ক্ষোভ: এনজেপি থানায় শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র
বন্ধ হয়ে গেল উত্তরকন্যা লাগোয়া একটি গ্যাস সিলিন্ডার তৈরির কারখানা। এর ফলে তিনশোরও বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারও কারখানায় স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছিল বলে দাবি শ্রমিকদের। তাঁদের অভিযোগ, শুক্রবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে তাঁরা দেখতে পান কারখানার গেটে কাজ স্থগিতের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) বিজ্ঞপ্তি সাঁটা রয়েছে। তাতে নতুন বরাত না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করার কথা লেখা রয়েছে। উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও কারখানা ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এ দিন কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দেখেই ক্ষোভ ছড়ায় শ্রমিকদের মধ্যে। গেটের সামনেই দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরে নিউ জলপাইগুড়ি থানায় গিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা করেন কারখানার তৃণমূল পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, কাজ ও মজুরি চুক্তি নিয়ে কারখানার মালিকদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছিল। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের উপর চাপ বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ। যদিও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কারখানার জেনারেল ম্যানেজার পিভিএস রাও। কারখানার ম্যানেজার দেবব্রত পাল বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে মালিকপক্ষের নিষেধ আছে। তাঁদের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কোনও কথা বলা যাবে না।’’
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার চুক্তি ও নানা সমস্যা নিয়ে শুক্রবারই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছিলেন জলপাইগুড়ির সহ শ্রম কমিশনার পার্থ বিশ্বাস। তবে মালিকপক্ষ উপস্থিত না থাকায় এ দিন সেই বৈঠকও হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি। পার্থ বলেন, ‘‘শ্রমিকরা কিছু অভিযোগ জানিয়েছেন। কারখানা খোলা নিয়ে আলোচনা করতে ১৬ অগস্ট ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।’’ কেন কারখানা বন্ধ করা হল তা নিয়েও মালিকপক্ষের তরফে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে কাজ স্থগিতের বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা লিখেছেন, নতুন করে সিলিন্ডার তৈরির বরাত পাচ্ছেন না তাঁরা। আগের বহু সিলিন্ডার এখনও পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই কাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, আগে প্রতিদিন গড়ে ২২০০টি সিলিন্ডার তৈরি হত। বর্তমানে তা কমে দাড়িয়েছে ৫৪০টিতে। ফলে নতুন করে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই সেই বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর পরপর ওই কারখানার শ্রমিকদের কাজ ও মজুরির চুক্তি হয়। ২০১৬ সালের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩১ মার্চ। চুক্তির বিভিন্ন শর্ত নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ায় নতুন করে এখনও চুক্তি হয়নি। কারখানার তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের আহ্বায়ক ইয়ানুল হক মুন্সি বলেন, ‘‘চুক্তির সময় এলেই মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দেয়। আগেও বেশ কয়েকবার এরকম হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে বা সংগঠনের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকেরই খাবার জোটানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। দ্রুত কারখানা না খুললে আমরা বড় আন্দোলন করব।’’ এ দিন সহ শ্রম কমিশনারের কাছেও কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে লিখিত অভিযোগ জমা দেন শ্রমিক নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy