Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সালিশি সভায় অপমানের জেরে মৃত্যু, অভিযোগ

পুত্রবধূর সঙ্গে অশালীন ব্যবহারের অভিযোগে সালিশি সভায় কান ধরে ওঠাবসা করিয়ে জুতোর মালা গলায় দিয়ে গ্রাম ঘোরানো হয়েছিল এক ব্যক্তিকে। অসুস্থ হয়ে সেই রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার রাজাডাঙা পঞ্চায়েতের চেলের পাড় গ্রামে এই ঘটনা ঘটার পর মৃতের স্ত্রী রবিবার সন্ধ্যায় মালবাজারের ক্রান্তি ফাঁড়িতে অভিযোগ খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। মৃত ব্যক্তির নাম হামিদুল হক (৪৫)। শনিবার বিকেলে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর ওই দিনই তাঁর দেহ কবর দিয়ে দেওয়া হয়।

মৃতের শোকার্ত স্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।

মৃতের শোকার্ত স্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০২:১৯
Share: Save:

পুত্রবধূর সঙ্গে অশালীন ব্যবহারের অভিযোগে সালিশি সভায় কান ধরে ওঠাবসা করিয়ে জুতোর মালা গলায় দিয়ে গ্রাম ঘোরানো হয়েছিল এক ব্যক্তিকে। অসুস্থ হয়ে সেই রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

শনিবার রাজাডাঙা পঞ্চায়েতের চেলের পাড় গ্রামে এই ঘটনা ঘটার পর মৃতের স্ত্রী রবিবার সন্ধ্যায় মালবাজারের ক্রান্তি ফাঁড়িতে অভিযোগ খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। মৃত ব্যক্তির নাম হামিদুল হক (৪৫)। শনিবার বিকেলে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর ওই দিনই তাঁর দেহ কবর দিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার দুপুরে ক্রান্তি ফাঁড়ির পুলিশ কবর খুঁড়ে দেহ বের করে ময়নাতদন্তের জন্যে জলপাইগুড়িতে পাঠায়। তদন্তে নেমে রবিবার গভীর রাতে পুলিশ রবিউল আলম নামের এক জনকে গ্রেফতার করেছে।

পেশায় কৃষক হামিদুল হকের বড় ছেলে আনসারুল ইসলামের সঙ্গে তিন মাস আগে বিয়ে হয় ওই পাড়ারই এক তরুণীর। এর পর থেকেই ওই তরুণী তাঁর শ্বশুর হামিদুলের বিরুদ্ধে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ তোলেন। একই পাড়ারই বাসিন্দা ওই তরুণীর বাবা সায়েদ আলি আচমকা হামিদুল হককে না জানিয়ে পাড়াতেই সালিশি সভা ডাকেন। প্রতিবেশী আছিরুদ্দিন আহমেদের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপরেই সভাটি বসে। শনিবার সকাল দশটায় আচমকাই সায়েদ আলির নেতৃত্বে তাঁর প্রতিবেশীরা হামিদুল হক এবং তার পরিবারের সদস্যদের সেই সালিশি সভায় জোর করে নিয়ে আসেন বলেও অভিযোগ। টানা তিন ঘণ্টা ধরে বাদানুবাদ চলার পর সালিশি সভায় হামিদুল হককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

অভিযোগ, এর পরেই সায়েদ আলি মহম্মদ, তার ভাইপো রবিউল আলম, আছিরুদ্দিন আহমেদ-সহ আট জন বাড়ির মহিলাদের জুতো জোগাড় করে তা দিয়ে মালা গেঁথে হামিদুল হকের গলায় পরিয়ে দিয়ে তাকে গ্রামে ঘোরান। সালিশিতে উপস্থিত হামিদুল হকের ভাই মতিউর রহমানের কথায়, ‘‘সালিশিতে দাদা নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ মেনে নেয়নি। দিনের বেলায় জুতোর মালা পরে ঘুরতেও রাজি হয়নি। তাই প্রথমে বেশ কয়েক বার তাকে কানধরে ওঠবোস করানো হয়। এর পর বেলা দুটোর সময় জুতোর মালা পরিয়ে তাঁকে গ্রামে ঘোরানো হয়। হামিদুলকে নিজের বাড়ি ছেড়ে যেতেও বলা হয়।’’ অভিযোগ, সায়েদ আলি এবং তাঁর আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা হামিদুল হক এবং তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

ওই পাড়াতেই থাকেন হামিদুলের বাবা সহিরুদ্দিন মহম্মদ। তাঁর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছানোর পরেই বুকে ব্যাথা অনুভব করেন হামিদুল। অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান তিনি। দ্রুত আত্মীয় এবং পড়শিরা তাকে গাড়ি ভাড়া করে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তির আধ ঘণ্টা পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

গোটা ঘটনা জানাজানি হতেই রাজাডাঙা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনাস্থলে যান রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যা অমৃতা কামি এবং মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা। সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা তথা মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নাসমুন্নেহা বেগম বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। দ্রুত দোষীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি করছি।’’ একই বক্তব্য এলাকার বাসিন্দা রেওয়াজ চৌধুরি এবং সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যা আবেদ আলির। তিনি বলেন, ‘‘সালিশি ডেকে এই ধরনের অত্যাচার চালানো কাম্য নয়। দ্রুত দোষীদের শাস্তি হোক এটাই চাইছি।’’

সোমবার স্বামীর মৃতদেহ কবর থেকে তোলার সময়ে বারবার দোষীদের শাস্তি দাবি করতে থাকেন মৃতের স্ত্রী আনজুমা বেওয়া। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে জুতোর মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানো হয়েছে। এটা মানতে না পেরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর জন্যে সম্পূর্ণ ভাবেই পুত্রবধূর পরিবার দায়ী।’’ তবে পুত্রবধূর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেননি তিনি।

এ দিকে পুত্রবধূর জেঠতুতো দাদা রবিউল আলম গ্রেফতার হতেই গা ঢাকা দেয় অন্য অভিযুক্তেরাও। অভিযোগ দায়ের না হলেও এলাকা ছেড়েছেন মৃতের বড় ছেলে আনসারুল ইসলাম আর তাঁর স্ত্রী। মালবাজারের এসডিপিও নিমা নরবু ভুটিয়া বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্যদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE