Advertisement
১১ মে ২০২৪

কোচবিহারের সন্ত্রাসের অভিযোগ

রাত নামলেই দাপট বাড়ে বাইক বাহিনীর। কখনও শাসক দলের নামে স্লোগান দিয়ে চলে যায় তারা । কখনও আবার বিরোধীদের ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে চলে হুমকি। কেউ প্রতিবাদ করলে দুই-চার ঘা পড়েও যায় পিঠে। পুলিশে অভিযোগ জানালে ফের হামলার মুখে পরতে হতে পারে, তাই ভয়ে সিটিয়ে থাকেন সবাই। কোচবিহারের চার পুরসভাতেই শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমনই সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

রাত নামলেই দাপট বাড়ে বাইক বাহিনীর। কখনও শাসক দলের নামে স্লোগান দিয়ে চলে যায় তারা । কখনও আবার বিরোধীদের ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে চলে হুমকি। কেউ প্রতিবাদ করলে দুই-চার ঘা পড়েও যায় পিঠে। পুলিশে অভিযোগ জানালে ফের হামলার মুখে পরতে হতে পারে, তাই ভয়ে সিটিয়ে থাকেন সবাই। কোচবিহারের চার পুরসভাতেই শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমনই সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।

বামেদের অভিযোগ, রাত ১০ টা বাজলেই দিনহাটায় বিভিন্ন এলাকার দখল নিয়ে নেয় বহিরাগতরা। দাপিয়ে বেড়ায় বাইক বাহিনী। সম্প্রতি ওই পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লকের একটি কার্যালয় রাতের অন্ধকারে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় শাসক দলের দুষ্কৃতীরা জড়িত বলেই দাবি ফরওয়ার্ড ব্লকের। বিষয়টি নিয়ে দিনহাটা থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা। একই অবস্থা কোচবিহারেও। তোর্ষা নদীর বাঁধের ধার ধরে আটটি ওয়ার্ড। সন্ধে নামলেই ওই ওয়ার্ডগুলিতে বাইক বাহিনীর তান্ডব ও হুমকি চলছে বলে অভিযোগ। শাসক দল অবশ্য বিরোধীদের ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, মনগড়া কথা তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বিরোধীরা। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “পুলিশ সর্বত্র টহলদারি করছে। নির্দিষ্ট করে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বামফ্রন্টের নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ অভিযোগ করেন, শাসক দলের ভয়ে মানুষ সন্ত্রস্ত। অনেকেই পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানানোর সাহসও করে উঠতে পারছেন না।

তিনি বলেন, “আমরা বার বার অভিযোগ করছি, বহিরাগতরা এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। রাত ১০ টার পরে নির্বাচন বিধি ভেঙে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাইক বাহিনী। কিন্তু কোনও ব্যাপারেই পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” তাঁর দাবি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বামেদের প্রার্থী হয়েছেন দিনহাটা পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান চন্দন ঘোষ। ওই ওয়ার্ডে একটি বাড়ির ঘর ভাড়া নিয়ে তাঁরা নির্বাচনী কার্যালয় খুলেছিলেন। ওই কার্যালয়টি গভীর রাতে ভেঙে দেওয়া হয়। বাড়ির মালিককেও ভয় দেখানো হচ্ছে।

তাদের আরও অভিযোগ, দিনহাটা পুরসভায় ৮ টি ওয়ার্ড গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে ঘেরা। ওই ওয়ার্ডগুলি বহিরাগতদের দখলে চলে গিয়েছে। দিনে এবং রাতে সেখানে পিকনিক করার নামে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।

শুধু দিনহাটা নয়, কোচবিহার, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙাতেও একই কায়দায় সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কোচবিহারে বাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলি বাদেও শহরের ৪, ১০, ১১, ১৫, ১৬ সহ বেশ কিছু ওয়ার্ডে রাতে শাসক দলের বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “রাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমাদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। কেটে দেওয়া হচ্ছে। সকালে আমরা তা জানতে পারছি। এর থেকেই বোঝা যায় রাতে কি চলছে। পুলিশ এবং কমিশনকে সব জানিয়েছি। এখনই এসব না রুখলে ভোটের দিন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে।”

বিজেপি সহ তিন দলের পক্ষ থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে, রাতে মদের আসর বসে বিভিন্ন এলাকায়। ওই আসর শেষেই কিছু যুবক এলাকায় টহল দিয়ে শাসক দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার বার্তা দিচ্ছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “ভয় দেখিয়ে জেতার চেষ্টা করছে শাসক দল। এজন্য বাহিনী তৈরি করেছে তাঁরা। সাধারণ মানুষ ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না। তবে এর ফল ভোট বাক্সে হবে।’’

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। কিছু গল্প বানিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। কোথাও বহিরাগত নেই। পুরসভার মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরাই প্রার্থীদের সঙ্গে ঘুরছেন। আসলে বিরোধীরা হারবে বুঝতে পেরে এমন কথা বলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE