্ষকে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে।’’

ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সম্পাদক দীপক দাসের অভিযোগ, শ্রমিকদের অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে যে ভাবে তাঁদের রক্ত জল করা উপার্জনের টাকা তছরুপ হয়েছে তার জন্য ওই বাগানের ম্যানেজার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাই ওই তছরুপের সময় যে ম্যানেজার দায়িত্বে ছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে তদন্ত শুরু করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এমনকী, টাকা ফেরতের দায় বাগান কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বলে দীপকবাবুরা সরব হয়েছেন।

সিটুর তরফে বিদ্যুৎ গুণ জানান, শ্রমিকদের দ্রুত টাকা ফেরতের ব্যবস্থা বাগান কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। তাঁর সন্দেহ, ‘‘বাগানের পিএফ ক্লার্ক ও কর্মীদের মদতে এই প্রক্রিয়া চলেছে।’’ একই দাবি তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম নেতা তথা আলিপুরদুয়ারের সাংসদ দশরথ তিরকের। তিনি বলেন, ‘‘দরিদ্র শ্রমিকদের তছরুপ হয়ে যাওয়া টাকা ফেরতের ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট চা বাগান কর্তৃপক্ষকে করতে হবে।’’

রায়ডাক বাগানের ম্যানেজার উত্তম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘টাকা ফেরতের দাবি শ্রমিকেরা করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে শ্রমিকেরা সরব হতেই পারেন। তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা এ ভাবে তছরুপের ঘটনা মানা যায় না। তবে যাঁরা জড়িত তাঁদের শাস্তি হোক সেটা চাই। টাকা ফেরত পাক সেটাও চাইব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE