প্রতীকী ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন উত্তরবঙ্গে ব্যবসায়ীদের লগ্নির জন্য আহ্বান করছেন, ঠিক সেই সময় শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার এসজেডিএর ফুডপার্কে তৃণমূল সমর্থিত দু’টি সংগঠনের নামে সিন্ডিকেট রাজ চালানোর অভিযোগ তুলল ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন। শুক্রবার নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে, ফাঁসিদেওয়ার ওই এলাকায় কারখানা, শিল্প করতে গেলে তৃণমূল সমর্থিত দু’টি সংগঠনকে টাকা দিতে হচ্ছে। আরও অভিযোগ, জোর করে বেশি দামে নির্মাণ সামগ্রী নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। সংগঠন দু’টির প্রধানের দাবি, সব মিটে গিয়েছে।
ফুডপার্ক গড়ার সময় জমি দিয়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়া কিছু স্থানীয় মানুষ দু’টি আলাদা সংগঠন গড়েছেন, রাহামু মহম্মদ বক্স ফুডপার্ক মেটেরিয়াল সাপ্লায়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং রাহামু নারদেব ভিলেজ আনএমপ্লয়িজ সেল্ফ হেল্প ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। ফুডপার্কে ফলের রস, দুধের প্যাকেট তৈরির কারখানা হওয়ার কথা। অভিযোগ, সেগুলির কর্তাদের সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে গোলমাল শুরু হয়েছে সংগঠন দু’টির। ওই ইউনিটের কর্ণধার কমল মুন্দ্রার অভিযোগ, ‘‘জোর করে সামগ্রী সরবরাহের জন্য চাপ, হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাতে প্রকল্পের খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা বেড়ে যাচ্ছে। তাই বণিক সংগঠনের কাছেই সাহায্য চেয়েছি।’’
বণিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলার পর আমাদের সংগঠনের সদস্যরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শিল্পতালুকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লগ্নি শুরু করেছেন। যাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, তিনি ২৫ কোটি টাকা লগ্নি করছেন। আমরা সংগঠনের তরফ থেকে জেলাশাসক, এসজেডিএ এবং পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ দিন সন্ধ্যায় তা দার্জিলিঙের পুলিশ সুপারকে পাঠিয়েছে এসজেডিএ। কমলবাবুরাও আলাদা করে পুলিশ-প্রশানের কাছে অভিযোগ করবেন।’’
দার্জিলিংয়ের জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘‘গাড়ি আটকানোর খবর পেয়েই পুলিশ গিয়ে তা ছাড়ায়। কাউকে এলাকায় তোলা তুলতে দেওয়া হবে না। বাকি বিষয়গুলি দেখা হচ্ছে।’’
অভিযোগ: টাকা তোলার কুপন (বাঁ দিকে)। এসজেডিএর তরফে পুলিশ সুপারকে চিঠি। নিজস্ব চিত্র
বণিক সংগঠনের অভিযোগ, ফুডপার্কের ভিতরে ট্রাক ঢুকলেই প্রতিটি ট্রাক থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রীর জন্য অন্যত্র কম দরে মালপত্র পাওয়া গেলেও তা নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। কর্মীদের মারধর, জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি চলছে বলেও দাবি। তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে চললে তো ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন।
অভিযোগের তির যাদের দিকে, সেই দু’টি সংগঠনের নেতা রতন অধিকারীর দাবি, ‘‘বিষয়টি ঠিক নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এলাকায় সামাজিক কাজ করি। কারও থেকে জোর করে টাকা তোলা হয়নি। ট্রাক চালকেরা, এলাকার কর্মীরা নানা পরিষেবার বিনিময়ে টাকা দেন। সেই টাকায় রক্তদান শিবির, মানুষকে পোশাক, স্কুলব্যাগ বিলি করা হয়। বালি পাথরের গাড়ি নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছে। পরে পুলিশ এলে তো সব মিটে গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সংগঠনের বেশিরভাগ মানুষই তৃণমূল করেন। ফাঁসিদেওয়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি আইনুল হক আমাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।’’
ব্যবসায়ী সংগঠনটির দাবি, মহকুমা পরিষদ সদস্য তথা ব্লক সভাপতি আইনুল হককে বিষয়টি জানানো হলে তিনি সমঝোতা করে নেওয়ার কথা বলেন। তবে আইনুল হকের দাবি, ‘‘আমি সংস্থা দু’টির সঙ্গে যুক্ত নই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনও সমঝোতার কথা বলিনি। যে কম দরে জিনিসপত্র দেবে, তাকেই নিয়োগ করা উচিত। জোরজুলুম চলবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy